বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ | ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

শিক্ষার অহংকার ও আমাদের মানবিক বিপর্যয়!

২০৩০ সালে উন্নত বাংলাদেশ নির্মাণে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যে দিকগুলোর উন্নতি অপরিহার্য তার মধ্যে মানসম্মত শিক্ষা অন্যতম। মানসম্মত শিক্ষা ব্যতীত একটি দেশের সামগ্রিক উন্নতি বাধাগ্রস্থ হয়। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রযন্ত্রের উদ্যোগ ও আন্তরিকতা বিবেচ্য। আর এজন্যই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্র বা সাসটেইনেবল ডেভলপমেন্ট গোলের ১৭ টি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলো মানসম্মত শিক্ষা। এই সময়ের মধ্যে যদি সমগ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা না যায় তাহলে বাকি ইস্যু গুলোর উন্নতি টেকসই হবেনা।

শিক্ষাকে একমুখীকরণ, সংস্কার সাধন এবং সর্বজনীন করার মধ্য দিয়েই এই রাস্তা তৈরি হতে পারে। কিন্তু বিগত দুই দশক ধরে শিক্ষা ব্যবস্থায় চলমান নানা উদ্যোগ, পোষ্টমর্টেম, পরিবর্তন, পরিবর্ধন পরিমার্জন সংকোচন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে যা কাক্ষিত মানসম্মত শিক্ষার লক্ষ্যকে শুধু প্রশ্নবিদ্ধ করেনি করেছে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ।

সবশেষ ২০২২ সালে এস,এস,সির ফলাফল প্রমাণ করে সরকার শিক্ষায় হাইব্রিড অর্জনের কোন রাস্তা আর বাকি রাখেনি। মান অর্জনের জায়গায় আমরা শুধু কিছু সংখ্যার উন্নতি দেখে অভ্যস্ত হয়েছি। আর এটাকে আমরা মনে করেছি শিক্ষার উন্নতি, প্রকৃত উন্নতি। তবে শিক্ষার উন্নতি সবসময় ধান গাছের মত দৃশ্যমান হয় না এটা কখনও কখনও ওল গাছের মতও হয়। আমাদের শিক্ষার উন্নতি ধান-গমের মত দৃশ্যমান কিন্তু সেটা কতটুকু টেকসই আমরা কি ভেবেছি কখনো? শিক্ষায় সংস্কৃতিতে, কাঙ্খিত সমাজ পরিবর্তনের প্রতিফলন আসে শিক্ষার মধ্য দিয়ে আর এটাই শিক্ষার চূড়ান্ত রূপ।

শিক্ষার এই সংখ্যা তাত্বিক বিশ্লেষণ প্রমাণ করে আমরা স্থায়ীভাবে কেরানি তৈরির জন্য কতটা উদগ্রীব। ব্রিটিশ পাকিস্থান এমনকি বাংলাদেশ পর্বে এসেও সরকারের অনুগত কর্মচারী শ্রেণি, কেরানি তৈরি করা ছাড়া শিক্ষায় মৌলিক পরিবর্তনের কোনো অনুসঙ্গ যোগ করতে পারিনি। ঔপনিবেশিক আমলের শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে হাল আমলের শিক্ষাব্যবস্থার আসলে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই।

