ভারতের পাল্টা জবাবে পাকিস্তান ধরাশায়ী
১০ মাস আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তান যে চিত্রনাট্য সৃষ্টি করেছিল, এবার সেটা তৈরি করেছে ভারত। এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি আসরে টানটান উত্তেজনার নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারত জয়ী হয়েছে ৫ উইকেটে। পাকিস্তানের ১৪৭ রানের জবাব তারা দিয়েছে ৫ উইকেট ও ২ বল হাতে রেখে ১৪৮ রান করে। জয় সূচক রান আসে ম্যাচ সেরা হার্দিক পান্ডিয়ার ব্যাট থেকে ছক্কায়।
রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে পাক-ভারত মহরণ এখন আর নিয়মিত হয় না। কালে-ভাদ্রে দেখা হয় দুই দলের। সবাই অপেক্ষায় থাকেন সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। তীর্থের কাকের মতো লোভাতুর দৃষ্টি নিয়ে অপেক্ষায় থাকার পর যে ম্যাচটি সামনে আসে, সেটি হতে হবে বিনোদনের সব রকমের পসরা সাজানো। থাকবে নাটকীয়তা। থাকবে উত্তেজনা। দোদুল্যমান থাকবে ম্যাচের গতিপথ। তারপর আসবে সমাপ্তি। তবেই মিলবে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বীর ম্যাচের স্বার্থকতা। তার সবই ছিল পাক-ভারত মহারণে।
পাকিস্তান যখন এক বল বাকি রেখে ১৪৭ রানে অলআউট হয়ে যায়, তখন অনেকেই মনে করেছিলেন ম্যাচটির আকর্ষণ বলতে আর কিছু থাকল না। গতবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে ১৫১ রানে আটকে রেখে পাকিস্তান যেমন ম্যাচটিকে একপেশে করে জিতেছিল ১০ উইকেটে, এবার সে কাজটি করে দেখাবে ভারত? কিন্তু তিন কাঠির খেলায় চিত্রনাট্য কী আর সব সময় একই রকম হয়? হয় না বলেই উত্তেজনার পারদ নিয়ে হাজির হয়েছিল দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচ দুলেছে পেন্ডুলামের মতো। একবার ভারতের দিকে হেলে পড়ে, তো আবার পাকিস্তানের দিকে। আবার ভারতের দিকে। আবার পাকিস্তানের দিকে। শেষ পর্যন্ত হেলে পড়ে ভারতের দিকে।
তা কী ছিল ম্যাচের চিত্রনাট্যে? ভারতের ইনিংসের শুরুর দিকে যাওয়া যাক। অভিষিক্ত নাসিম শাহ প্রথম ওভারেই কাঁপ ধরিয়ে দেন। দ্বিতীয় বলেই লুকেশ রাহুলের ফেরাটাকে দুর্বিসহ করে তুলেন। লুকেশ মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই বোল্ড। সেই ওভারেই উইকেটের পেছন বিরাট কোহলি বেঁচে যান ফখর জামান ক্যাচ ধরতে না পারাতে।
এরপর সাবেক ও বর্তমান দুই অধিনায়ক কোহলি ও রোহিত শর্মা মিলে ম্যাচকে নিজেদের গ্রিপে নিয়ে নেন। জুটি ভাঙে ৫০ রানে অষ্টম ওভারে। অধিনায়ক ফিরে যান ১২ রানে মোহাম্মদ নেওয়াজের বলে। তিন রান পর নেওয়াজের পরের ওভারে কোহলিও ফিরে যান ৩৪ বলে ৩৫ রান করে।
এতে করে পাকিস্তান ম্যাচে ফিরে আসে। সেই ফিরে আসাটাকে তারা আরও সুদৃঢ় করে সূর্যকুমারকে নাসিম শাহ ফিরিয়ে দিলে। সূর্যকুমার ১৮ বলে ১৮ রান করেন। এ সময় ভারতের রান ছিল ১৪.২ ওভারে চার উইকেটে ৮৯। জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩৪ বলে ৫৯ রানের। এ সময় জুটি বাঁধেন হার্দিক পাান্ডিয়া ও রবীন্দ্র জাদেজা। শেষ ৫ ওভারে তাদের প্রয়োজন পড়ে ৫১ রানের। শুরু হয় নাটকীয়তা। ওভার প্রতি প্রয়োজন ১০.২ রান করে। ১৬ তম ওভারে সেই চাহিদা মেটান দুই ব্যাটসম্যান ১০ রান করে। পরের ওভারে আসে ৯ রান। ১৮ নম্বর ওভারে আসে ১১ রান। ফলে শেষ দুই ওভারে প্রয়োজন পড়ে ২১ রানের। হারিস রউফের করা সেই ওভারে হার্দিক পান্ডিয়া তিন বাউন্ডারিতে ১৪ রান সংগ্রহ করে ম্যাচকে আবার নিজেদের দিকে নিয়ে আসেন। শেষ ওভারে প্রয়োজন ৭ রানের। খুবই সহজ। কিন্তু মোহাম্মদ নাওয়াজ প্রথম বলেই জাদেজাকে বোল্ড করে নতুন করে উত্তেজনা নিয়ে আসেন। জুটিতে রান আসে ২৯ বলে ৫২। দুইটি করে বাউন্ডারি ও ছক্কা মেরে জাদেজা করেন ২৯ বলে ৩৫ রান।
ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ সব সময় কী আর নিরামিষভাবে শেষ হতে পারে। একটু টক-ঝাল-মিষ্টিতো থাকতেই হয়। সেই কাজটিই করেন নাওয়াজ পরের দুই বলে কোনো রান না দিয়ে। এতে সমীকরণ দাঁড়ায় তিন বলে ৬ রানের। কিন্তু হাদিক পান্ডিয়া যেন আর কোনো নাটকীয়তার জন্ম দিতে আগ্রহী ছিলেন না। দিলেন মেরে ছক্কা। গেল খেলা শেষ হয়ে। পান্ডিয়া মাত্র ১৭ বলে এক ছক্কা ও চার বাউন্ডারিতে ৩৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। এর আগে বল হাতে তিনি ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে বনে যান পাক-ভারত ম্যাচের রাজা।
এমপি/এসএন