বাজার নিয়ে আতঙ্ক-হতাশায় ভুগছেন ক্রেতারা
হাটবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অগ্নিমূল্যে আতঙ্ক আর হতাশায় ভুগছেন ক্রেতারা। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সব ধরনের সবজি, মাছ ও ডিমের দাম। একটু কমের আশায় ব্যাগ হাতে বাজার ঘুরে ঘুরে দেখছেন অনেক ক্রেতা। প্রয়োজনীয় বাজার করতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকেই। পবিত্র রমজানে বাজারমূল্যের অবস্থা কেমন হবে তা নিয়ে আতঙ্ক আর হতাশায় ভুগছেন সব শ্রেণির ক্রেতারাই। এ ছাড়া দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামের তালিকা টানানোর নিয়ম থাকলেও তা অনেক ব্যবসায়ীই মানছেন না।
তবে বাজারে বিভিন্ন সবজির সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও দামের ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে বিক্রেতারা জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিকে দায়ী করছেন।
হবিগঞ্জ পৌর এলাকার চাষী বাজার ও চৌধুরী বাজার ঘুরে দেখা যায়, পটল প্রতি কেজি ৫০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, জালি পিস প্রতি ৫০ টাকা, দেশি করলা ৮৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, ঝিঙা ৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৫০ টাকা, শসা ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিদেশি রসুন ১০০-১২০ টাকা, দেশি রসুন ১০০ টাকা, আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৪০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৫০ টাকা, আদা ৯০-১০০ টাকা, জিরা ৫০০ টাকা, ছোলা ১২০, ডাল ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির ডিমের হালি ৬০ ও হাঁসের ৮০ টাকা। এ ছাড়া দেশি মুরগি ৪৫০ টাকা ও সোনালি মুরগি ৩৫০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
চাষী বাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুল হালিম জানান, পণ্যবাহী ট্রাকের ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় সবজির বাজারে দাম বেড়েছে। আর পণ্যবাহী ট্রাকের ভাড়া বেড়েছে ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে। তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন জেলা থেকে পণ্যবাহী ট্রাকে সবজি বহনের খরচ বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে।
আরজু মিয়া নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, আগে পণ্য পরিবহন করতে যে খরচ হতো এখন তার চেয়ে দ্বিগুণ হয়। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় পণ্য পরিবহনে বেশি খরচ হয়। তাই বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে হয়।
বাজার করতে আসা কামরুন নাহার নামের এক শিক্ষিকা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় যে টাকা বেতন পাই তাতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। দাম বৃদ্ধির কারণে চাহিদা অনুযায়ী সবজি ক্রয় করাও সম্ভব হচ্ছে না।
স্থানীয় সংবাদকর্মী মোহাম্মদ শাহআলম বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, কিন্তু তেমন আয় বাড়েনি। এমন পরিস্থিতিতে সীমিত আয়ের মানুষের মধ্যে হতাশ বেড়েছে। আসছে রমজান মাস কীভাবে যাবে এ নিয়ে সবার মধ্যেই দুঃশ্চিন্তা কাজ করছে। বাজারে মনিটরিং না থাকায় ব্যবসায়ীরা নিজে থেকেও অনেক সময় পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেন। এ ছাড়া বাজারে পণ্যমূল্য টানানোর নিয়ম থাকলেও বিক্রেতারা তা মানছেন না। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা খুবই প্রয়োজন।
রিকশাচালক সাত্তার মিয়া বলেন, সারা দিন রিকশা চালিয়ে যে টাকা উপার্জন করি তা দিয়ে কোনোভাবেই সংসার চালানো যাচ্ছে না। চাল কিনলে ঠিকমতো সবজি কিনতে পারি না। এখন কোনোভাবে চললেও রমজানে কী করব ভেবে পাচ্ছি না।
হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রেসিডেন্ট মো. মোতাচ্ছিরুল ইসলাম বলেন, কোনো ধরনের সিন্নিকেটের মাধ্যমে যাতে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি না করতে পারে সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। রমজানে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। পণ্যমূল্যের তালিকা টানানোর জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর হবিগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক দেবানন্দ সিনহা বলেন, পুরো রজমাস মাসজুড়েই ভোক্তা অধিকারের পক্ষ থেকে বাজার মনিটরিং জোরদার থাকবে। অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি বা পণ্যের মূল্য না টানানোর খবর পেলেই আমরা অভিযান পরিচালনা করব।
এসজি