ভারতের কব্জায় পাকিস্তানের রান
টস জেতার পর অধিনায়ক রোহিত শর্মা যে আশা নিয়ে বোলারদের হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন, তার সেই আশা অনেকটাই পূরণ করেছেন তারা। পাকিস্তানকে খুব বেশি দূরে যেতে দেননি। ১ বল বাকি থাকতে ১৪৭ রানে অলআউট হয় তারা।
২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে এই দুবাইয়ে যা ঘটেছিল আজকের ম্যাচে তার বিপরীত হওয়ার পথে। সেই ম্যাচে পাকিস্তান টস জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠিয়ে ১৫১ রানে আটকে রেখে ম্যাচ জিতেছিল ১০ উইকেটে। এই ম্যাচে যা ভারতের পক্ষে কথা বলতে চলেছে। এখন দেখার বিষয় তাদের ব্যাটসম্যানরা কী করেন?
উইকেটে সামান্য ঘাস ছিল। যে কারণে রোহিত শর্মা টস জিতে ফিল্ডিং নিতে বিলম্ব করেননি। একই সিদ্ধান্ত বাবর আজমও নিতেন বলে জানিয়েছিলেন।
উইকেট করেছে ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে বৈরী আচরণ। কখনো অসম বাউন্স। কখনো বল নিচু হয়ে এসেছে। যা খেলতে গিয়ে ব্যাটসম্যানরা বারবার পরাস্ত হয়েছেন। পাকিস্তানের টপ অর্ডার ব্যাটাররা হয়েছেন তার শিকার। আবার যারা উইকটে টিকে গিয়েছিলেন তারাও হাত খুলে খেলতে পারেননি। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদ। রিজওয়ান ৪৩ রান করেন ৪২ বলে। ইফতিখার ২৮ রান করতে বল খেলেন ২২টি। যে কারণে ১২০ বলের মাঝে ৪৮টি ছিল ডট বল।
পাকিস্তানের সাফল্যের সূচনা হয় বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাত ধরে। কিন্তু আজ শুরুতেই ফিরে যান বাবর আজম। উইকেটে কিছুটা ঘাস থাকায় ব্যাটিং পাওয়ার প্লের পুরো ৬ ওভারই পেসার দিয়ে বোলিং করান রোহিত শর্মা। এখানেই তিনি সফল হন। বাবর আজমসহ ফখর জামানের উইকেটও তুলে নেন দুই পেসার ভুবনেশ্বর কুমার ও আবেশ খান। ভুবনেশ্বর বাবর আজমকে (১০) ফিরিয়ে দেন। পুল করতে গিয়ে ফাইন লেগে সহজ ক্যাচ ধরেন আর্শদ্বীপ সিং। ফখর জামান আবেশ খানের বাউন্সার খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে দিনেশ কার্তিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন। দুজনই ১০ রান করে আউট হন। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে রান আসে ২ উইকেটে ৪২। ওভারপ্রতি ৭ করে। এরপর মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদ রান বাড়ানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু শুরুতে খুব একটা সফল হতে পারেননি। ১০ ওভার শেষে রান ছিল ২ উইকেটে ৬৮। দুজন ৪.১ ওভার খেলে যোগ করেন ৬৪ রান। এরপর ধীরে ধীরে হাত খুলে খেলা শুরু করেন। বিশেষ করে ইফতিখার আহমেদ। কিন্তু খুব বেশি দূর যেতে পারেননি। পরের ২ ওভারে ১৯ রান আসে। চাহালের এক ওভারে ছক্কা মারার পরের বলে তার হাতেই জীবন পেয়েছিলেন ইফতিখার। কিন্তু এই জীবন পাওয়াটাকে কাজে লাগাতে পারেননি ইফতিখার। হার্দিক পান্ডিয়ার দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম বলেই বাউন্সার ছিল। ইফতিখারও ফখর জামানের মতো খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে কার্তিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন ২২ বলে ২৮ রান করে।
ইনিংসের শুরু থেকেই রান করতে বেশ সমস্যা হচ্ছিল মোহাম্মদ রিজওয়ানের। আবার তার উপরই ভরসা ছিল রান বাড়িয়ে নেওয়ার। কিন্তু তিনি সেখানে আশা পূরণ করতে পারেননি। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে হার্দিক ভয়ংকর হয়ে উঠেন। ইফতিখারকে ফিরিয়ে দেওয়ার পরের ওভারে তিনি জোড়া আঘাত হানেন রিজওয়ান ও খুশদিল শাহকে ফিরিয়ে দিয়ে। রিজওয়ান ফিরে যান ১৪১ কিলোমিটার গতির বাউন্সারে। খেলতে গিয়ে থার্ড ম্যানে আবেশ খানের হাতে ধরা পড়েন। শেষ হয় তার টি-টোয়েন্টির ধারার বিরুদ্ধে খেলা ৪২ বলে ৪৩ রানের ইনিংসের। খুশদিল শাহ ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ কভারে রবীন্দ্র জাদেজার হাতে সহজ ক্যাচে পরিণত হন ২ রানে। ১৫ ওভার শেষে পাকিস্তানের রান ছিল ৫ উইকেটে ১০৩।
শেষ ৫ ওভারে রান বাড়ানোর তাগিদ ছিল। এসময় ভরসা ছিলেন সাদাব খান ও আসিফ আলী। কিন্তু এসময় তারা প্রায় প্রতি ওভারেই উইকেট হারায়। ৫ ওভারে রান আসে ৫ উইকেট হারিয়ে ৪৪। আসিফ আলী ফিরে যান রান বাড়ানোর তাড়না থেকে ভুবনেশ্বর কুমারের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে সূর্যকুমারের হাতে ধরা পড়েন ৯ রানে। ভুবনেশ্বর কুমারের মতো আক্রমণে ফিরে আসে আর্শদ্বীপ সিংও। ফিরিয়ে দেন মোহাম্মদ নেওয়াজকে (১) উইকেটের পেছনে দিনেশ কার্তিকের ক্যাচে পরিণত করে। ভুবনেশ্বর পরের ওভারে জোড়া আঘাত করে ফিরিয়ে দেন সাদাব খান ও অভিষিক্ত নাসিম শাহকে। দুজনকেই তিনি এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন। দুজনই রিভিউ নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে শাহনাওয়াহ দাহানি ৬ বলে ১৬ রান করলে পাকিস্তানের সংগ্রহ ১৪৭ পর্যন্ত যায়। হাসান রউফ ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন।
ভারতের হয়ে ভুবনেশ্বর কুমার ২৬ রানে নেন ৪ উইকেট। হার্দিক পান্ডিয়া ৩ উইকটে নিয়ে খরচ করেন ২৫ রান। আর্শদ্বীপ সিং ৩৩ রানে নেন ২ উইকেট। আবেশ খান ১৯ রানে নেন ১ উইকেট।
এমপি/এসজি