কঠিন সময়ে বাংলাদেশের ৪০০তম ম্যাচ
বল বীর,বল উন্নত মম শির—এই উন্নত মম শির ছিল বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটে। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে যখন বাংলাদেশের নাজকু অবস্থা হারতে হারতে তলানিতে, তখন ওয়ানডেতে দাপুটে বিচরণ। একের পর এক সিরিজ জয়। সেই ওয়ানডে ক্রিকেটে হঠাৎ ছন্দ পতন। এই ছন্দ পতন ঘটিয়েছে পুচকে জিম্বাবুয়ে। আকাশে উড়তে থাকা বাংলাদেশকে তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেই কাবু করে বাংলাদেশের ডানা ভেঙে দিয়েছে।
আজ সিরিজের শেষ ম্যাচ বাংলাদেশ খেলতে নামবে নিজেদের হোয়াইটওয়াশ এড়াতে আর জিম্বাবুয়ে চাইবে তা গলায় পড়িয়ে দিতে। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির মতো ওয়ানডে ক্রিকেটেও দুঃসময়। এমন একটি ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ আজ খেলতে নামবে নিজেদের ৪০০শতম ওয়ানডে ম্যাচ। জয়ের বর্ণিল উৎসবে রঙিণ হবে, না কি আরেকটি হারের আঁধারে ডাকা পড়বে মাইল ফলকের ম্যাচটি?
উইন্ডিজ সফরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার পর, যখন জিম্বাবুয়েতে এসেছিল, তখনই জানা ছিল এই সিরিজের শেষ ম্যাচে হবে বাংলাদেশের ৪০০তম। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে হওয়াতে জয়ের পাশাপাশি হোয়াইটওয়াশ করেই উৎসব করার ভাবনা ছিল সবার অন্তরেই। সেখানে আজ উল্টো পরিস্থিতি। নিজেরাই এখন হোয়াইওয়াশ হওয়ার শঙ্কায়। সেই শঙ্কা এড়ানোই বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য। লক্ষ্য পূরণ হলে আসবে জয়। বর্ণিল হবে ৪০০তম ম্যাচ খেলা।
ওয়ানডে ক্রিকেটের পথ শুরু হয় ১৯৭১ সালে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ দিয়ে। বাংলাদেশের পথ চলা শুরু হয় ১৯৮৬ সালে এশিয়া কাপ দিয়ে। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার আগে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিচরণের ক্ষেত্রই ছিল এই এশিয়া কাপ। প্রতি দুই বছর পর পর একটি আসর বাংলাদেশকে সুযোগ করে দিত ওয়ানডে ম্যাচ খেলার। বাংলাদেশ প্রথম ১০টি ম্যাচ খেলতে তাই সময় লেগে যায় ১০ বছর। ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর এই ধীরগতি আর থাকেনি। সেখানে জোয়ার তৈরি হয়। কারণ প্রতিটি দ্বি-পাক্ষিক সিরিজেই অন্তত তিনটি করে ওয়ানডে ম্যাচ থাকত। যে কারণে প্রথম ম্যাচ খেলতে যেখানে সময় লেগেছে ১৬ বছর, সেখানে পরের ৫০ ম্যাচ খেলেছিল ২৬ মাস। ১০০ থেকে ১৫০ ম্যাচ খেলেছে ২৭ মাসে, পরের ৫০ খেলেছে ২৮ মাসে। এভাবেই এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। আজ ৪০০তম ম্যাচ খেলতে সময় নিয়েছে ৩৬ বছর পাঁচ মাস।
ওয়ানডে ক্রিকেটে ৪০০তম ম্যাচ খেলা বাংলাদেশ ১০ম দেশ। আগের ৯টি দেশ হলো টেস্ট খেলুড়ে সবাই। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে ভারত ১০০৮টি। হাজারের উপর ম্যাচ খেলা একমাত্র দেশও ভারত। তাদের পেছনেই আছে ৯৬৬টি ম্যাচ খেলে অস্ট্রেলিয়া। এরপর পর্যায়ক্রমে আছে পাকিস্তান ৯৪২টি,উইন্ডিজ ৮৪৯টি, শ্রীলঙ্কা ৮৭৫টি, নিউ জিল্যান্ড ৭৮২টি, ইংল্যান্ড ৭৭০টি, দক্ষিণ আফ্রিকা ৬৪৪টি ও জিম্বাবুয়ে ৫৪৬টি।
বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ খেলেছিল ১৯৮৬ সালের ৩১ মাচ পাকিস্তানের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার মুরাতোয়াতে। হেরেছিল সাত উইকেটে। হার দিয়ে পথচলা শুরু করা বাংলাদেশ দল আজ ৪০০তম ম্যাচে কী করবে তা বলা মুশফিল। কিন্তু ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০ এ রকমম মাইলফলকের ম্যাচ গুলোতে বাংলাদেশের আবার আছে জয়-পরাজয়ের মিশ্র অনুভুতি।