সনদ সর্বস্ব শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সুশীল সমাজের চিৎকার বহুদিনের। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় যে ছাত্র নকল করিল আর যে ছাত্র মুখস্থ করিয়া মগজে ভরিয়া খাতার উপর বমি করিল, সেই বা কম কি করিল! পড়া মুখস্থ কর, পরীক্ষা দাও, ভালো চাকরি পাও, বিলাসী জীবন কাটাও, এখন পর্যন্ত আমরা শিক্ষার এই সংকীর্ণ ধারণায় আটকে আছি। আত্মশক্তি অর্জনই যে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য সেই চিন্তা থেকে আমরা আজ বহুদূরে। শিক্ষা যে প্রদীপ শিখা, পরশ পাথর এবং এই তত্বদিয়ে বৃহৎ পরিসরে পরিবর্তন, বিপ্লব আনা সম্ভব, রাষ্ট্র, সমাজ দেশ, জাতিকে উন্নতির চরম শিখরে উঠিয়ে আনা সম্ভব সেই চিন্তা এখন সুদূর পরাহত। পৃথিবীর বহুদেশ শিক্ষা দিয়ে সেই পরিবর্তন এনছেন এখনো আনছেন। বলা হচ্ছে একুশ শতকে শিক্ষায় রাষ্ট্রের সামাজিক রাজনৈতিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রধান অস্ত্র। রেনেঁসাস মানুষ তৈরির মূল হাতিয়ার শিক্ষা, এই চেতনা আজ নির্বাসিত। প্রকৃত শিক্ষার উদ্দেশ্য থেকে আমাদের দূরত্ব যোজন যোজন। একজন শিক্ষিত মানুষ নিজের পাশাপশি জাতি, সমাজ নিজের বিশ্বাসকে এগিয়ে নেয়, মানবতার জন্য বেদনা অনুভব করবে এমন প্রবণতা এখানে অনুপস্থিত। শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আমাদের শিক্ষার অহংকার তৈরি হয়েছে, পাশাপাশি সমাজের মানবিক, নৈতিক, উন্নতি না হয়ে ঘটেছে উল্টো বিপর্যয়। শিক্ষায় বিনিয়োগের কোনো সুফল আসেনি।

আগের তুলনায় আমাদের দেশে এখন মেধাবীর সংখ্যা অনেক বেশি। ২০০১ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের দেশে শুধু এ প্লাস পেয়েছে ১৭ লাখ ২৫ হাজার ৬০৯ জন। মেধাবী মানুষে ভরে গেছে দেশ, নেই আলোকিত মানুষ; অথচ শিক্ষা তৈরি করে আলোকিত মানুষ, রেনেঁসাস মানুষ।
অ্যারিষ্টটল, প্লেটো, কিংবা ইমানুয়েল কান্ট, হেগেল, জেরেমি বেস্থাম থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ কিংবা আধুনিক শিক্ষাবিজ্ঞানীরা শিক্ষার এই দৃশ্যমান উন্নতির কথা বলেননি। আত্বিক উন্নতির পাশাপাশি প্রয়োজনের শিক্ষাও দরকার, কিন্তু প্রথম বিষয়টিকে উপেক্ষা করে নয়। একটু পরিসংখ্যান দেখলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।

২০০১ সালে প্রথম গ্রেডিং পদ্ধতির মধ্যদিয়ে দেশে পরীক্ষা ব্যবস্থায় নতুন এক পুনর্জাগরণের আভাস আমরা দেখতে পায় এবং সে বছর সারা দেশে যেভাবে জি,পি,এ’র উত্থান আমরা দেখি। সে ধারা এখনও অব্যহত আছে পুর্বের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে। ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশে মেধাবী না বাড়লেও বেড়েছে এ প্লাস এর সংখ্যা। গ্রেডিং পদ্ধতির প্রারম্ভে ২০০১ সালে যেখানে সারাদেশে মোট ৭৬ জন এ প্লাস পায়, সেখানে ২০০২ সালে এসে জ্যামিতিক হারে এই সংখ্যা বেড়ে ৩২৭ এ দাঁড়ায়।

২০০৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৮৯, ২০০৪ সালে ৮৫৯৭, ২০০৫ সালে ১৫৬৩১, ২০০৬ সালে ২৪ ৩৮৪, ২০০৭ সালে ২৫৭৩২, ২০০৮ সালে ৪১৯১৭, ২০০৯ সালে ৪৫৯৩৪, ২০১০ সালে ৫২১৩৪, ২০১১ সালে ৬২২৮৮, ২০১২ সালে ৮২২১২, ২০১৩ সালে ৯১২২৬, ২০১৪ সালে ১৪২২৭৬, ২০১৫ সালে ১১১৯০১, ২০১৬ সালে ১০৯৭৬১, ২০১৭ সালে ১০৮৭৬১, ২০১৮ সালে ১১০৬২৯, ২০১৯ সালে ১০৫৫৯৪, ২০২০ সালে ১৩৫৮৯৮, ২০২১ সালে ১৮৩৩৪০ এবং এভাবে চলতে চলতে সর্বশেষ ২০২২ সালে এসে সেটা দাঁড়ায় ২ লক্ষ ৬৯ হাজার ৬০০২ জন। প্রায় ২০ লাখের অধিক ছাত্র-ছাত্রী পরীক্ষা দিয়ে ১৮ লাখ ৮১ ৬০০ জন শিক্ষার্থী পাস করে, পক্ষান্তরে ফেলের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ১৮ হাজার ৪০০ জন। দুই দশকের ব্যবধানে দেশে জ্যামিতিক হারে শুধু মেধাবীর সংখ্যা বাড়েনি; পাসের হার ছাড়িয়ে গেছে অতীতের সব রেকর্ড। সবমিলিয়ে ২২ বার দেশে অনুষ্ঠিত পাবলিক পরীক্ষায় কথিত এ প্লাস ধারীর মোট সংখ্যা ১৭ লাখ ২৫ হাজার ৬০৯ জন।

মেধাবী শিক্ষাথীতে ভরে গেছে দেশ, শূন্যতা রয়েছে ফলাফলে। শিক্ষার্থীদের শুধু শুধু নাম্বার দেওয়ার প্রবণতা, খাতামূল্যয়নে শৈথিল্য প্রদর্শন, শিক্ষা ব্যবস্থায় সৃজনশীলতার নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি এমন কা-ের মূল কারণ। উদ্দেশ্যহীনভাবে এভাবে সনদ দেওয়ার প্রবণতা শিক্ষা ব্যবস্থায় বহুমাত্রিক সমস্যা তৈরী করেছে এর মধ্যে বেকারত্ব অন্যতম। শুধু শুধু পাশ করিয়ে দিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে ধবংশের পায়তারা চলছে অনেকদিন ধরেই তা না হলে এই নাম্বার দেওয়ার কোন উদ্দেশ্য আছে কি না সেটা বোধগম্য নয়। দক্ষিন আফ্রিকায় পরিচালিত এক গবেষণা বলছে পুরো জাতিকে ধ্বংস করার জন্য শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় নকল করার সুযোগ তৈরি অথবা অতিরিক্ত নাম্বার দেওয়ার প্রবণতা যথেষ্ট। এজন্য শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের প্রয়োজন হয় না। টি, আই,বি, এডুকেশন ওয়াচসহ বেশ কয়েকটি বিদেশি দাতা গোষ্ঠীর গবেষণা বলছে দেশে অশিক্ষিত বেকারের চেয়ে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অধিক। আর এই সংখ্যা ২৬ লাখের অধিক। প্রতিবছর মোট এই সংখ্যার সঙ্গে আরও যোগ হচ্ছে নতুন শ্রমশক্তি। যারা শিক্ষিত হয়ে নতুন চাকরির শ্রম বাজারে ঢুকে সমস্যা তৈরি করছে। শুধু পাশ করালেই সমাধান আসে না নাগরিকদের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সংবিধান প্রদত্ত নাগরিকের এই অধিকার নিয়ে রাষ্ট্রের কোনো মাথাব্যথা আছে কি না সেটা ভাববার বিষয়। শুধু পাশ করালে সংকট আরও বাড়ে যা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। আমরা ৯০ দশকের কোেো পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখি ১৯৯০ সালের ৪ বোর্ড মিলিয়ে সম্মিলিত পাসের হার ছিল ৩১ দশমিক ৭৩ শতাংশ, মোট পরীক্ষার্থীর প্রায় ৬৯ শতাংশ ফেল করে। বলা চলে চার লাখের মতো শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩ লাখই ফেল করে। শিক্ষার মান সে সময়ে ভালো না হলেও খারাপ ছিল না। থাকলেও এতটা বিতর্কিত ছিল না। আজকের বাস্তবতায় ২০২২ সালে প্রায় ২০ লাখের অধিক পরীক্ষা দিয়ে ১৮ লাখ ৮১ হাজার ৬০০ অধিক পাস করাটা আশ্চর্য্যের বটে। ফেল করেছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৪০০ । ৯০ দশকের তুলনায় পুরোপুরি উল্টো চিত্র দেখি আমরা। আর এখানেই আছে যত সমস্যা। ২০২২ সালে পাঁচ লাখের বেশি শিক্ষার্থী স্কুল ফাইনাল দেয়নি, পরীক্ষায় অনুপস্থিতির হার অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে।

