সব ফাঁকিবাজ, রচনায় কোনো তথ্য নাই!
স্কুলে থাকতে বাংলা দ্বিতীয় পত্রে রচনা লিখতে হতো। সিলেবাসে হয়ত ৭/৮টা রচনা দেওয়া থাকত। সেখান থেকেই পরীক্ষায় আসত।
প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় তিনটা রচনা আসবে। যে কোনো একটা লিখতে হবে। সিলেবাসে ৮টা রচনা দেওয়া আছে।
এখন মিনিমাম ৬টা রচনা মুখস্ত করতে হবে, তাহলে প্রশ্নে যাই আসুক, একটা কমন আসবেই।
৬ টার মধ্যে প্রথমেই খুঁজে বের করতাম,
* নৌকা ভ্রমণ
* তোমার জীবনের লক্ষ্য
* বনভোজন
* তোমার স্মরণীয় ঘটনা
* প্রিয় ঋতু
* গৃহপালিত প্রাণী/পোষা প্রাণী
* আদর্শ শিক্ষক -এই জাতীয় রচনা আছে কি না?
এই রচনাগুলোর মধ্যে একটা অন্তমিলও আছে। যেমন ধরেন, নৌকা ভ্রমণ, স্মরণীয় ঘটনা, বনভোজন রচনার ভিতরের ঘটনা সব একই থাকত। শুধু ভূমিকা আর উপসংহার একটু চেঞ্জ করে দিতাম। রচনা শেষ। এর চেয়ে সহজ আর কি হতে পারে!
এখন কেউ কেউ ভাবতে পারেন, নৌকা ভ্রমণ, বনভোজন আর স্মরণীয় ঘটনার মধ্যে মিল কোথায়? অনেক মিল আছে। বলা যায়, পুরোটাই মিল। কারণ আমরা নৌকায় করে যাত্রা শুরু করতাম আর নৌকা ভ্রমণ শেষে বনভোজন করতাম। আর নৌকা ভ্রমণ বলেন কিংবা বনভোজন বলেন, দুইটা মিলেই হয়ে যেত স্মরণীয় ঘটনা।
আর জীবনের লক্ষ্য তো ডাক্তার হওয়া ছাড়া কিছুই ছিল না। ক্লাস নাইনে কমার্স নিয়েছি, তবুও ক্লাস টেনে থাকতে ডাক্তার হব রচনা লিখতাম।
আর বাদ দিতে চেষ্টা করতাম প্রবন্ধ জাতীয় রচনা, যেমন-
* সময়ের মূল্য
* অধ্যবসায়
* মানবজীবন
* সংবাদপত্র
* নিয়মানুবর্তিতা ইত্যাদি।
এইসব রচনার মধ্যে কোনো অন্তমিল নাই। প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা মুখস্থ করা লাগত। অর্ধেক মুখস্থ থাকত, অর্ধেক ভুলে যেতাম। কারণ ভেতরে কোনো ঘটনা নাই। বানিয়ে লেখার সুযোগ নাই। বড়ই কঠিন!
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ৬টা রচনা যেহেতু মুখস্থ করতে হবে, অন্তত দুইটা প্রবন্ধ টাইপের রচনা মুখস্থ করাই লাগত। কারণ সিলেবাসে সবগুলো নৌকা ভ্রমণ কিংবা স্মরণীয় ঘটনা জাতীয় রচনা থাকত না।
সময়ের মূল্য কিংবা নিয়মানুবর্তিতা রচনা মুখস্থ করা কী যে কষ্ট, এটা মাধ্যমিকের ছাত্র ছাড়া কেউ বুঝবে না।
আমি যে স্কুলে পড়তাম, সেই স্কুলের আমাদের ক্লাসের সবাই নৌকা ভ্রমণ টাইপের রচনা লিখতাম। বাংলার শ্রদ্ধেয় মহিউদ্দিন স্যার কিংবা নারায়ণ স্যার বলতেন, যেসব রচনা লিখলে নম্বর বেশি ওঠে, তোরা তো সেসব লিখিস না। সব ফাঁকিবাজ, বানিয়ে রচনা লিখিস, কোনো তথ্য নাই, পড়াশোনার নাম নাই।
আহারে মাধ্যমিকের বাংলা রচনা! শান্তি দিত না।
রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক