ইংল্যান্ডের প্রতিরোধ ভেঙে অস্ট্রেলিয়ার জয়
একেই বলে তিন কাঠির খেলা ক্রিকেট। কখন যে রং বদলাবে কেউ বলতে পারবে না। এ রং বদলের কারণে ম্যাচের চিত্রও সম্পূর্ণ বদলে যায়। এ যেমন ব্রিসবেনের গ্যাব্বায় অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের অ্যাসেজ সিরিজের প্রথম টেস্ট। এমনিতে প্রথম দিন থেকে নো-বল বিতর্ক জড়িয়ে আছে। তারপর ব্যাট-বলের লড়াই বেশ জমে উঠেছিল। সেই লড়াইয়ের শেষ হয়েছে চতুর্থ দিন। আর ৯ উইকেটে ম্যাচ জিতে শেষ হাসি হেসেছে অস্ট্রেলিয়া।
কিন্তু তৃতীয় দিন শেষে ম্যাচের যে চিত্র ছিল, তাতে কিন্তু চতুর্থ দিন খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার কোনো আলামত ছিল না। সেখানে ছিল ইংল্যান্ডের প্রতিরোধের ডাক। প্রথম ইনিংসে ২৭৮ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাকফুটে ছিল তারা। সেখানে দ্বিতীয় ইনিংসে প্রয়োজন ছিল ব্যাট হাতে শক্ত অবস্থানে দলকে নিয়ে যাওয়া। সেই কাজটি ভালোভাবেই করেছিলেন দলপতি জো রুট ও ডেবিড মালান।
দুইজনে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৫৯ রান করে অবিচ্ছিন্ন থেকে দিন শেষ করেছিলেন। হাতে ৮ উইকেট। ক্রিজে রুট ৮৬ ও মালান ৮০ রানে অপরাজিত। এ অবস্থায় স্বাভাবিক কারণেই চতুর্থদিন ইংল্যান্ডের হওয়ার কথা। সেঞ্চুরির কাছাকাছি থাকা দুই ব্যাটসম্যানই তিন অংকের ম্যাজিক ফিগারে ছোঁয়ার অপেক্ষায়।
কিন্তু কোথায় কী? দুইজনের কেউ সেঞ্চুরি পাননি। ইনিংসও বেশি দূর যেতে পারেনি। এমনকি ৩০০ রানের গণ্ডিও পার হতে পারেনি। মাত্র ৭৭ রান যোগ করতেই লাঞ্চের আগেই ২৯৭ রানে শেষ হয়ে যায় ইনিংস। প্রথম ইনিংসে করেছিল ১৪৭ রান। ফলে এগিয়ে থাকে মাত্র ১৯ রানে। সেই রান টপকে যেতে লাঞ্চের পর ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিকদের হারাতে হয়েছে মাত্র ১ উইকেট।
ম্যাচের চিত্র এ রকম বদলে ফেলার কারিগর অফ স্পিনার নাথান লিয়ন। ৪ উইকেট তুলে নেন তিনি। স্বাগতিকদের জন্য ‘হুমকি’ হয়ে ওঠা রুট-মালান জুটি ভাঙতে দিনের শুরুতে মোটেই সময় নেননি প্রথম ইনিংসে উইকেট শূন্য থাকা নাথান লিয়ন। মাত্র ২ রান যোগ করেই তিনি মালানকে ড্রেসিং রুমের পথ দেখান। আর এ উইকেট ছিল তার মাইলফলকের উইকেট। খেলতে নেমে ছিলেন ৩৯৯ উইকেট নিয়ে। রুট ছিলেন তার ৪০০তম শিকার। তার এ উইকেট নিয়েই তিনি প্রথম অস্ট্রেলিয় অফ স্পিনার হিসেবে ঢুকে পড়েন ইতিহাসের পাতায়।
দলপতি রুটও বেশি সময় টিকতে পারেননি। তাকে মালানের পথ দেখান পেসার ক্যামেরুন গ্রিন। তিনি যোগ করেন মাত্র ৩ রান। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যানকে দিনের শুরুতেই ফিরিয়ে দিয়ে স্বাগতিক দলের বোলাররা আরো বেশি করে উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। বিপরীতে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং অর্ডারে মনোবল নড়চড় করে দেয়। যে উইকেটে রুট-মালান কাঁঠালের আঠার মতো লেগেছিলেন, তাদের বিদায়ের পর ব্যাটারদের অবস্থান হয়ে ওঠে কচু পাতার পানি। শুরু হয় ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়া। ৬৮ রানে বিদায় নেন বাকি ৬ ব্যাটসম্যান। জস বাটলার করেন ২৩ রান। নাথান লায়ন ৯১ রানে নেন ৪ উইকেট। ক্যামেরুন গ্রিন ২৩ ও পেট কামিন্স ৫১ রানে ২টি করে উইকেট।
জয়ের জন্য ৪৫ রানের লক্ষে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয় নিয়মিত ওপেনার ডেবিড ওয়ার্নারের পরবর্তী অভিষিক্ত উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স হ্যারিকে (৯) গোড়াপত্তন করতে পাঠায়। দলীয় ১৬ রানে তাকেই হারায়। রবিনসের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ ধরেন জস বাটলার। মারানাস লাবুশান জুটি বাঁধলেও কোনো রান করতে হয়নি। ৫ ওভার ১ বলে তারা পৌঁছে যায় লক্ষে।
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে করেছিল ৪২৫ রান। প্রথম ইনিংসে ১৫২ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হয়েছেন ট্র্যাভিস হেড। অস্ট্রেলিয়ার এ জয়ে অ্যালেক্স ক্যারির জন্যও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। অভিষেকেই তিনি ৮টি ক্যাচ ধরে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। প্রথম ইনিংসে তিনটি ক্যাচ ধরার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ধরেন ৫টি। অ্যাসেজ সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ১৬ ডিসেম্বর অ্যাডিলেডে।
এমপি/এসএন