উদ্দেশ্যহীনভাবে অবিবেচকের মতো পাশ করিয়ে দেওয়ার প্রবণতা, গণতন্ত্রের মতো মানের চেয়ে সংখ্যাকে সমাধান মনে করার অপচেষ্টাই এমন এ প্লাস জোয়ারের জন্য দায়ী। ৮৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে বিষয়ভিত্তিক গণিত ও ইংরেজির শিক্ষক সংকট। আর এসব কারণ শিক্ষার জন্য ভালো লক্ষণ নয়। এই পাশ করা তথ্য আর সংখ্যার উন্নতি ক্রমাগত আমাদের পিছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, ঘটেছে আমাদের মানবিক বিপর্যয়। সংখ্যাতত্বে শিক্ষার অহংকার বেড়েছে পাশাপাশি বেড়েছে অনিশ্চয়তা আর দুঃচিন্তা। রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা আর শিক্ষাকে পণ্য করার ফলে এই প্রবণতা এখন সর্বগ্রাসী। সামনের দিকে রাষ্ট্রের তথাকথিত এই শিক্ষা সামগ্রিক উন্নতি আরও বেশি বাধাগ্রস্ত করবে এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না । নতুন প্রজন্মের বি,সি,এস মুখিতা বিশেষ করে প্রশাসক তৈরি, কেরানি তৈরির নীলনকশা ছাড়া এই শিক্ষাব্যবস্থায় অন্যকিছু আছে কি না সেটা প্রশ্নবিদ্ধ! শিক্ষার উন্নতির গ্রাফ এখন নিম্নগামী। এই রাষ্ট্র মেধাবী জন্ম দিয়েছে নাকি আমরা পরিকল্পিত ভাবে তাদের সংখ্যা বাড়িয়েছি। শিক্ষায় মানবিক উন্নতির যে স্বপ্ন আমরা দেখি সেটা অধরা। শিক্ষায় যেভাবে আমাদের অহংকার বেড়েছে সেভাবে মানসিকতার উন্নতি আসেনি। আসলে সত্যিকার অর্থেই এই দেশ একদিন সোনার দেশে পরিণত হত। কল্যাণকর, গণতান্ত্রিক, মানবিক রাষ্ট্র তৈরির সম্ভাবনা শিক্ষাব্যবস্থায় রাখার প্রয়োজন ছিল সেটা হয়নি। ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে শিক্ষা আইন প্রণয়নের মাধ্যমে শিক্ষায় জমে থাকা সকল সমস্যা সমাধানের কথা বলা হলেও সেটা হয়নি।

আগামীতে সেটার সম্ভাবনা কতটুকু সেটা বিবেচ্য বটে। অতি সাম্প্রতিক কালে সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীসহ কয়েকজন শিক্ষাবিদ শিক্ষা সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকটি সুপারিশের কথা বলেছেন। তারা জোর দিয়ে বলেছেন শিক্ষাকে উন্নত যুগোপযোগী করতে সর্বপ্রথম শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, শিক্ষায় বাজেট বৃদ্ধি করে টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ ছাড়া এই মুহূর্তে আসলে দ্বিতীয় কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু কে শোনে কার কথা। শিক্ষাকে পণ্য করা জন্য রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা লক্ষণীয়। রয়েছে সকল ক্ষেত্রে শৃঙ্খখলার অভাব।

পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আকাশটাকে যতটা কাছে মনে হয় আসলে আকাশটা ততটা কাছে নয়। তাই শিক্ষিত হয়ে অনেক সার্টিফিকেট জোগাড় করলেই জ্ঞানী হয়না, এর জন্য বাস্তব বুদ্ধি দিয়ে নিজেকে জানতে হবে। পুঁথিগত বিদ্যা আমাদেরকে বাক্সে বন্দী করে, নিজেকে সমাজে মেলে ধরা, সমাজ সংস্কারক কাজে নিয়োজিত করা প্রকৃত জ্ঞানী ছাড়া কোনো দিন সম্ভবপর নয়। আর জ্ঞানী ব্যক্তি অবশ্যই শিক্ষিত, যেমন শিক্ষিত অন্যদিকে বাস্তববুদ্ধি সম্পর্কে অবগত।

