চলে গেলেন ‘মুন্না ভাই’
ক্রিকেট অঙ্গণে সবার কাছে পরিচিতি ছিলেন ‘মুন্না ভাই’ নামে। পুরো নাম শফিবুর রহমান। ক্রিকেট অন্তপ্রাণ। সেই মানুষটি আর নেই। মরনব্যাধী ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে জিততে পারেননি। হেরে গেছেন। আজ নিভে গেছে তার প্রাণ প্রদীপ। মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সকালে রাজধানীর গুলশানের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১বছর। বিকেলে গুলশান আজাদ মসজিদে নামাজের জানাযার পর আজিমপুর গোরস্তানে দাফন করা হয়। জানাজার নামাজে বিসিবির সাবেক সভাপতি লেফট্যান্ট জেনারেল (অব.) সিনহা ইবনে জামালিসহ বিসিবির বর্তমান ও সাবেক অনেক পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি মা, স্ত্রী, একমাত্র কন্যা, নাতি নাতনিসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। তার একমাত্র পুত্র বেশ কয়েক বছর আগে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেট আজ যে পর্যায়ে দাঁড়িয়ে, সেখানে রয়েছে শফিকুর রহমান মুন্নার মতো নিবেদিত প্রাণ সংগঠকের সীমাহীন অবদান। ক্রিকেটে আজ কাড়ি কাড়ি টাকা। শত শত কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট। কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তি সময়ে কোষাগার বলতে কিছু ছিল না। ক্রিকেটাররা নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে খেলতেন। সেখানে টাকার প্রচলন করেন শফিকুর রহমান মুন্না। যাকে বলে নিজের পকেটের টাকা খরচ করা।
ক্লাব ক্রিকেটে তিনি ছিলেন ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবের সঙ্গে জড়িত। এই ক্লাবের সভাপতি ও সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন। তার এই দাযিত্ব পালনকালীন সময়েই ভিক্টোরিয়া ক্লাব তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। ১৯৭৫-৭৬, ২০০১-২,২০০২-৩। প্রথমবার তিনি ক্লাবের ক্রিকেট দলের ম্যানেজার ছিলেন। সে সময়ই শুরু করেন টাকা খরচ করা। ভিক্টোরিয়া ক্লাব মোট চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চারবার।
ক্লাব ক্রিকেট থেকে সংগঠক হিসেবে যাত্রা শুরু করে শফিকুর রহমান মুন্না পরে ভুমিকা রাখেন দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা বিসিবিতেও। বেশ কয়েকবার তিনি বিসিবির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ও পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন। প্রথমে তিনি দায়িত্ব পালন করেন ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। এরপর আবার দায়িত্ব পালন করেন ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। ২০০৭ সালে গঠিত হয় অ্যাডহক কমিটি। সেই কমিটিতেও তিনি ছিলেন। পরবর্তিতে ২০৮ সালে নির্বাচিত কমিটিতেও শফিকুর রহমান মুন্না শেষবারের মতো নিজের অবদান রাখেন দেশের ক্রিকেটে। ২০১২ সালে নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বে গঠিত অন্তবর্তীকালীন কমিটিতে জায়গা হয়নি তার। এরপর আর ফিরে আসার সুযোগ হয়নি তার প্রিয় অঙ্গণে।
বিসিবিতে থাকাকালীন শফিকুর রহমান মুন্না গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ই বাংলাদেশ একে একে আর্ন্তজাতিক ভেন্যু হিসেবে আইসিসির স্বীকৃতি পায় যথাক্রমে প্রেক্ষিতেই চট্টগ্রামে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, ফতুল্লায় খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম, বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম এবং খুলনায় শেখ নাসের স্টেডিয়াম। বিসিবিতে দীর্ঘদিন থেকে প্রধান কিউরেটরের চাকুরিরত শ্রীলঙ্কান গামিনি ডি সিলভার নিয়োগও হয়েছে তার সময়ে।
বাংলাদেশ আজ যে বিপিএল নিয়ে মাতামাতি, তার শুরুতেও রয়েছে শফিকুর রহমান মুন্নার অবদান। ২০১২ সালে তৎকালীন বিসিবি সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালের সময় দেশে প্রচলন হয় বিপিএলে। বিপিএলের গর্ভনিং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ছিলেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু, সদস্য সচিব ছিলেন সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর। শফিকুর রহমান মুন্না ছিলেন এই কমিটির একজন সদস্য।
২০১১ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। শফিকুর রহমান মুন্না ছিলেন সেন্ট্রাল অর্গানাইজিং কমিটির বিসিবির তিন প্রতিনিধিদের একজন। সেই শফিকুর রহমান মুন্না মৃত্যুর আগে শেষ ১০ বছর ক্রিকেটের কোথায়ও জড়িত ছিলেন না! আসলে থাকার সুযোগ তাকে দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে তার আক্ষেপ আর আফসোস ছিল।
শফিকুর রহমান মুন্নার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বিসিবি ও বাংলাদেশর ক্রিকেটের প্রথম ফ্যান ক্লাব বেঙ্গল টাইগার্স।
এমপি/এএস