২০০২ সালে ৫০তম ম্যাচ খেলেছিল আবারো পাকিস্তানের বিপক্ষে। আবারো হার। এবার আট উইকেটে। ভেন্যু ছিল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম। কিš‘ শততম ম্যাচে জয় পেয়েছিল ভারতের বিপক্ষে। ভারত অবশ্য আজকের মতো সে সময় ততোটা শক্তিশালী ছিল না। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ২০০৪ সালে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে বাংলাদেশ জয়ী হয়েছিল ১৫ রানে। এই জয়ের ধারা বাংলাদেশের অব্যাহত ছিল ১৫০ ২০০তম ম্যাচে। ২০০৭ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ পোর্ট অব স্পেনে ভারতকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে তাদের বিশ্বকাপ যাত্রা থেকে বিদায়ের ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছিল। ২০০৯ সালে উইন্ডিজকে ২০০তম ম্যাচে হারিয়েছিল ডোমিনিকায় তিন উইকেটে।
২৫০ ও ৩০০তম ম্যাচে বাংলাদেশ আবার জিততে পারেনি। ২০১১ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছিল ২৫০তম ম্যাচ পাঁচ উইকেটে। ৩০০তম ম্যাচে হারের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে মেলবোর্নে হেরেছিল ১০৯ রানে। ৩৫০তম ম্যাচে বাংলাদেশ আবার জয় পেয়েছিল মিরপুরে জিম্বাবুয়েকে ২৮ রানে হারিয়ে। সেই জিম্বাবুয়েই আজ আবার ৪০০তম ম্যাচের প্রতিপক্ষ।
বাংলাদেশ ৩৯৯ ম্যাচ খেলে জয় পেয়েছে ১৪৩টিতে, হেরেছে ২৪৯টি ম্যাচে। সাতটি ম্যাচে কোনো ফয়সালা হয়নি। সবচেয়ে বেশি জয় পেয়েছে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫০টিতে। ম্যাচও বেশি খেলেছে তাদের বিপক্ষে ৮০টি। এ ছাড়া শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৫১, উইন্ডিজের বিপক্ষে ৪৪, নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৮, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৭, ভারতের বিপক্ষে ৩৬, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৪, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২১ ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২১, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১১ ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১০টি ম্যাচ খেলেছে। এর বাইরে আইসিসির সহযোগী সদস্য কেনিয়ার বিপক্ষে ১৪টি, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে চারটি, বারমুদা, কানাডা ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দুইটি করে এবং হংকং ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে একটি করে ম্যাচ খেলেছে।
রানের ব্যবধানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০২০ সালে সিলেটে ১৬০ রানে। উইকেটের ব্যবধানে বড় জয় ৯ উইকেটে। এ রকম জয় আছে ৫ পাঁচটি। দলগত সর্বোচ্চ রান ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আট উইকেটে ৩৩৩। দলগত সর্বনিম্ম রান ৫৮। আছে দুইবার। একবার ঘরের মাঠে ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুরে এরপর ২০১৪ সালে একই ভেন্যুতে ভারতের বিপক্ষে।
ব্যক্তিগত অর্জনে এগিয়ে আছেন তামিম ইকবাল ৮০৫৫ রান করে সবার উপরে তিনি। আবার তার ১৪টি সেঞ্চুরিও সবচেয়ে বেশি। হাফ সেঞ্চুরিতেও তিনি এগিয়ে। তার হাফ সেঞ্চুরি ৫৫টি। তবে ম্যাচ বেশি খেলেছন মুশফিকুর রহিম ২৩৫টি। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান লিটন দাসের জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০২০ সালে সিলেটে ১৭৬ রানের ইনিংস।
উইকেট পাওয়ার দিক দিয়ে সবার উপরে সাকিব আল হাসান। ২২১ম্যাচে তার উইকেট ২৮৫টি। ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেয়ার দিক দিয়েও এগিয়ে। ৯ বার তিনি এই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। হ্যাটট্রিক হয়েছে পাঁচটি। তারা হলেন শাহদাত হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, রুবেল হোসেন, তাইজুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ।
অধিনায়কের পালাবদল হয়েছে ১৪বার। এখানে সবচেয়ে সফল মাশরাফি। তিনি ৮৮ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে জয় এনে দিয়েছেন ৫০টিতে।
এমপি/আরএ/