জ্ঞানী ব্যক্তি পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আকাশটাকে সত্যি কাছে করে দিয়েছেন মানবকল্যাণে। সেই শিক্ষা নেই আমাদের তথাকথিত শিক্ষাব্যবস্থায়। শিক্ষিত হয়ে সমাজের কেরানি হওয়া, জ্ঞানের মাধ্যমে সমাজ সংস্কার, বিজ্ঞানের সাধনায় নিয়োজিত রাখা এখন কল্পনাপ্রসূত। অন্যকে জানেন শিক্ষিত, নিজেকে জানেন জ্ঞানী। জ্ঞান ছাড়া শিক্ষা কাজে লাগে না এই মন্ত্র ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াসের বিলোপ সাধন করে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি পোড়ামাটির নীতির দিকে।

তথাকথিত বিনয়, অহংকার ইত্যাদি দিয়ে শিক্ষিত ও প্রজ্ঞাবানদের আলাদা করা খুবই ভ্রান্ত। এটাও কোন চিন্তা না করে প্রচলিত পপুলিস্ট ধারণা আউড়ে যাবার মত হয়। কারণ, যাকে বিনয় বলা হয়, যাকে অহংকার বলা হয় তা সামাজিক কনটেক্সটের উপর নির্ভর করে। এমন ঊষর পরিস্থিতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা কি?

এ প্রসঙ্গে চিন্তাবিদ আহমদ ছফা বেশ দামি একটা কথা বলেছেন শিক্ষা বিষয়ে তিনি আক্ষেপ করে বলেন বড় বড় স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যার চেয়ে অহংকার শেখে বেশি। শিক্ষার আলো মানুষের মনুষ্যত্ব, মানব প্রেম, বিবেককে জাগ্রত করে । আর যারা শিক্ষিত হয়েও অহংকারী হই বুঝতে হবে তারা শিক্ষা অর্জন করেছে শুধু অবস্থার উন্নয়নের জন্য। আর্থিক দৈন্যতা ঘোঁচানোর জন্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ, আলোকায়নের জন্য নয় আর যদি তা না হয় তাহলে এই বঙ্গদেশে শিক্ষা ব্যর্থতার অপর নাম। শিক্ষা এখানে কোনোদিনই হয়ে উঠবে না অস্ত্র যা দিয়ে রাষ্ট্রের সকল পরিবর্তন আনয়ন করা সম্ভব। এই রাষ্ট্রে শিক্ষা হয়ে উঠছে পণ্য যা দিয়ে পরিবর্তনের চেষ্টা চলবে কিন্তু তা কখনই হয়ে উঠবে না। শিক্ষার অহংকার আর মানবিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে এখন সেটাই হচ্ছে।

লেখক: গল্পকার, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষা গবেষক, এ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার।
সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ঝঊউচ) বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র বাংলামোটর, ঢাকা

 

Header Ad

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা

ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২০২৪ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র জনতার বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করেছি। এ নতুন দেশে আমাদের দায়িত্ব সকল মানুষকে এক বৃহত্তর পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ করা। কেউ কারো উপরে না, আবার কেউ কারো নিচেও না, এই ধারণা আমরা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার সাহস ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে সম্প্রতি আমরা অর্জন করেছি, সেটাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই। যে সুযোগ তারা আমাদের দিয়েছে, তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর সামনে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে আমরা শপথ নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করে যারা দেশ গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে জাতি তাদের সারা জীবন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

বক্তব্য শেষে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

Header Ad

নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁ শহরে যানযট নিরসন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। এতে শহরে শৃঙ্খলা ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) অভিযানের উদ্বোধন করেন নওগাঁ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ পরিচালক টি.এম.এ মমিন। এ সময় নওগাঁ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জিয়া উদ্দিন, নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন, নওগাঁ জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক আফজাল হোসেন ও অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অভিযান শুরুর পর থেকেই শহরের বরুনকান্দি, মশরপুর, তাজের মোড় ও কালীতলাসহ মোট ৮ টি প্রবেশদ্বারে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেক পোষ্টগুলোতে ২ জন পুলিশ সদস্য, ২ জন ছাত্র সমন্বয়ক, ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য ও ২ জন রিকশা মালিক শ্রমিক প্রতিনিধিসহ মোট ১২ জন করে কাজ করছেন।

