রাজার রাজত্বে শূন্যও ছিল!
আশায় গুড়ে বালি। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় ছিল প্রত্যাশিত। অন্তত সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান তাই বলে। টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের জয়-পরাজয়ের মাঝে ব্যবধান কম থাকলেও শেষ ১০ ম্যাচের আটটিতেই জয় ছিল বাংলাদেশের। আর ওয়ানডেতে ২০১৩ সালের পর বাংলাদেশ কোনো ম্যাচই হারেনি। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রমেই সামনের দিকে এগিয়েছে, জিম্বাবুয়ে হেঁটেছে পেছনে। অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টিকিট তারা এখনো পায়নি। প্রাথমিক রাউন্ডে যেতে পেরেছে বাছাইপর্ব খেলে। এ ফরম্যাটে বাংলাদেশও খুব একটা ভালো দল নয়। তারপরও এবারের বিশ্বকাপে তারা সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। সেই বিশ্বকাপক সামনে রেখে জিম্বাবুয়ের মতো দুর্বল দলকে পেয়ে বাংলাদেশ তরুণদের দিয়ে একটু বাজিয়ে নিতে চেয়েছিল। যদি তরুণরা ঘণ্টা বাজাতে পারেন, তাহলে তাদের দিয়েই চলবে আগামীর টি-টোয়েন্টি দল। কিন্তু ওয়ানডেতে যায়নি কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষায়। টি-টোয়েন্টিতে তরুণদের দিয়ে পরীক্ষার মিশনে যেমন ফেইল মেরেছে বাংলাদেশের থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, তেমনি ওয়ানডে ক্রিকেটের দর্পচূর্ণও হয়েছে। টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডে-দুইটি সিরিজেই বাংলাদেশ হেরেছে একই ব্যবধানে ২-১ এ। এই হারের আবার রকম ফের আছে। টি-টোয়েন্টিতে সিরিজ হেরেছিল শেষ ম্যাচে গিয়ে, ওয়ানডেতে প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে সিরিজ হাতছাড়া করে। শেষ ম্যচে জয় ছিল নিছক সান্ত্বনার।
বাংলাদেশের সব কিছু এ রকম এলোমেলো করে দিয়েছেন এক সিকান্দার রাজাই। বাংলাদেশ কী জিম্বাবুয়ের কাছে সিরিজ হেরেছে, না সিকান্দার রাজার কাছে? এ প্রশ্নের জবাব আসবে সিকান্দার রাজার পক্ষেই বেশি। বলা যায় রাজার রাজত্বেই অসহায় ছিল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচেই তার ব্যাট থেকে এসেছে দুইটি হাফ সেঞ্চুরি ইনিংস। ওয়ানডেতে গিয়ে তা রূপ নিয়েছে তিন অংকের ঘরে। এই চারটির তিনটিতেই তিনি ছিলেন অপরাজিত। টি-টোয়েন্টিতে প্রথম ম্যাচে অপরাজিত ৬৫ রান করেছিলেন মাত্র ২৬ বলে চার ছক্কা ও সাত বাউন্ডারিতে। হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। পরের ম্যাচে তিনি ৬২ রান করেছিলেন ৫৩ বলে দুই ছক্কা আর আর চার বাউন্ডারিতে। প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ে জয়ী হলেও পরের ম্যাচে হেরেছিল।
ওয়ানডেতে সিকান্দার রাজা ছিলেন আরও বেশি অপ্রতিরোধ্য। তার এই অপ্রতিরোধ্য দৃঢ মনোভাবের কাছেই দর্পচূর্ণ হয়েছে বাংলাদেশের ওয়ানডের সাফল্য। দুইটি ম্যাচেই রাজা দলের ক্রান্তিকালে হাল ধরে দলকে জয়ের বন্দরে নোঙ্গর করান। প্রথম ম্যাচে ১০৯ বলে ছয় ছক্কা ও আট চারে ১৩৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। দ্বিতীয় ম্যাচে তিনি ১২৭ বলে চার ছক্কা ও আট চারে ১১৭ রানে ছিলেন অপরাজিত। প্রথম ম্যাচে দলের ক্রান্তিকাল পাড়ি দিতে পেয়েছিলেন ইনোসেন্ট কাইয়াকে (১১০), পরের ম্যাচে অধিনায়ক রেজিস চাকাভাকে (১০২)। দুইটি ম্যাচেই সিকান্দার রাজা ছিলেন ম্যাচের ‘রাজা’।
শুধুই কী ব্যাট হাতেই রাজা তার রাজত্বে বাংলাদেশকে অসহায় বানিয়েছিলেন। না তা নয়; বল হাতেও তিনি ছিলেন বাংলাদেশের জন্য আতঙ্ক। টি-টোয়েন্টিতে তিন ম্যাচেই বোলিং করে উইকেট নিয়েছেন দুইটি। ওয়ানডেতে সেই সংখ্যা ছিল পাঁচটি।
তাহলে রাজা কী বাংলাদেশের বিপক্ষে শুধু রাজত্বই করে গেছেন। ব্যর্থতা ছিল না। ছিল; রাজার রাজত্বে ব্যর্থতাও ছিল। সেই ব্যর্থতা ছিল শূন্য। দুই সিরিজেই তিনি দুইটি শূন্য মেরেছেন। দুইটিই ছিল একই ঘরানার। প্রথম বলেই আউট। টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচ ফিফটি করার পর তৃতীয় ম্যাচে গিয়ে গোল্লা মারেন। শেখ মেহেদি হাসানের বলে মোস্তাফিজুর রহমানের হাতে ধরা পড়েন। তার ব্যর্থতা সত্ত্বেও ম্যাচটিতে অবশ্য জিম্বাবুয়ে জিতেছিল ১০ রানে। ওয়ানডে সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচে অপরাজিত সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর তিনি তৃতীয় ম্যাচে একইভাবে প্রথম বলেই আউট হয়ে যান অভিষিক্ত পেসার এবাদত হোসেনের বলে বোল্ড হয়ে। এবাদতের বলে তার দুইটি স্ট্যাম্পই উপড়ে যায়। এই ম্যাচ অবশ্য জিম্বাবুয়ে জিততে পারেনি। ১০৫ রানে হেরে যায়। এভাবেই রাজার রাজত্বে শূন্য ছিল!
এমপি/এসএন