মান বাঁচানোর ম্যাচে বাংলাদেশের সংগ্রহ আরও কম
প্রথম ম্যাচে ৩০৩ এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ২৯০ রান করে বাংলাদেশ ম্যাচ জিততে পারেনি। হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্যে শেষ ম্যাচ জেতা ছাড়া আর কোনো পন্থা ছিল না।
কিন্তু মান বাঁচানোর ম্যাচে বাংলাদেশ করেছে আরও কম। ৯ উইকেটে ২৫৬। প্রথম দুই ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও বাংলাদেশ টস হেরেছিল।
সব কিছু হারিয়ে দেয়ালে যখন পিঠ ঠেকে যায়, তখন সামনে এগুনো ছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা থাকে না। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে না পারা মানে অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার মতো অবস্থা। কিন্তু সেখানেই বাংলাদেশের অবস্থা আরও বেশি নাজুক। যেখানে ৩০৩ আর ২৯০ রান করেও লড়াই করতে পারেনি। হেরেছিল দুই ম্যাচেই পাঁচ উইকেটে।
বুধবার (১০ আগস্ট) তৃতীয় ম্যাচে ২৫৬ রান করে বাংলাদেশের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো আদো কী সম্ভব হবে? বোলারদের উপর কী সেই আস্থা রাখা যায়?
ইনুজরিতে বাংলাদেশ শিবির টালমাটাল অবস্থা। কিন্তু জিম্বাবুয়ে শিবিরের অবস্থা আরও খারাপ। দ্বিতীয় ম্যাচে তাদের পরিবর্তন ছিল পাঁচটি। বাংলাদেশের তিনটি। এই ম্যাচে দুই দলের একজন করে অভিষেক হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের টিকিট পেতে যে দল নিয়ে তারা খেলেছিল, সেই দলেরই আটজন নেই। বাংলাদেশের অবস্থা কিন্তু সে রকম হয়নি। কিন্তু তারপরও জিম্বাবুয়ের সামনে দাঁড়াতে পারছে না।
প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশ ভালো সূচনা করেছিল। এই ম্যাচে তা আর পারেনি। না পারার কারণেই ইনিংসের চেহারা প্রথম দুই ম্যাচের মতো হৃষ্টপোষ্ট হয়নি। ২৫৬ রানের অর্ধেকেরই বেশি ১৬১ রান এসেছে আফিফ হোসেন (অপরাজিত ৮৫) ও এনামুল হক বিজয়ের (৭৬) ব্যাট থেকে। বাকিদের সংগ্রহ ৯৫। যেখানে মাহমুদউল্লাহর আছে ৩৯ রান। শূন্য রানে অপরাজিত থাকা অভিষিক্ত এবাদতসহ পাঁচ জনের নামের পাশে কোনো রান নেই। তারা হলেন নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, হাসান মাহমুদ ও মোস্তাফিজুর রহমান।
বাংলাদেশের ইনিংসে দুইটি রান আউট ছিল তামিম ইকবাল ও মোস্তাািফজুর রহমানের। রান বাড়ানোর তাড়া থেকে মোস্তাফিজকে অনেকটা জোর করেই আউট করেছলেন আফিফ। কিন্তু তামিম ইকবালের রান আউট ছিল এনামুলের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতে।
প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশের ৩০৩ ও ২৯০ পর্যন্ত যাওয়ার পেছনে ছিল তামিম ইকবালের দুইটি হাফ সেঞ্চুরি ৬২ ও ৫০। কিন্তু এই ম্যাচে রান আউটের শিকার হয়ে ১৯ রানে ফিরে যান তিনি। এনগ্রাভার বল পয়েন্টে খেলে ক্রিজ ছেড়ে বের হয়ে আসনে। তামিমও রান নেয়ার জন্য ছুটেন অপরপ্রান্ত থেকে। কিন্তু পরে এনামুল থেমে যান। তামিম মাঝ ক্রিজ অতিক্রম করে ফেলেন। পরে সেখান থেকে ফিরে আসতে গিয়ে আর পারেননি। মাধেবেরের থ্রো থেকে এনগ্রাভা তামিমকে রান আউট করেন। এদিন তামিম অবশ্য প্রথম দুই ম্যাচের মতো উড়ন্ত সূচনা করদে পারেননি। ৩০ বল খেলে ১৯০ রান করেন।
তামিমের রান আউট এনামুল হক বিজয় ৭১ বলে চারটি ছক্কা ও ছয়টি চারে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে পুষিয়ে দিলেও রানের চাকা মন্থর হয়ে পড়ে। এই মন্থর হওয়ার কারণ তামিমের রান আউটের পরপরই বিপদ আরও ঘনিভুত হওয়া। ইভান্ত তার এক ওভারেই ফিরিয়ে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিমকে। দুই জনেই কোনো রান করতে পারেননি। নাজমুল আবার প্রথম বলেই ফিরে গিয়েছিলেন। মাত্র আট বলে ছয় রানে নেই তিন উইকেট। এই চাপ পরবর্তী সময়ে ইনিংসের বাকিটা পথই বহন করতে হয়েছে দলকে। যে কারণে ব্যাটিং পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে রান আসে তিন উইকেটে ৪৭। প্রথম দুই ম্যাচে রান ছিল বিনা উইকেটে ৫১ ও ৬২।
আট বলে ছয় রানে তিন উইকেট হারানোর ধাক্কা এনামুল ও মাহমুদউল্লাহ সামলে উঠেন চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৭২ রান যোগ করে। কিন্তু এর জন্য মূল্য দিতে হয় অনেক। ওভার ব্যয় হয় ১৫টি। এ সময় ২৪.৪ ওভার বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় চার উইকেটে ১২৪। জুটি ভাঙে এনামুল হক বিজয় আউট হলে । তিনি ফিফটি করেন ৪৮ বলে। সিরিজে এটি তার দ্বিতীয় ফিফটি আর ক্যারিয়ারে পঞ্চম। জংওয়ের বলে খোঁচা দিতে গিয়ে উইকেটের পেছনে তিনি অভিষিক্ত উইকেট কিপার ক্লাইভ মাদেন্দের হাতে ধরা পড়েন। এরপর পঞ্চম উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ ৪৯ রান যোগ করেন। কিন্তু সেখানেও বলের ব্যবহার ছিল খুব বেশি ৯.৪টি।
মাহমুদউল্লাহ ৬৯ বলে ৩৯ রান করে এনগ্রাভার অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে অহেতুৃক খেলতে গিয়ে প্লেইড অন হয়ে যান। দলের রান তখন পাঁচ উইকেটে ১৭৩। এরপর রান যা সংগ্রহ হয়েছে সবটুকুই ছিল আফিফের কৃতিত্ব। ৫৮ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি সেই ফিফটিকে ক্যারিয়ারে সেরা ইনিংসে পরিণত করেন ৮১ বলে দুই ছক্কা ও ছয় চারে ৮৫ রানের অপরাজিত থেকে। জিম্বাবুয়ের হয়ে দুইটি করে উইকেট নেন ব্র্যাড ইভান্স ও লুক জংয়ে।
এমপি/এমএমএ/