বিসিবির আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে সাকিবই টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক
'যত গর্জে তত বর্ষে না'- টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়ে সাকিব আল হাসানকে অধিনায়ক ঘোষণা করে বিসিবি তাই-ই প্রমাণ করল। বিশ্বব্যাপী অনলাইনে জুয়া খেলার প্রতিষ্ঠান বেটউইনারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বেটউইনার নিউজের সঙ্গে চুক্তি করে নিজের ফেসবুকে পেজে যেখানে ১৫ মিলিয়ন ফলোয়ার আছে তার, সেখানে দম্ভ ভরে ঘোষণা দেন। এ রকম ঘোষণা তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্যের দূত হওয়ার পর দিয়ে থাকেন। কিন্তু এবারেরটি ছিল ইসলাম ও দেশের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহ তোলপাড় ছিল দেশের ক্রিকেটাঙ্গন। ক্রিকেট বিশ্বেও সংবাদ শিরোনামে হয়েছিল সাকিবের এই চুক্তি।
চুক্তি থেকে সরে আসতে বিসিবির পক্ষ থেকে দফায় দফায় যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সাকিবের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে তাকে বুঝাতে ব্যর্থ হয়। পরে উপায়ন্তার না দেখে গত ১১ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) বিসিবি সভাপতি বোর্ডের শীর্ষ কয়েকজন পরিচালককে নিয়ে তার দাপ্তরিক অফিসে জরুরি বৈঠক করেন। সেখান থেকে বের হয়ে এসে তিনি হুংকার দিয়ে জানিয়েছিলেন সাকিবকে বেটউইনারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে হবে, নতুবা ক্রিকেট ছাড়তে হবে। এখানে তারা কোনো রকম ছাড় দেবেন না। এর কিছুক্ষণ পরই বরফ গলে। সাকিব ফোন করে মৌখিকভাবে চুক্তি বাতিলের কথা জানালেও বিসিবি তাতে সন্তুষ্ট ছিল না। তাকে লিখিত দিতে বলা হয়। সেটিও সাকিব সে দিনই দ্রুততম সময়ে দিয়ে দেন। কিন্তু এখানেই ক্ষান্ত ছিলেন না বিসিবি সভাপতি। তিনি সাকিবকে জরুরি তলব করে দেশে আসতে বলেন। এশিয়া কাপের দল ঘোষণা ও তাকে অধিনায়ক করার আগে তার সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে আরও বিস্তারিত আলাপ করবেন। সেই আলাপের দিন ছিল আজ।
আজকের (শনিবার) বৈঠককে সামনে রেখে সাকিব গতকাল রাত সোয়া ৩টার দিকে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরেন। খবর রটে যায় দুপুরে বিসিবি সভাপতির গুলশানের বাসায় হবে সেই বৈঠক। বেলা ১১টা থেকেই সেখানে সংবাদকর্মীরা আসতে শুরু করেন। কিন্তু সাকিবের আসার কোনো খবর ছিল না। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বেলা সোয়া ৩টার দিকে তিনি খুবই সাধারণ একটি গাড়িতে চড়ে আসেন। কিন্তু সংবাদকর্মীরা তা বুঝতে পারেননি। যখন বুঝতে পেরেছেন, সাকিব তখন লিফটে উঠে গেছেন। প্রায় দুই ঘণ্টার মতো তিনি বিসিবির সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় বিসিবির দুই পরিচালক জালাল ইউনুস ও খালেদ মাহমুদ সুজনও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু মিটিং শেষে সাকিব সংবাদমাধ্যমে কোনো কথা না বলে গাড়িতে উঠে চলে যান। বিসিবির সভাপতিও পরে আসেননি সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে। পরে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে আসেন বিসিবি পরিচালক ও ক্রিকেট অপরেশনস কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস।
তিনি সাকিবকে টি-টোয়েন্টির তিনটি আসরের জন্য অধিনায়ক ঘোষণা করে বলেন, ‘সাকিব আল হাসান এশিয়া কাপ, নিউ জিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ ও বিশ্বকাপের জন্য অধিনায়ক থাকছেন। বোর্ডের আগে থেকেই একটা সিদ্ধান্ত ছিল সাকিবকে নিয়ে। আজ সে ব্যাপারেই আবার আলোচনা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী সাকিবকেই বিশ্বকাপ পর্যন্ত নেতৃত্ব দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে আমরা আবার বিশ্বকাপের পর নতুন নেতৃত্বের বিষয়টা বিবেচনা করব।’
এ রকম একটি ঘটনা ঘটানোর পর সাকিবের উপর এ রকম দায়িত্ব দেওয়াটা কতটা যৌক্তিক ছিল- জানতে চাইলে জালাল ইউনুস বলেন, ‘এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। সাকিব তার ভুল বুঝতে পেরেছে যে তার এমনটা করা উচিত হয়নি। আর সাকিব আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। যেহেতু আমরা আগে থেকেই সিদ্ধান্ত রেখেছিলাম যে সাকিবকে নেতৃত্ব দেওয়া হবে তাই সেটাই করা হয়েছে। যেহেতু সাকিব প্রেসিডেন্টের সামনে এবং আমাদের সামনে বলেছে যে সেটাকে অনলাইন নিউজ পোর্টাল মনে করে চুক্তি করেছে। তাকে বুঝিয়ে বলার পর সে কিন্তু সরে এসেছে।’
কিন্তু সাকিব তো এই চুক্তি করতে বিসিবির অনুমতি নেয়নি- জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘তার (সাকিব) কাছে মনে হয়েছে যে এটা মিসগাইডেড। এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা যেহেতু আমাদের অনুমতি ছাড়া চুক্তি করেছে এ ব্যাপারে (শাস্তি বা কারণ দর্শানো) পরবর্তী বোর্ড সভায় আলোচনা করা হবে।’
সাকিবকে অধিনায়ক ঘোষণা করতে গিয়ে বিসিবি তার পক্ষই নিয়েছে। বৃস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে বিসিবির সভাপতির সেই হুংকারের কোনো ছায়াও ছিল না আজকের সংবাদ সম্মেলনে। সেখানে ছিল সাকিবের কর্মকাণ্ডকে প্রচ্ছন্নভাবে সমর্থন করে যাওয়া। কারণ সাকিব একটি করে অন্যায় করেন, আর পরবর্তীতে করবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেন। সে কথা তিনি রাখেন। সেই কাজ আর করেন না। কিন্তু নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করেন।
জালাল ইউনুস বলেন, ‘সাকিব আশ্বাস দিয়েছে আমাদের বোর্ড প্রেসিডেন্টের সামনে তাই মেনে নিয়েছি। এমন কিছু হলে আসলে কমপ্রোমাইজ করা উচিত না। কিন্তু যেহেতু দলের চিন্তা করে এবং সে যেহেতু বলেছে এবার আমরা মেনে নিয়েছি। আশা করছি পরবর্তীতে এমন কিছু আর হবে না।’
সাকিব এর আগে জুয়াড়ির কাছ থেকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়ে গোপন রাখার দায়ে আইসিসি কর্তৃক এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। এবার আরেকটি জুয়াড়ি প্রতিষ্ঠানের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করার পর তার উপর অধিনায়কত্ব দেওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেল কি না জানতে চাইলে জালাল ইউনুস বলেন, ‘এখানে আমাদের যুক্তি তো আছে। আমরা তো বলেছি সে আমাদের সেরা ক্রিকেটার, সে দেশের বাইরের কেউ না। সে যখন বলেছে যে ভুল করেছে আমরা তা মেনে নিয়েছি। পরবর্তীতে যেন এমন ভুল না করে সেটা তাকে বলা হয়েছে এবং সাকিব তা মেনেও নিয়েছে।’
এমপি/এসজি/