আয়ের কিছু অংশ হলেও সঞ্চয় করুন
প্রায় ছাব্বিশ বছর আগের কথা। সাবিনা বেগম মানুষের বাড়ি বাড়ি ছুটা বুয়ার কাজ করেন। মধ্য বয়সী এই নারীর স্বামী রিকশা চালান। সাবিনা যে বাসায় কাজ করতেন, সে বাড়ির গৃহকর্ত্রী সাবিনাকে ব্যাংকে ডিপিএস খোলার পরামর্শ দিলেন। এতে করে কিছু টাকা ব্যাংকে জমা হবে। পরে একটা কাজে আসবে।
সে সময় যারা কিছুটা বোঝেন অর্থাৎ ১৯৯৬ সালের দিকে, সবাই ডিপিএস খোলার জন্য ব্যাংকের কাউন্টারে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকত। বলা যায়, ডিপিএস খোলার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল সেই সময়। কিন্তু সমস্যা ছিল অন্যখানে। সাবিনা কিংবা তার স্বামী শুধু নাম লিখতে পারতেন। আর কিছুই জানতেন না। যাই হোক, সেই বাড়ির গৃহকর্তা সাবিনা বেগমের স্বামীকে নিয়ে ব্যাংকে যেয়ে ব্যাংকের ফরম পূরণ করে মাসিক ৫০০ টাকার একটি ডিপিএস খুলে দিলেন। পরবর্তীতে তারা লেখাপড়া জানা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে টাকা জমার ফরম পূরণ করে প্রতি মাসে ৫০০ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে আসতেন। এভাবে ১০ বছর প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে জমা দিয়ে ১০ বছর পর তিনি প্রায় ১,২৫,০০০ টাকা পেলেন।
২০০৭ সালে সেই টাকা দিয়েই ছেলেকে সৌদি আরবে পাঠালেন। আস্তে আস্তে তাদের পরিবারের অবস্থা পরিবর্তন হতে থাকে। এখন তাদের অবস্থা পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে গেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, সাবিনা বেগম সেই সময় যদি ডিপিএসটা না করতেন, তবে তাদের পক্ষে একসঙ্গে লক্ষাধিক টাকা জমানো কখনো সম্ভব হতো না। আর ছেলেকে বিদেশে পাঠানো প্রায় অসম্ভব ছিল। প্রতিমাসের সামান্য সঞ্চয় একসময় ভাগ্য ফেরাতে সহায়তা করেছে।
বিপদ-আপদ কখনো বলে কয়ে আসে না। যদি বিপদের সময় কারো সহায়তা পান, তবে অবশ্যই ভালো। কিন্তু যদি না পান, তবে অবশ্যই নিজের সম্বল দিয়েই বিপদ থেকে উতরে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একজন ব্যক্তি ভালো বেতনে চাকরি করেন। কিন্তু আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের অনেক অন্যায় আবদার মেটাতে যেয়ে তার সঞ্চয়ের ঝুলি শূন্য থেকে যায়। বড় ধরনের বিপদে পড়লে, অন্যের অনুগ্রহের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এটা হওয়া উচিত না। আবার অনেকেই আছেন, যারা মাসিক আয় থেকে সামান্য হলেও সঞ্চয় করে থাকেন। সঞ্চয়ের সেই টাকা দিয়েই তারা নিজেদের কিংবা পরিবারের প্রয়োজনের সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। মনে রাখা দরকার, সঞ্চয় ছাড়া আয়ের কোনো মূল্য নেই।
লেখক: রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।
আরএ/