এবার বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজ গচ্ছা
টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর এবার বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজেও গচ্ছা দিল জিম্বাবুয়ের কাছে। টি-টোয়েন্টি সিরিজ হেরেছিল শেষ ম্যাচে। নিজেদের সেরা ফরম্যাটে সিরিজ হেরেছে প্রথম দুই ম্যাচেই। বাংলাদেশের করা ৯ উইকেটে ২৯০ রান জিম্বাবুয়ে অতিক্রম করে ১৫ বল ও পাঁচ উইকেটে হাতে রেখে। প্রথম ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরি করেছিলেন ইনোসেন্ট কাইয়া ও সিকান্দার রাজা। আজ জোড়া সেঞ্চুরি করেন অধিনায়ক রেজিস চাকাভা ও সিকান্দার রাজা।
প্রথম ম্যাচে ২০১৩ সালের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ে পেয়েছিল প্রথম জয়। এবার ২০১৩ সালের পর পেল প্রথম সিরিজ জয়ও।
জিম্বাবুয়ে সিরিজ জিতেছে দ্বিতীয় ম্যাচকে অনেকটা প্রথম ম্যাচের কার্বন কপি বানিয়ে। এই দুই ম্যাচের মাঝখানে যোগ করা যায় একটি শব্দ ‘আবারও’। জিম্বাবুয়ে আবারও টস জিতে। আবারও নেয় রান চেজ করার সিন্ধান্ত। আবারও রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই পড়ে বিপদে। প্রথম ম্যাচে ছয় রানে হারিয়েছিল দুই উইকেট। এই ম্যাচে ১৩ রানে হারায় দুই উইকেট। আবারও পরে দাঁড়িয়ে যান দুই ব্যাটসম্যান। প্রথম ম্যাচে ছিল চতুর্থ উইকেট জুটিতে, এই ম্যাচে পঞ্চম উইকেট জুটিতে। প্রথম ম্যাচে জুটিতে রান এসেছিল রেকর্ড ১৯২ রান। এই ম্যাচেও রেকর্ড ২০১ রান। আবারও জোড়া সেঞ্চুরি করেন ব্যাটসম্যানদ্বয়। প্রথম ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছিলেন ইনোসেন্ট কাইয়া (১১০) ও সিকান্দার রাজা (১৩৫*)। এই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন অধিনায়ক রেজিস চাকাভা (১০২) ও সিকান্দার রাজা (১১৭*)। আবারও সিকান্দার রাজা সেঞ্চুরি করে অপরাজিত থাকেন। আবারো তিনি ম্যাচ সেরা হন। প্রথম ম্যাচে তিনি জীবন পেয়েছিলেন ৪৩ রানে। এই ম্যাচে ৪২ রানে। প্রথম ম্যাচ জিতেছিল ১০ বল হাতে রেখে পাঁচ উইকেটে। এই ম্যাচ ১৫ বল হাতে রেখে পাঁচ উইকেটে। প্রথম ম্যাচে জয় এসেছে ছক্কায়। এই ম্যাচে চারে।
ম্যাচটি বাংলাদেশের কাছেও কার্বন কপি ছিল। মিল ছিল- দুই ম্যাচই তারা হেরেছে! দুই ম্যাচেই সিকান্দার রাজাকে জীবন দিয়েছে। প্রথম ম্যাচ অবশ্য ইনোসেন্ট কাইয়াও জীবন পেয়েছিলেন।
বাংলাদেশের বিপেক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর ওয়ানডে সিরিজও জিতে নিয়ে জিম্বাবুয়ে যেন নিজেদের ক্রিকেটের সুদিন ফেরারই আভাস দিল। বিশেষ করে ওয়ানডেতে। তারা শুরুতেই যেভাবে ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়ে সেখান থেকে ম্যাচ বের করে নিয়েছে। প্রথম ম্যাচের তুলনায় দ্বিতীয় ম্যাচের পরিস্থিতি ছিল বেশি বাজে।
