বাড়ির পাশে মাঠ থাকার পরও খেলতে পারেন না স্থানীয় খেলোয়াড়রা
সুনামগঞ্জ পৌরশহরের ষোলঘর ক্রীড়া সংস্থার স্টেডিয়ামে এক সময় ফুটবল-ক্রিকেটসহ নানা ধরনের খেলাধুলা করতেন নানা বয়সী শত শত খেলোয়াড়রা। বছর জুড়েই মাঠে আয়োজন থাকত নানা টুর্নামেন্টের। এই মাঠে জন্ম হয়েছে বড় মাপের শত খেলোয়াড়ের। তবে সময়ের বিবর্তনে আজ সেই মাঠের খেলোয়াড়ের ধস নেমেছে। তার জন্য স্থানীয় খেলোয়াড়রা দায়ি করছেন জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে।
ষোলঘর ক্রীড়া সংস্থার স্টেডিয়ামটি শহরসহ আশপাশ এলাকার কাছে ষোলঘর খেলার মাঠ নামে পরিচিত। স্থানীয় খেলোয়াড়রা অভিযোগ করে জানান, এই মাঠে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার মেলা হয়েছে। মেলার পরে আর যথা সময়ের মধ্যে মাঠ খেলার জন্য প্রস্তুত করা হয়নি। অনুষ্ঠিত মেলার পর মাঠে খেলাধুলার জন্য উপযোগী হতে সময় লাগত বছর খানেকের বেশি। ফলে খেলাধুলার জায়গা না পেয়ে ধীরে ধীরে এই মাঠের খেলোয়াড়রা ঝড়ে পড়েছেন।
তারা আরও জানান, গত কয়েক মাস আগেও প্রায় তিন মাসের জন্য ষোলঘর ক্রীড়া সংস্থার স্টেডিয়াম মাঠটি ছিল মেলার দখলে। দুই মালিকানার দুই মেয়াদে মেলা ছিল প্রায় আড়াই মাস। এ ছাড়া মেলা নির্মাণ ও ভাঙতে সময় খেয়েছে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন। তবে মেলা শেষ হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মাঠ ইটের খোয়া ও খানাখন্দে ভরা। ফেলে রাখা হয়েছে কাচের ভাঙা বোতল, নির্মাণ সামগ্রী লোহা, জিআই তারসহ বালু-সিমেন্টের ঢালাই। দীর্ঘদিন মাঠটিতে না খেলতে খেলতে ঘাস গজিয়ে বেশ লম্বা হয়েছে। তা ছাড়াও মাঠের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হলে গর্তগুলো বৃষ্টির পানিতে ভরে গেলে দেখলে মনে হবে যেনো ছোট-বড় ডোবা। এতে খেলার মাঠটি এখন আর খেলাধুলার জন্য একেবারেই উপযোগী নয়। মাঠের দিকে নজরও নেই জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও প্রশাসনের।
ষোলঘর এলাকার স্থানীয় প্লেয়ার আমজাদ হোসেন বলেন, ষোলঘর মাঠে মেলা হওয়ার পর মাঠের মধ্যে বাশের গর্ত, ইটের খোয়া, কাচ ভাঙা, লোহায় ভরা। আমরা কয়েকদিন আগে মাঠে খেলছিলাম, সেই সময় পায়ে লোহা ঢুকছে, ভাঙা কাচে পা কেটেছে। এখন আমাদের এলাকার বাচ্চারাও খেলতে পারে না। এ ছাড়াও মাঠে মেলার ময়লা-আবর্জনা, সার্কাসের খানাখন্দ, টয়লেট, ঢালাই করা অবস্থায় আছে। কেউ না খেলাতে মাঠের ঘাসও অনেক লম্বা হয়ে গেছে। ঈদের পরে এলাকার ছোট-বড় সবাই মাঠে খেলতে এসে নানা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে। এই মাঠে মেলা হলে দুই-আড়াই বছর পার হয়ে গেলেও মাঠ ঠিক করা হয় না। পরে আর কেউ খবরও নেয় না। আমরা বার বার কর্তৃপক্ষকে আবেদন জানালেও মাঠটা ঠিক করে দেওয়া হয় না।
শাহ আছদ আলী পীর স্পোটিং ক্লাবের ক্যাপ্টেন মো.মুমিনূর রহমান পীর শান্ত বলেন, সুনামগঞ্জ শহরের ভিতরে সরকারি কোনো মাঠ নেই যে মাঠে আমরা খেলোয়াড়রা ১২ মাস খেলাধুলা করব। এটাও সুনামগঞ্জ ক্রীড়া সংস্থার মাঠ (ষোলঘর ক্রীড়া সংস্থা), এই মাঠে যদি ক্রীড়া সংস্থা নিয়মিত খেলার সুযোগ-সুবিধা করে না দেয় তাহলে এসব এলাকা থেকে কোনো খেলোয়াড় তৈরি হবে না, খেলাধুলা ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশেষ করে আমাদের তরুণরা যখন খেলা থেকে বঞ্চিত হবে তখন তরুণরা নেশাগ্রস্ত হবে বা বাজে আড্ডায় তাদের ভবিষ্যত নষ্ট করবে। মাঠে নিয়মিত খেলাধুলার সুযোগ ও মাঠটি যাতে অতিসত্ত্বর সংস্কার করে খেলার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যায় তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করি।
