মুদ্রাস্ফীতি এবং মূল্যস্ফীতি
মুদ্রাস্ফীতি এবং মূল্যস্ফীতি
সারাদিন অফিস শেষে মনজুরুল নিজের রুমে পত্রিকা পড়ছে । ছোট ভাই জহির নিজের রুম থেকে এসে বড় ভাইয়ের রুমে ঢুকল।
নীরবতা ভেঙে জহির প্রশ্ন করল, ভাইয়া! এক কথায় মুদ্রাস্ফীতি বলতে কি বুঝায়?
মনজুরুল: একটি দেশের অর্থনীতিতে মুদ্রার সরবরাহ বা পরিমাণ বেড়ে যাওয়াকে মুদ্রাস্ফীতি বলে।
জহির: আর মূল্যস্ফীতি?
মনজুরুল: একটি নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য বা সেবার মূল্য বেড়ে যাওয়াকে মূল্যস্ফীতি বলে।
জহির: মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে মূল্যস্ফীতির সম্পর্ক কী?
মনজুরুল: মুদ্রাস্ফীতির কারণেই মূল্যস্ফীতি হয়ে থাকে।
জহির: একটু সহজ ভাবে বুঝিয়ে বলো?
মনজুরুল: মনে কর, দেশের অর্থনীতিতে মোট ২০০ টাকা আছে। একইভাবে মনে কর, বাজারে মোট ১০ কেজি চাল মজুত আছে (অন্য কোনো কিছু বিবেচনায় নেব না, অর্থনীতির সকল টাকা চাল কেনার জন্যই বরাদ্দ)। এখন যদি কেউ এক কেজি চাল কিনতে চায়, তাহলে ১ কেজি চালের দাম হবে কত?
জহির: প্রতি কেজি ২০ টাকা।
মনজুরুল: খুবই ভালো। এবার মনে কর, অর্থনীতিতে মুদ্রার পরিমাণ বেড়ে ৪০০ টাকা হয়ে গেল কিন্তু বাজারে চালের মজুত আছে সেই আগের ১০ কেজি। এখন যদি কেউ এক কেজি চাল কিনতে চায়, তাহলে তাকে কত খরচ করতে হবে।
জহির: খুবই সহজ, ৪০ টাকা লাগবে।
মনজুরুল: তুই তো অংকে খুবই পাকা।
জহির: ইয়ার্কি কর না।
মনজুরুল: বিষয়টা হচ্ছে, অর্থনীতিতে যখন মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে যায় কিন্তু পণ্য বা সেবার পরিমাণ আগের মতো একই থাকে, তখন পণ্য বা সেবা বেশি মূল্য দিয়ে কিনতে হয়। আর এই পণ্য বা সেবার মূল্য বেড়ে যাওয়াকে বলে মূল্যস্ফীতি।
জহির: তাহলে, শুরুতেই যেমনটা বলেছিলে, মুদ্রাস্ফীতির ফলেই মূল্যস্ফীতি হয়।
মনজুরুল: হুম, বুঝতে পেরেছিস।
জহির: আচ্ছা, মূল্যস্ফীতি কি ভালো না খারাপ?
মনজুরুল: এখন এই ব্যাখ্যায় যেতে পারব না। এখন ঘুমাব। আরেকদিন বুঝিয়ে বলব। তবে মনে রাখিস, কাম্যমাত্রার মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির জন্য ভালো।
জহির: আচ্ছা, আর প্রশ্ন করব না। আমিও আমার রুমে চলে যাচ্ছি।
লেখক: রিয়াজুল হক, অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এবং যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক