আগামীকাল সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ওয়ানডে
সেঞ্চুরিয়ান বলেই আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ
নিউ জিল্যান্ডের মাউন্ট মাউঙ্গানুই যেমন বাংলার ক্রিকেটের ইতিহাসে অমুছনীয় হয়ে থাকবে প্রথম ম্যাচ (টেস্ট) জেতার জন্য, তেমনি দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়ানও, যেখানে বাংলাদেশ পেয়েছিল প্রথম ম্যাচে (ওয়ানেড) জয়। প্রথম ম্যাচ জেতার পর বাংলাদেশের দৃষ্টি প্রসারিত হয়ে সিরিজ জয়ে গিয়ে পড়েছে। জিততে চায় সিরিজও। সৃষ্টি করতে চায় আরেকটি নতুন ইতিহাস। কারণ দেশের বাইরে বাংলাদেশের বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ জেতার নজির নেই! জিম্বাবুয়ে ছাড়া উইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জিতলেও উইন্ডিজের সেই দল ছিল দ্বিতীয় সারির। ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জেতার নজির আছে বাংলাদেশের। এবার তার সম্ভাবনা জেগে উঠেছে দক্ষিণ আফ্রিকাতেও। দ্বিতীয় ম্যাচেই বাংলাদেশ সেই স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিল। কিন্তু জোহানেসবার্গে বাংলাদেশের স্বপ্ন ধুলিসাৎ করে দিয়েছিল প্রোটিয়া পেসাররা।
তাই বলে সিরিজ জেতার স্বপ্ন বিলীন হয়ে যায়নি। আগামীকাল শেষ ম্যাচে সেই সম্ভাবনা আবারও জেগে উঠেছে। আবার সেই ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে প্রথম ম্যাচ জেতার ভেন্যু সেঞ্চুরিয়ানে। দিবা-রাত্রির সেই ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল ৭ উইকেটে ৩১৪ রান করে ৩৬ রানে। এই ম্যাচও দিবা-রাত্রির। সেঞ্চুরিয়ান বলেই বাংলাদেশ নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। আত্মবিশ্বাসও বেড়ে গেছে। ম্যাচের আগের দিন দলের প্রতিনিধি হয়ে কথা বলতে আসা মেহেদি হাসান মিরাজও জানিয়েছেন প্রথম ম্যাচের মত ভালো খেলতে পারলে সিরিজ জেতা সম্ভব। তার বলা কথার উল্লেখ্যযোগ্য অংশ ঢাকাপ্রকাশ-এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
সিরিজ জেতার সম্ভাবনা কতটুকু?
মিরাজ: প্রথম ম্যাচে আমরা জিতেছি। খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি। দ্বিতীয় ম্যাচে আমরা সবাই দেখেছি উইকেটের আচরণ ওইরকম ছিল না। উইকেট ভালো থাকলে হয়তো আরও ভালো ক্রিকেট খেলতে পারতাম। তার পরও দিনশেষে আমরা এখনও ম্যাচের ভেতরে আছি। এখনও সুযোগ আছে সিরিজ জয়ের। চেষ্টা করব ভালো ক্রিকেট খেলার জন্য। আমরা যে রকম দলীয় খেলা খেলি, যে রকম জিতে আসছি, আমরা সবাই যদি ভালো ক্রিকেট খেলি, তাহলে জিততে পারি। ওইভাবেই আমরা চেষ্টা করব সবাই।
সাকিবের মানসিক অবস্থা কেমন?
মিরাজ: সাকিব ভাই মানসিকভাবে অনেক শক্ত, আমরা সবাই জানি। পারিবারিক ইস্যু তো অনেক বড় ইস্যু। সবাই সাপোর্ট করছে, সেও অনেক ভালো খেলছে। পরিবার খারাপ থাকলে তো অবশ্যই খারাপ লাগে। সবাই সাপোর্ট করছে।
সেঞ্চুরিয়ানে কী আবারও জেতা সম্ভব?