সচেতন মহল মনে করেন, শিশু-কিশোর-তরুণ-তরুণীদের নিয়মিত খেলাধুলা ও শরীর চর্চার সঙ্গে যুক্ত থাকা খুবই জরুরি। খেলাধুলা শুধু বড় বড় ক্লাবে কিংবা জাতীয় দলে স্থান পাওয়া কিংবা প্রতিযোগিতায় নেমে পদক পাওয়ার জন্য নয়। বরং দেহ-মনের সুস্থ-স্বাভাবিক বিকাশের জন্য শিশু-কিশোর-তরুণদের তাতে অংশগ্রহণ অপরিহার্য। সরকার থেকে যদি খেলাধুলার জন্য মাঠের সুযোগ-সুবিধা না করে দেওয়া হয় তাহলে শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-তরুণ ও তরুণীদের মোবাইল আসক্ত, বাজে নেশা, রোগবালাই থেকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। খেলার মাঠ সামাজিকীকরণ বাড়ায় ও উদারচিত্ত হৃদয়ের মানুষ গড়তে সহায়তা করে।
ষোলঘর স্টেডিয়ামে সকাল বিকেল খেলাধুলা করে বড় হয়েছেন সাবেক খেলোয়ার সুয়েব মিয়া আতিক, তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ষোলঘর মাঠটা আমাদের সময়ে খেলার জন্য উপযোগী ছিল কিন্তু বর্তমানে মেলার জন্য মাঠে আর খেলাধুলার পরিবেশ নেই। আমরা চাই মেলা এমন একটা জায়গায় হোক যেখানে বসতঘর বা স্কুল থাকে না। বসতঘর বা স্কুল থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে যেনো মেলার আয়োজন করায় হয়। নয়তো আমাদের পরিবেশের যেমন ক্ষতি হয় তেমনই আমাদের বাচ্চাদের খেলাধুলার অসুবিধা হয়। আমাদের বাচ্চারা নিয়মিত খেলাধুলা ও শরীর চর্চা কার্যক্রমের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত থাকা উচিত। নয়তো দেহ-মনের সুস্থ-স্বাভাবিক থাকবে না।
সাম্প্রতিক সময়ে যেসব কিশোর অপরাধ ও কিশোর গ্যাংয়ের অস্তিত্ব দেখা যায়, তার পেছনে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার অভাব বলে মনে করেন সচেতন মহল। তারা মনে করেন এখনই খেলাধুলার সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নতুন প্রজন্মকে নেশার হাত থেকে রক্ষা করা এবং শরীর সুস্থ, মন ভালো,মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত রাখার উদ্দ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
শহরের আরেক সাবেক খেলোয়াড় ক্বারী আমজাদ আহমেদে বলেন, ছোট বেলা আমাদের ষোলঘর, বনানিপাড়া, বলাকা, মোহাম্মদপুরসহ আশপাশের প্রচুর ছেলেরা এই মাঠে খেলত। তখন খেলার মধ্যে বাধা বিঘœ ছিল না। এখন বড় হলাম মাঠেও সীমানা অনুযায়ী দেয়াল দেওয়া হয়েছে। তবে এই দেয়াল হওয়ার পর একমাত্র গেইট। কিন্তু গেইটের কথিত দাড়োয়ান আক্কাছ বাচ্চারা যখন বিকালে মাঠে আসে সে গেইট খুলে না। গেইট বন্ধ থাকায় বাচ্চারা মাঠে ঢুকতে পারে না। আশপাশ এলাকায় কোনো মাঠ না থাকায় বাচ্চারা গেইটের উপর দিয়ে মাঠে ঢুকে খেলতে চাইলে কথিত দাড়োয়ান আক্কাছ বাচ্চাদের অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে। আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার।
দুই দফা মেলার কারণে মাঠের বেহাল দশার বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আপনার থেকে আমি ইনফরমেশন জানলাম খোঁজ নিয়ে দেখব।
এসআইএইচ