মরুর বুকে আজ বাজবে ক্রিকেটের বাঁশির সুর
প্রতি দুই বছর পর পর এশিয়া কাপ আয়োজন হওয়ার কথা। কিন্তু এই পথ কখনই মসৃন ছিল না। কখনো সূচি মেনে অনুষ্ঠিত হলেও, কখনো আবার সেখানে ঘটেছে ব্যত্যয়। ১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু হওয়া এশিয়া কাপের দুই বছর হিসেবে এবার ২০তম আসর হওয়ার কথা। সেখানে এবার হচ্ছে ১৫তম আসর। এই আসর আয়োজনের কথা ছিল ২০২০ সালে শ্রীলঙ্কাতে। কিন্তু প্রথমে করোনা, পরে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বদলেছে সময় আর ভেন্যু। আজ মরুর বুকে শুরু হচ্ছে এই ১৫তম আসরের। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে ‘বি’ গ্রুপের দুইটি দল আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা।
এমনিতেই মরুর বুকে দাবদাহে শরীর পুড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। সেখানে আবার চার-ছক্কার ঝনঝনিতে আবহাওয়া আরও গরম হয়ে উঠবে। যে তপ্ত দাবদাহে পুড়ে আবার অঙ্গার হতে আসবেন প্রবাসীরা। যে আসরে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ খেলে, আর দেশটি যদি হয় সংযুক্ত আরব আমিরাত, যেখানে এই তিন দেশের লক্ষ লক্ষ লোক বসবাস করেন, ক্রিকেট তাদের কাছে যাদুর বাঁশি। যে বাঁশির টানে তারা আর ঘরে বসে থাকতে পারেন না। আর পারবেনই বা কী করে? বাঁশিওয়ালা যদি হন বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, বাবর আজম, ফখর আজম, সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান। সঙ্গে থাকেন রশিদ খান, মোহাম্মদ নবী, দিনেশ চান্দিমাল, কুশাল মেন্ডিস, তাদের বঁশির সুর শুনতে মাঠে ছুটে না এসে কী পারা যায়? তাইতো কেউ কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটি নিয়ে, কেউ বা দিনের আয় মাটি করে ছুটে আসেন বাঁশির সুর শুনতে।
এই বাঁশির সুর কিন্তু মরুর বুকে বাজার কথা ছিল না। প্রকৃত আয়োজনক ছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু ২০২০ সালে মরনঘাতি করোনার কারণে আসর স্থগিত করে দেওয়া হয়। আবার যখন নতুন করে তারিখ ঘোষণা করা হয়, তখন দ্বীপ রাষ্ট্রটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল উত্তাল। তাই ভেন্যু পরিবর্তন করে নিয়ে যাওয়া হয় মরুর বুকে।
একটা সময় এশিয়া কাপ মানেই ছিল ৫০ ওভারের ম্যাচ। কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে সেখানে এসেছে পরিবর্তন। আইসিসির ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে এশিয়া কাপের আয়োজন হয়ে থাকে। অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়াতে অনুষ্ঠিত হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তাই এবারের এশিয়া কাপও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের।
এশিয়া কাপ মানেই টেস্ট খেলুড়ে পাঁচটি দেশ পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান আর বাংলাদেশের সরসারি খেলা। ষষ্ঠ দলটি এসে থাকে বাছাই পর্ব খেলে। এবার সেই যোগ্যতা অর্জন করেছে হংকং। নিজেরা জায়গা করে নিতে হংকং আয়োজক দেশটিকে দর্শক বানিয়ে দিয়েছে। ২০১৮ সালেও এশিয়া কাপের ওয়ানডে আসর আয়োজন করেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। সেবারও তাদের দর্শক বানিয়ে দিয়েছিল এই হংকং।
ছয় দলের আসরে খেলা হবে দুই গ্রুপে। ‘এ’ দলে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে খেলবে হংকং। ‘বি’ গ্রুপে আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে খেলবে বাংলাদেশ। দুই গ্রুপের সেরা চারটি দল খেলবে সুপার ফোরে। সুপার ফোরের সেরা দুই দল অবতীর্ণ হবে ১১ সেপ্টেম্বর শ্রেষ্ঠত্বের জন্য।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে খেলা মানেই তাদের তিনটি ভেন্যু দুবাই, আবুধাবি আর শারজাহতে খেলা। কিন্তু এবারের ছয় দলের আসরের খেলার জন্য আবুধাবিকে ভেন্যু হিসেবে রাখা হয়নি। ১৩টি খেলার অধিকাংশই অনুষ্ঠিত হবে দুবাই স্টেডিয়ামে। শারজাহতে রাখা হয়েছে মাত্র তিনটি খেলা। যেখানে বাংলাদেশের আছে একটি ম্যাচ। ৩০ আগস্ট নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে তারা আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এই শারজাহ অবশ্য মরুর বুকে ম্যাচ আয়োজনে এখানে অনেকটাই অপাংক্তেয়। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপেট শারজাহতে কোনো ম্যাচই রাখা হয়নি। ১৯৮৪ সালে যখন এই আসর বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছিল, তখন শারজাহতেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল সবগুলো ম্যাচ। অবশ্য তখন মরুর বুকে ম্যাচই মনে ছিল শারজাহ।
এশিয়া কাপ মানেই যেন ভারতের রাজত্ব। ১৪ আসরের সাতবারই তারা সেরার মুকুট পড়েছে। এরপরই আছে শ্রীলঙ্ক। তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চারবার। পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাকি দুইবার। শেষ বার তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ২০১২ সালে। এই চ্যাম্পিয়ন হতে গিয়ে তারা বাংলার কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছিল। বাংলাদেশের ছিল প্রথম ফাইনাল। হেরেছিল শেষ বলে ২ রানে।
এই আসরে বাংলাদেশ একবারও চ্যাম্পিয়সন হতে পারেনি। কিন্তু না পারলেও সর্বশেষ চার আসরের তিনবারই তারা ফাইনালে খেলে রানার্সআপ হয়েছে। ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টির প্রথম আসরে তারা ভারতের কাছে হেরে বর্তমানে রানার্সআপ আছে। আবার ২০১৮ সালের ওয়ানডে আসরেও তারা ফাইনাল খেলে একইভাবে ভারতের কাছে হেরেছিল। এবার কিন্তু বাংলাদেশের সে রকম কোনো আশা নেই। সুপার ফোরে খেলতে পারাটাই যেন অনেক বড় প্রাপ্তি!
এমপি/এসএন