২২ গজে আজ ভারত-পাকিস্তান লড়াই
সীমান্তে দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সশস্ত্র অবস্থায় সার্বক্ষণিক পাহারারত। আছে টানটান উত্তেজনা। যখনই রাজনৈতিক সম্পর্কে বারুদ লাগে, তার ঢেউ আছড়ে পড়ে সীমান্তেও। রাজনৈতিক সর্ম্পকটা অবশ্য মোটেই ভালো নেই দুই দেশের। এই দুই দেশ হলো ভারত আর পাকিস্তান। রাজনৈতিক বৈরিতার এই উত্তাপ ক্রিকেট বিশ্বের ‘প্রাণ’ পাকিস্তান-ভারত ম্যাচেও প্রভাব পড়েছে। ২২ গজে দুই দেশের মুখ দেখাদেখি বন্ধ। দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ হয় না। এখানে পাকিস্তানের আগ্রহ থাকলেও ভারত মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাই দুই দেশের খেলা বলতে আইসিসি আর এসিসির আসর। আইসিসির ইভেন্টে দুই দেশের খেলা নির্ভর করে গ্রুপিং আর সূচির উপর। কিন্তু এশিয়া কাপ সেখানে অবারিত সুযোগ। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) যেন ইচ্ছে করেই দুই দেশকে একই গ্রুপে রাখে। আবার ফরম্যাটও এমনভাবে করে যাতে করে আবারও দেখা হয়। এমন কী ফাইনালেও দেখা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রচুর।
পাকিস্তান-ভারতের ম্যাচ মানেই বিশ্ব ক্রিকেটের নড়চড়ে বসা। সেখানে এশিয়া কাপের এক আসরে দুইবার, এমনকি তিনবারও হয়ে যেতে পারে। এ যেন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্য ‘একটি কিনলে আরেকটি ফ্রি’ পলিসির মতো। আর ফাইনালে দেখা হলে তা হবে আবার বাড়তি বোনাস। এশিয়া কাপের আসরের ফরম্যাট এভাবে সাজানো হয়েছে। বলা যায় আয়োজক চান দুই দলই যেন ফাইনালে খেলে। আর তা না হলে দুইবার দেখাতো হচ্ছেই। এটা আর ঠেকায় কে?
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে আজ এক কাতারে নিয়ে এসেছে এই এশিয়া কাপই। মরুর বুকে দুবাইয়ে আজ মুখোমুখি হবে দুই দল। আগুনের উত্তাপ ছড়ানো ম্যাচ দিয়ে আবার দুই দেশের যাত্রা শুরু হবে আসরে। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে দুই দেশের মুখোমুখি লড়াইয়ে ভারতই থাকত সব সময় ফেভারিট। মাঠেও তার প্রমাণ রেখে তারা ম্যাচ নিজেদের করে নিত। যে কারণে ভারতেরই জয়ের পাল্লা ভারী। কিন্তু মরুর বুকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গত আসরে পাকিস্তান ভারতের গাম্ভীর্যে আঘাত হানে। নামিয়ে আনে মাটিতে। ম্যাচ জিতে ১০ উইকেটে। বিশ্বকাপে দুই দেশেরই এটি ছিল আবার প্রথম ম্যাচ। ভারতকে হারিয়ে পাকিস্তান পরে গোটা আসরে দুর্দান্ত প্রতাপে খেলে পৌঁছে যায় সেমিফাইনালে। যদিও সেমিফাইনালে তারা জিততে পারেনি। হার মেনেছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে। বিপরীতে ভারত পাকিস্তানের কাছে এই হারের ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারেনি। সেমি ফাইনালেই যেতে পারেনি। তাই ভারতের কাছে আজ প্রতিশোধের পালা। অন্যদিকে পাকিস্তানের কাছে নিজেদের জয়ের সাফল্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। পাকিস্তান সর্বশেষ মোকাবিলাতে জয়ী হলেও এর আগে চারটি ম্যাচেই তারা ভারতের কাছে হেরেছিল।
