ইসলামের দৃষ্টিতে জুয়া এবং সাকিবের কর্মকাণ্ড
২০১৮ সালে সাকিব আল হাসান সৌদি রাজ পরিবারের অতিথি হয়ে পবিত্র হজ করতে গিয়েছিলেন। সে সময় তিনি নিজের ফেসবুকে পবিত্র হজ করতে যাওয়া নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি লিখেছিলেন, ‘এই পবিত্র জিলহজ মাসে, একজন অনুগত মুসলিম হিসেবে পরম করুণাময় আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় আল্লাহর ঘরে পবিত্র হজ্ব পালনের উদ্দেশে যাত্রা করতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আপনাদের সকলের নিকট দোয়া প্রার্থনা করছি যেন সুস্থ ও সুন্দরভাবে পবিত্র হজ পালন করতে পারি। আমার বা আমার পরিবারের কোন ভুলের জন্য আপনাদের নিকট আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমিও আপনাদের সকলের মঙ্গল এবং দেশ ও জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য আল্লাহর নিকট দোয়া প্রার্থনা করব। সবার জন্য আমার তরফ থেকে ভালোবাসা রইল।’
২০১৮ সালে পবিত্র হজ করে আসার পর ২০১৯ সালে সাকিব তার মা শিরিন আক্তারকে নিয়ে আবার পবিত্র হজ করে আসেন। এ ছাড়া স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে তিনি আরও বেশ কয়েকবার ওমরাহ পালন করেছেন। ২০১৯ সালে পবিত্র হজ করে আসার পরপরই সাকিব জুয়াড়িদের কাছ থেকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন রাখার দায়ে আইসিসি তাকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছিল। সঙ্গে ছিল এক বছরের শর্ত সাপেক্ষ স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। যদিও সাকিবকে সেই স্থগিত নিষেধাজ্ঞা আর কাটাতে হয়নি আইসিসির শর্ত মেনে প্রথম বছরের সাজা ভোগ করার জন্য। এই ঘটনায় সাকিব সবার সহানুভূতি পেয়েছিলেন।
বিসিবিও তার পাশে দাঁড়িয়েছিল। ঘটনাটা সাকিব না বুঝেই করে ছিলেন বলেই সবাই ধরে নিয়েছিলেন। আইসিসিও অনেকটা সে রকম দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখেছিল। কিন্তু এবার বিশ্বব্যাপি জুয়া খেলার অনলাইন প্রতিষ্ঠান বেটউইনারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বেটউইনার নিউজের সঙ্গে সাকিবের চুক্তি করাটাকে আর কেউ সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। এই চুক্তি করে ফেসবুকে ১৫ মিলিয়ন ফলোয়ার. এর বাইরে আরও অগনিত ভক্ত, সমর্থকদের যেন সাকিব যেন জুয়া খেলায়ই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন! অথচ জুয়া ইসলামের দৃষ্টিতে যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি বাংলাদেশের আইনেও। কোটি কোটি মানুষের আদর্শ সাকিব যেমন সামাজিকভাবে এই কাজটি করতে পারেন না, তেমনি দুই দুইবার হজ করে আসার পর ইসলামের দৃষ্টিতেও তিনি তা করতে পারেন না। শুধু হজ করার জন্য নয়, একজন মুসলমান হিসেবেও তিনি এ কাজ করতে পারেন না।
ইসলামে সব ধরনের জুয়া-বাজি অবৈধ। জুয়া-বাজি থেকে প্রাপ্ত সবকিছু হারাম। হারাম ভোগ করে ইবাদত-বন্দেগি করলে আল্লাহ তাআলা তা কবুল করেন না। তাই মুসলমান হিসেবে সব ধরনের জুয়া-বাজি থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। ইসলামের সূচনালগ্নের আগেওনবী করিম (সা.)-এর আগমনের সময় তৎকালীন মক্কায় নানা ধরনের জুয়া খেলার প্রচলন ছিল। তিনি সবগুলো জুয়া খেলাকেই নিষিদ্ধ করেছিলেন। জুয়া নিয়ে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরগুলো শয়তানের কার্য ছাড়া কিছু নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতে এবং আল্লাহর স্মরণ ও নামাজ থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। অতএব, তোমরা এখন কি নিবৃত্ত হবে?’ (সূরা মায়েদা: ৯০-৯১)।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘বাবা-মায়ের অবাধ্য সন্তান, জুয়ায় অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদাতা ও মদ্যপায়ী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না’ (দারেমি, হাদিস নং ৩৬৫৬)। কিছু লোকের কাছে মনে হতে পারে, জুয়া একটি লাভজনক ব্যবসায়। কিন্তু এর সামান্য কিছু লাভ থাকলেও ক্ষতির পরিমাণ তার চেয়ে বহুগুণে বেশি। যেমন সূরা বাকারার ২১৯ নম্বর আয়াতে এসেছে, ‘হে মুহাম্মদ! তারা আপনাকে মদ এবং জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। আপনি বলে দিন, এ দুটোর মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর এতে মানুষের জন্য সামান্য কিছু উপকারিতাও রয়েছে। তবে এগুলোতে উপকারিতা অপেক্ষা ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।’
এমপি/এমএমএ/