মিরাজ: ওয়ানডে ক্রিকেটে রান খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০০ রান করে জেতা সম্ভব নয়, বিশেষ করে ওদের মাটিতে। আমরা যদি ভালো একটা স্কোর গড়ি, তাহলে জেতাটা সহজ হয়ে যায়। সবশেষ উইকেট কিন্তু ওরকম ছিল না রান করার মত। অসমান বাউন্স ছিল, বল উঁচু-নিচু হচ্ছিল। এটা ব্যাটসম্যানদের জন্য অনেক কঠিন। উইকেট ভালো থাকলে অন্যরকম চিত্র হতে পারত। এখানকার (সেঞ্চুরিয়ন) উইকেট খুবই ভালো। আমরা যেহেতু প্রথম ম্যাচ খেলেছি, উইকেট ভালো থাকে এখানে, আমাদের আত্মবিশ্বাসও আছে যে তিনশর বেশি রান করেছি এখানে। সবাই দায়িত্ব নিয়ে খেললে অবশ্যই ভালো করা সম্ভব। দেশের বাইরে বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ জেতার রেকর্ড নেই।
এবার কী সম্ভব?
মিরাজ: দেশে অনেক বড় দলের সঙ্গে আমরা সিরিজ জিতেছি। দেশের বাইরে সিরিজ জেতা হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। এরকম একটা কন্ডিশনে যদি আমরা সিরিজ জিততে পারি, তাহলে আমাদের দলের অবস্থা অনেক ওপরে যাবে। অনেক বড় দল তখন আমাদের নিয়ে চিন্তা করব। আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব ভালো ক্রিকেট খেলতে। আমরা যদি এখনই ফল নিয়ে চিন্তা করি যে সিরিজ জিতব বা কী হবে না হবে, তাহলে আমাদের জন্য কঠিন হবে। আমরা যেটা করতে পারি, মাঠে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি, বোলাররা ভালো বোলিং করতে পারি, ব্যাটসম্যানরা রান করতে পারি। দিনশেষে আমাদের পক্ষে থাকলে, সবাই ভালো ক্রিকেট খেললে, ম্যাচটা জিততে পারি। জিততেই হবে এরকম নয়। আমরা চেষ্টা করব ভালো ক্রিকেট খেলতে এবং আমাদের শক্তি অনুযায়ী যেন করতে পারি।
আফিফ আপনার জুটি নিয়ে কী বলবেন? আপনদের মাঝে কী কথা হয়?
মিরাজ: আফিফ খুব ভালো ক্রিকেট খেলছে। খুব ভালো ক্রিকেটার আমি মনে করি। ওর বোধ খুবই ভালো। ও যেখানে ব্যাট করে, সেখানে অনেক কিছু দেওয়ার আছে। আফগানিস্তান সিরিজে যেটা জিতেছিলাম, সেখানে অনেক ভালো ব্যাট করেছে। ওর ব্যাটিং দেখে আমারও অনেক আত্মবিশ্বাস এসেছে। ও সবসময় যেটা করে, সিম্পল থাকার চেষ্টা করে। যখন ব্যাটিং করে, ওই মুহূর্তটাকেই উপভোগ করার চেষ্টা করে। অনেক দূরের চিন্তা করে না। আমি মাঝেমধ্যে একটু দূরের চিন্তা করি। তখন ও আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে যে, ‘ভাই, বেশি চিন্তা করার দরকার নেই। বর্তমানে থেকে যে ক্রিকেট চলছে, যে অবস্থান আছে, সেটা উপভোগের চেষ্টা করি।’ এসবই কথা হয়। ওর সঙ্গে রানিং বিটউইন দা উইকেটও ভালো হয়। গেম প্ল্যানিং নিয়ে আমরা সবসময় কথা বলতে থাকি ম্যচের ভেতর। ও আর আমি যেখানে ব্যাটিং করছি, এটা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে দেখবেন যে, ওর ৩০ রান আমার ২০ রান দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ও সেভাবে মানসিকভাবে প্রস্তুত হচ্ছে, আমিও সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের বোঝাপড়া খুব ভালো।
এমপি/এএস