ভারত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সব সময় ভালো খেললেও পাকিস্তানের ছিল উত্থান-পতন।কিন্তু গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকেই অবশ্য দুই দেশই সমান অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে। সর্বশেষ খেলা ১০ ম্যাচে দুই দেশই আটটি করে ম্যাচ জিতে হেরেছে দুইটিতে। ভারত হেরেছে ইংল্যান্ড ও উইন্ডিজের কাছে। পাকিস্তানের হার ছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছেই দুইবার।
এশিয়া কাপে দুই দেশই এসেছে নিজেদের সেরা সব অস্ত্র নিয়ে। তবে সেই অস্ত্রের ঝনঝনানিতে নেই আবার দুই দেশের অন্যতম সেরা অস্ত্র পাকিস্তানের শাহিন শাহ আফ্রিদী ও ভারতের যশপ্রীত বুমরা। দুইজনেই ইনজুরিতে কাবু। ইনজুরিতে আরও আছেন পাকিস্তানের পেসার মোহাম্মদ ওয়াসিম ও ভারতের হার্শাল প্যাটেল। তবে দুই দেশেরই মূল আকর্ষণ ব্যাটিং লাইন। এক সময় ভারতের ব্যাটিং লাইন ছিল বিরাট কোহলি কেন্দ্রিক। এখন কোহলি যেন অস্ত্রগামী সূর্য। সেখানে জায়গা করে নিয়েছেন পাক দলপতি বাবর আজম। দুর্দান্ত ফর্মে আছেন টি-টোয়েন্টি র্যাংকিংয়ে সবার উপরে থাকা বাবর আজম। আবার দলগত র্যাংকিংয়ে এগিয়ে ভারত। তারা আছে সবার উপরে, পাকিস্তান তিনে।
ভারতের ব্যাটিং লাইন সমৃদ্ধ হয়েছে অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি ছাড়াও দলে ফিরেছেন লুকেশ রাহুল। দারুণ ফর্মে আছেন সূর্যকুমার যাদব। পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন সমৃদ্ধ হয়েছে বাবর আজমের সঙ্গে ফখর জামান, মোাহম্মদ রিজওয়ান, আসিফ আলী, ইফতিখার আহমেদকে নিয়ে। দুই দলের আছেন বেশ কয়েকজন অলরাউন্ডার, যারা যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেন। ভারতের হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজা ও দিপক হুদা এবং পাকিস্তানের সাদাব খান ও মোহাম্মদ নেওয়াজ।
বোলিংয়ে পাকিস্তানের পেস আক্রমণে আছেন ভারতের হয়ে এই দায়িত্ব পালন করবেন ভুবনেশ্বর কুমার, হার্দিক পান্ডিয়া, রভি বিষ্ণুই। স্পিনে ভারতের আছেন অভিজ্ঞ রবিচন্দ্রন অশ্বিন আর যুবেন্দ্র চাওয়াল। পাকিস্তানের হয়ে বল ঘুরাতে দেখা যাবে পেসার হাসান আলী, হারিস রউফ, মোহাম্মদ হাসনাইন, স্পিনার সাদাব খান, মোহাম্মদ নেওয়া, ওসমান কাদিরকে।
দুই দেশ এখন পর্যন্ত ৯ বার মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে ভারতের জয়ের পাল্লা ভারী। তারা জিতেছে ৭ বার। পাকিস্তানে জিতেছে ২ বার। এশিয়া কাপে দুই দেশ ১৪ বার পরস্পরের বিপক্ষে খেলেছে। এখানেও জয়ের পাল্লা ভারী ভারতের। তারা জিতেছে ৮টিতে, পাকিস্তান জিতেছে ৫টিতে। একটি ম্যাচ টাই হয়েছে। এশিয়া কাপে একটি ম্যাচ অবশ্য টি-টোয়েন্টি ছিল। ২০১৬ সালে মিরপুরে দুই দেশ মুখোমুখি হয়েছিল। ভারত জিতেছিল ৫ উইকেটে।
এমপি/এসএন