‘জাগো বাহে, কোনঠে সবায়?’
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল যেন সৈয়দ শামসুল হকের ‘নুরুলদীনের সারা জীবন’ কাব্যনাট্যে! ২২ গজে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ সবাই যেন দেবী সিং। নুরুলদীনের কাব্য নাট্যে ব্রিটিশদের শোষন আর লুন্টনের সহযোগী ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রিয়জন দেবী সিংয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। সবাইকে জাগিয়ে তুলে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন নুরুলদীন। ২২ গজে আজ একই অবস্থা বাংলাদেশেরও।
দেবী সিং নামক প্রতিপক্ষের কাছে হারছে তো হারছেই! এর শেষ কোথায়? হারতে হারতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আর পেছনে যাওয়ার উপায় নেই। হয় রুখে দাঁড়াতে হবে, না হলে অস্তিস্ত বিপন্ন বা হুমকির মুখে পড়বে? কে হবেন এখানে নুরুলদীন? কে করবে বিদ্রোহ? নুরুলদীন পেরেছিলেন। সাকিবরা কী পারবেন ‘জাগো বাহে কোনঠে সবায়’।
বাংলাদেশের সামনে আজ দেবী সিং হয়ে আছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশকে অত্যাচার করার জন্য অস্ত্র ধার দিচ্ছেন রশিদ খান, মুজিবুর রহমান, ফজল হক ফারকী, হযরতউল্লাহ জাজাই, মোহাম্মদ নবী, রহমতউল্লাহ গুরবাজরা। কিন্তু বাংলাদেশের অস্ত্রগুলো ভোতা হয়ে গেছে। সেগুলোকে নতুন করে শান দেওয়া হচ্ছে। কামার হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছে শ্রীধরন শ্রীরামকে।
তিনি মোস্তাফিজ, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক, নাসুম, এনামুল, মিরাজদের শানিত করে তুলার জন্য সময় পেয়েছেন মাত্র এক সপ্তাহ। যতটুকু ধারাল হবে তাই দিয়ে আঘাত হানতে হবে। গড় তুলতে হবে প্রতিরোধ। সবাইকে এক সুতোয় গাঁথার জন্য উদ্দীপনা যোগাতে নেতৃুত্বের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে অভিজ্ঞতায় ঝুলিতে ভরপুর থাকা সাকিবের কাঁধে।
টি-টোয়েন্টিতে এমনিতেই বাংলাদেশ খুব ভালো খেলতে পারে না। কিন্তু এই জিম্বাবুয়ের কাছে হারের পর বিষয়টি যেন খুব মোটা দাগে সামনে চলে আসে। এতদিন পায়ের তলার মাটি ছিল,তবে নড়বড়ে। জিম্বাবুয়ের কাছে হারের পর থেকে সেই মাটিও সরে গেছে। শূন্যে ভাসছে বাংলাদেশ। যে কারণে এশিয়া কাপের শেষ দুই আসরের (২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি ও ২০১৮ সালে ওয়ানডে) যেখানে বাংলাদেশ রানার্সআপ, সেখানে এবার তারা সুপার ফোরে খেলারও নিশ্চয়তা দিয়ে যেতে পারেনি।
অধিনায়ক সাকিব সুপার ফোরে খেলা উচিত বলে দেশ ছাড়ার আগে জানিয়ে গেছেন। তাই বাংলাদেশের প্রয়োজন এখন পায়ের নিচে মাটি জোগাড় করা। আফগানিস্তানকে দিয়েই শুরু করতে হবে সেই কাজ।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আফগানিস্তান যে দুর্দান্ত নৈপুন্য দেখিয়েছে, তাতে করে বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণ উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার মতোই হয়ে উঠেছে। আফগানরা যে ঢেউ তুলবে, সেই ঢেউ সাঁতার কাটা কী সম্ভব হবে সাকিব বাহিনীর? দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে আবার এগিয়ে আফগানরাই। ৮ বারের মাঝে তাদের জয় পাঁচটিতে। বাংলাদেশ জয় পেয়েছে তিনটিতেই। কিন্তু এ সব পুরোনো হিসেব বাদ দিয়ে জয় পেতে মরিয়া লাল-সবুজের সৈনিকেরা।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বড় দূর্বলতার নাম রান খরা। গত বছর এই মরুর বুকেই বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি ব্শ্বিকাপের মূল পর্বে গিয়ে জিততে পারেনি কোনো ম্যাচ। শেষ দুই ম্যাচে আবার শতরানের নিচে অলআউট হয়েছিল। এবারের এশিয়া কাপেও দেখা যাচ্ছে রান খরা। যে দুইটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছ তাতে আগে ব্যাট করা দল করেছে যথাক্রমে শ্রীলঙ্কা ১০৫ ও পাকিস্তান ১৪৭।
দুই দলই অলআউট হয়েছে। আবার দুই ম্যাচেই পরে ব্যাট করা দল জয়ী হয়েছে। দুইটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হয়েছিল দুবাইতে। আজকের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে শারজাহতে। যেখান থেকে শুরু হয়েছিল মরুর বুকে ক্রিকেটে পদচারণা। যদিও শারজাহ এখন মরুর বুকে ক্রিকেটের জন্য অপাংক্তেয় হয়ে উঠেছে। খেলা হয় কালে-ভাদ্রে। ২০১৮ সালের ওয়ানডে এশিয়া কাপে কোনো ম্যাচই অনুষ্ঠিত হয়নি শারজাহতে।
বাংলাদেশ দল দুবাই যাওয়ার পর অনুশীলন সেখানেই করেছে। পিচ আর কন্ডিশন বুঝতে সোমবার বিকালের দিকে বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম ও টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন গিয়েছিলেন শারজাহতে। সেটা দেখে তারা কী বুঝতে পেরেছেন তা বুঝা যাবে আজ?
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ খেলা ম্যাচে লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত ও হাসান মাহমুদ ইনজুরি ও ফর্মের কারণে দলেই নেই। তাই বাংলাদেশের সেরা একাদশে আজ অনেক ওলট-পালট হতে পারে। তিনটি পরিবর্তন তাই অবধারিত। চারটিও হতে পারে। সাকিব-মুশফিকের সঙ্গে মোহাম্মদ নাঈম শেখ, সাব্বির রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের যেকোনো দুই জনের খেলার সম্ভাবনা বেশি।
পরিবর্তনের শুরুটা ওপেনিং জুটি দিয়ে। এনামুল হক বিজয় আর মোহাম্মদ নাঈম শেখ, না অন্য কেউ এ নিয়ে বেশ মাথা ঘামাতে হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। আফগান বোলিং আক্রমণের কথা বিবেচনা করে এক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থাকা পারভেজ হোসেন ইমনকে নিয়ে ঝুঁকি নেওয়ার সম্ভাবনা কমই।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনে ব্যাটিং করেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তিনি এবার দলেই নেই। তিনে ব্যাট করবেন সাকিব। পিচ না দেখার কারণে বাংলাদেশের সেরা একাদশে পেসার তিনজন, না স্পিনার তিনজন তার ধারনা পাওয়া যায়নি। হাসান মাহমুদের পরিবর্তে মোস্তাফিজের সঙ্গে হাত ঘুরাতে পারেন এবাদত ও তাসকিনের যে কেউ। স্পিনার তিন জন খেলালে সাকিবের সঙ্গে নাসুম আর মোসাদ্দেকে। প্রয়োজনে হাত ঘুরাতে দেখা যেতে পারে মাহমুদউল্লাহকে। এমন কি আফিফকেও।
এমপি/এমএমএ/