প্রথম ম্যাচে তৃতীয় উইকেট হারিয়েছিল ৬২ রানে। এই ম্যাচে ২৭ রানে হাারয় তিন উইকেট। এই তিন উইকেটের একটি ছিল আবার আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইনোসেন্ট কাইয়ার। ১৬ মাস পর ওয়ানডে ক্রিকেটে ফিরেই হাসান মাহমুদ তার প্রথম দুই ওভারেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তাকুদজওয়ানসি কাইটানো ও ইনোসেন্ট কাইয়াকে। এরপর তাইজুল ইসলাম বল হাতে নিয়েই ফিরিয়ে দেন ওয়েসলি মাধেভেরেকে। দলের রান তখন ২৭। ব্যাটিং পাওয়ার প্লের ১০ ওভারে রান আসে মাত্র ৩০। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। দলীয় ৪৯ রানে তাদিওয়ানাসি মারুমানিকে (২৫) মেহেদি হাসান মিরাজ ফিরিয় দিলে জিম্বাবুয়ে পুরোপুরি ব্যাকপটুটে চলে যায়। ওভার ১৫টি শেষ। এবার বাংলাদেশ ঠিকই অংক মেলাতে শুরু করে জয়ের। আসবে সিরিজে সমতা। প্রথম ম্যাচে ৩০৩ রান করে জিততে না পারলও এই ম্যাচে ১৩ রান কম টার্গেট থাকলেও জিম্বাবুয়ের অবস্থা ছিল বেশি শোচণীয়। কিন্তু সিকান্দার রাজা এই অংক মেলাতে দিতে বড্ড বেশি রাজি ছিলেন না। এবার সঙ্গী হিসেবে পেয়ে যান স্বয়ং অধিনায়ক রেজিস চাকাভাকে। ব্যাস শুরু হয় দুই জনের রান করার নৃত্যানন্দ। তবে এই নৃত্যানন্দ থেমে যেতে পারত যদি ৪২ রানে মিরাজের ভুলে সিকান্দার রাজা জীবন না পেতেন। মিরাজের বলে সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন সিকান্দার রাজা। কিন্তু শরিফুল তা নাগাল পাননি। এর মাঝে নন স্ট্রাইকিং প্রান্ত থেকে চলে আসেন চাকাভা। পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজাও দৌড় দেন। কিন্তু তিনি পৌছার আগেই শরিফুলের থ্রো থেকে মিরাজ স্ট্যাম্পও ভেঙে দেন। কিন্তু তারপরও তিনি বেঁচে যান। কারণ মিরাজ বল হাতে নিয়ে স্ট্যাম্প ভাঙার আগেই অপর হাত দিয়ে ভেঙে ছিলেন স্ট্যাম্প। বেশ কয়েকবার টিভি রিপ্লে দেখার পর রাজাকে ‘নটআউট’ ঘোষণা করা হয়। জীবন পেয়ে রাজাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। দলকে জয়ী করে বিজয়ীর বেশেই ফেরেন ড্রেসিং রুমে।
কিন্তু এতো সহজেই কী রাজা পৌঁছে গিয়েছিলেন সাফল্যোর বন্দরে। বিপর্য়য় রোধ করতে তিনি শুরুতে ছিলেন খুবই সাবধানী। এক পর্যায়ে তার রান ছিল ৩০ বলে ১৪। সেখান থেকে তিনি সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে বদলাতে থাকেন। হাফ সেঞ্চুরি করেন ৬৭ বলে। ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নেন ১১৫ বলে। শেষ পর্যন্ত ১২৭ বলে চার ছক্কা ও আট বাউন্ডারিতে ১১৭ রান করে অপরাজিত থাকেন। রেজিস চাকাভা ছিলেন আবার শুরু থেকেই মারমুখি। হাফ সেঞ্চুরি করেন রাজকীয় ঢংয়ে তাসকিনকে পরপর চার বাউন্ডারি মেরে ৩৬ বলে। সেই ওভারে তাসকিন দেন ১৮ রান। এর আগে পাঁচ ওভারে তিনি দিয়েছিলেন ১৮ রান। চাকাভা তার ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেন ৭৩ বলে। সেঞ্চুরি করার পর আর বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। ১০২ রানে তাকে ফিরিয়ে দেন মিরাজ। তার ৭৫ বলের ইনিংসে ছিল দুইটি ছক্কা ও ১০টি চার। তাদের পঞ্চম উইকেট জুটিতে ২০১ রান বাংলাদেশর বিপক্ষে যেকোনো দেশের সর্বোচ্চ রান। চাকাভা ফিরে গেলেও সিকান্দার রাজা অভিষিক্ত টনি মনিয়োঙ্গাকে নিয়ে বাকি কাজ সারেন সহজেই। জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৪১ রান আসে ৫.২ ওভারে।
মনিয়োঙ্গা আসার পর তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সামনে পড়ে সিকান্দার রাজাও আড়ালে পড়ে যান। মাত্র ১৬ বলে দুইটি করে চার ও ছক্কা মেরে ৩০ রান করে অপরাজিত থাকেন। হাসান মাহমুদ ৪৭ ও মিরাজ ৫০ রানে নেন দুইটি করে উইকেট।
এমপি/টিটিঅ
এমপি/এসজি/টিটি