পৌর প্রশাসক জানান, নওগাঁ শহরে বৈধ যানবাহনের সংখ্যা ৪ হাজার। কিন্তু প্রতিদিন পার্শবতী বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ১০ হাজার রিকশা, ব্যাটারী চালিত অটো রিকশা ও ইজিবাইক শহরে প্রবেশ করে। এতে তীব্র যানযট ও জন মানুষের ভোগান্তি তৈরী হয়। এই দূর্ভোগ লাঘোবে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের দিক নির্দেশনায় যানবাহন নিয়ন্ত্রনসহ বিশেষ অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বৈধ চালকদের চিহ্নিত করতে তাদের মাঝে পরিধেয় বিশেষ ধরনের জ্যাকেট প্রদান করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন বলেন, নওগাঁ শহরের যানযট দীর্ঘদিনের সমস্যা। পরিকল্পিত ভাবে এই সমস্যা দূর করতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের উদ্যোগে পৌর কর্তৃপক্ষ ও রিকশা মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের সমন্বয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিভিন্ন ষ্টেক হোল্ডারদের পরামর্শ নিয়ে একটি কর্ম পরিকল্পনা গ্রহক করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, অভিযান সফল ভাবে বাস্তবায়ন হলে শহরে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। জনগন এর সুফল পাবেন। সকলকে এই কার্যক্রমে সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানান তিনি।

Header Ad

২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত

বক্তব্য রাখছেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি নির্বাচন হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের নৌ পরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডক্টর এম সাখাওয়াত হোসেন।

সম্প্রতি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসে মানবাধিকার সংগঠন ‘ভয়েস ফর বাংলাদেশ’ আয়োজিত সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

‘ডিসকাশন অন ডেমোক্রেটিক কলাপ্স অ্যান্ড রিবিল্ডিং অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সম্মেলনে হাউস অব লর্ডসের সিনিয়র সদস্য আলেক্সান্ডার চার্লস কার্লাইল কিউসি সভাপতিত্ব করেন। ভয়েস ফর বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্রডকাস্টার আতাউল্লাহ ফারুকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এম সাখাওয়াত হোসেন।

সম্মেলেনে সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী পল স্কালি বলেন, বাংলাদেশে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে, তার সঠিক তদন্ত শেষে যথাযথ বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে এ ধরনের ঘটনার পুররাবৃত্তি না হয়।

লর্ড হোসাইন বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার সব সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে সব ধরনের সহায়তা পাবে।

সম্মেলনে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান লেবার দলীয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুপা হক।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সশস্ত্র বাহিনীর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে’: প্রধান উপদেষ্টা
নওগাঁ শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু
২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে নির্বাচন হতে পারে: উপদেষ্টা সাখাওয়াত
সেনাকুঞ্জে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে খালেদা জিয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ৫ জনকে রোবটিক হাত উপহার
সেনাকুঞ্জের পথে খালেদা জিয়া
সুযোগ পেলে শেখ হাসিনার পক্ষে মামলায় লড়ব: জেড আই খান পান্না
নির্বাচন কমিশন গঠন, সিইসি হলেন অবসরপ্রাপ্ত সচিব নাসির উদ্দীন
ডিএনএ টেস্টের ফলাফল: ভিনিসিয়ুসের পূর্বপুরুষ ছিলেন ক্যামেরুনের
জামিন পেলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান
বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে আসা সেই শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার
মিরপুর ও মহাখালীতে অটোরিকশা চালকদের সেনাবাহিনীর ধাওয়া
‘শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী’, এমন কথা বলেননি ট্রাম্প
লেবাননে ৮ শতাধিক ইসরায়েলি সেনা নিহত
ভারতে সাজাভোগ শেষে দেশে ফিরল ২৪ বাংলাদেশি কিশোর-কিশোরী
ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি নিহত
সাবেক এমপি শাহজাহান ওমরের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর
১২ বছর পর সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
ধামরাইয়ে শ্রমিকবাহী বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ৪