মোমেন ফাউন্ডেশনের নামে জমি জালিয়াতি
প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য
'মোমেন ফাউন্ডেশনের নামে সিলেটে গ্রাস হচ্ছে টিলা ভূমি' শিরোনামে ঢাকাপ্রকাশ-এ প্রকাশিত একটি সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন অভিযুক্ত হেলেন আহমদের ব্যবসায়িক অংশীদ্বার মিসবাউল ইসলাম।
গত ১০ জানুয়ারি ঢাকাপ্রকাশ-এ সংবাদটি প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুন: মোমেন ফাউন্ডেশনের নামে সিলেটে গ্রাস হচ্ছে টিলা ভূমি
১১ জানুয়ারি ঢাকাপ্রকাশ-এ পাঠানো প্রতিবাদে মিসবাউল ইসলাম উল্লেখ করেন, প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে ৭০৯ নামজারি খতিয়ান ভুয়া। কিন্তু খতিয়ানটি ১৯৮৬ সাল থেকে অদ্যাবধি বহাল আছে যা ২০২২ সাল পর্যন্ত সরকারি খাজনা পরিশোধিত।
তিনি বলেন, সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে ৭০৯নং নামজারি খতিয়ান এর ৩০৫০ দাগের জমি টিলা শ্রেণি। কিন্তু উক্ত জমিটি ১৯৮৬ সাল থেকে ৭০৯ নং খতিয়ানে বাগান শ্রেণীতে লিপিবদ্ধ আছে, যাতে হেলেন আহমদের বাগানবাড়ি অবস্থিত। সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে ১০১০/২০২১ বিবিধ মামলাটি ভুয়া এবং এই মামলা বলে ৬৪০৬ নং দাগ মোমেন ফাউন্ডেশন এর নামে টিলা শ্রেণি থেকে বাড়ি শ্রেণি করা হয়েছে। কিন্তু উক্ত মামলার আদেশের কোথাও লেখা নেই যে, ৬৪০৬ দাগের ভূমির টিলা শ্রেণি পরিবর্তন করে বাড়ি করার জন্য এমনকি আবেদনেও বলা নেই!
আদেশে উল্লেখ আছে, ২০ শতাংশ জমি হেলেন আহমদের নামীয় ২৭৯২ নম্বর খতিয়ান হতে মোমেন ফাউন্ডেশনের নামে কর্তন করার জন্য। প্রতিবাদপত্রে মিসবাউল অভিযোগ করেন, প্রকাশিত প্রতিবেদনটি বিভ্রান্তিমূলক, মিথ্যা, ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে করা হয়েছে।
প্রতিবেদকের বক্তব্য:
প্রথমত, প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যথাযথ তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। কাউকে হেয় করার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়নি। এ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য, উপাত্ত ও ছবি, ভিডিও ঢাকাপ্রকাশ এর হাতে আছে। প্রতিবদনটিতে অভিযুক্ত হেলেন আহমদের বক্তব্যও রয়েছে। যাতে তিনি দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এছাড়া প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্ট সকলের বক্তব্য রয়েছে। যারা এই প্রক্রিয়োর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
১৯৮৬-৮৭ ইংরেজি তারিখে ১১৯৫ নং নামজারি মোকদ্দমার মাধ্যমে ৭০৯ নং খতিয়ানে নামজারি করেন ফখরুল ইসলাম। উক্ত ভূমি তিনি বিক্রয় করিলে ১৯৮৮-৮৯ ইং তারিখের ৩৮১ নং নামজারি মোকদ্দমার আদেশ মোতাবেক ৭০৯ নং খতিয়ানে নামজারি করেন মিসেস হেলেন আহমদ। উক্ত খতিয়ানে সাবেক ৩০৫০ দাগে মোট ভূমির পরিমান ৬০ একর ৫ শতক যাহার শ্রেণী বাগান হিসেবে লিপিবদ্ধ।
১৬ আগষ্ট ২০২১ ইংরেজি তারিখের ৫৮০১ নং দলিলমূলে হেলেন আহমদ বিক্রি করেন মোমেন ফাউন্ডেশনের নিকট। বিক্রিত দলিলে সাবেক ৩০৫০ বিএস ৬৪০৬ দাগের ২০ শতক জায়গা যাহা টিলা রকম ভূমি বলে বিক্রয় করলেও নামজারি খতিয়ানে শ্রেণী (বাগান) গোপন রাখেন। ফলে নামজারি খতিয়ান ভুয়া বলেই গণ্য হবে। তাছাড়া, খাজনা পরিশোধের বিষয়টি এখানে অপ্রাসঙ্গিক।
১০১০/২০২১ বিবিধ মামলাটি ভুয়া প্রসঙ্গ:
আইন ও বিধির বাহিরে কোনো প্রকার কার্য সম্পাদনের সুযোগ স্যাটেলমেন্ট অফিস বা জরিপ বিভাগের বিন্দুমাত্রও নেই। বিবিধ মামলার ক্ষেত্রে কোন বিধিতে মামলা রুজু হয়েছে তার অবশ্যই উল্লেখ থাকা বাঞ্চনীয়। কিন্তু ১০১০/২১ নং বিবিধ মামলায় কোনো বিধির উল্লেখ নেই।
তাছাড়া, জোনাল স্যাটেলমেন্ট অফিসার বরাবরে আবেদনকারীর তার আবেদনে ওই ভূমি 'টিলা বাড়ি' শ্রেণী থেকে বাড়ি শ্রেণী সংশোধনের আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে জোনাল স্যাটেলমেন্ট অফিসার সাবেক ৩০৫০ দাগের (এসএ রেকর্ডে সকল ভূমি টিলা শ্রেণী) হাল দাগ ৫৮১২ ও ৬৪০১ নং দাগের সকল খতিয়ানে 'টিলা' ও 'টিলাবাড়ি' এর স্থলে যথাক্রমে 'ভিটা' ও 'বাড়ি' হিসাবে সংশোধনের আদেশ দেন।
মোমিন ফাউণ্ডেশনের ২০ শতক জমি সমতল প্রসঙ্গে:
নামজারি খতিয়ানের ঘ ৫৩৩৪৭০২ পৃষ্টায় বর্ণিত রয়েছে মৌজা বড়শালা ৪৪ খতিয়ান নম্বর এসএ ১১ (এগারো) নামজারি ৭০৯ বিএস ডিপি ২৭৯২ এর ৩০৫০ বিএস ৬৪০৬ বিক্রিত জমির পরিমান ০.২০ একর টিলা রকম ভূমি। সুতরাং নামজারি খতিয়ান এবং এসএ রেকর্ড অনুযায়ী ওই ভূমিটি টিলা শ্রেণী হিসেবেই নির্ণিত। অর্থাৎ সমতল ভূমি বলে কোথাও উল্লেখ নেই।
বেইজমেন্টের ছবির প্রসঙ্গে মিসবাউল যে অভিযোগ করেছেন তা সত্য নয়। সরেজমিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ছবি তোলা হয়েছে। অন্য জায়গার কোনো ছবি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়নি।
হেলেন আহমদের ব্যবসায়ীক পার্টনার প্রতিবেদনের প্রতিবাদকারী মিসবাউল ইসলামের ১৪৭৫ নং খতিয়ানে শুধুমাত্র ৫৬৮৯ নং দাগের ভিটা রকম ভূমি আংশিক রেকর্ড ছিল। পরবর্তীতে আইন ও বিধি বহির্ভূতভাবে স্যাটেলমেন্ট অফিসে কোনো প্রকার মামলাবিহীন ৫৮০৯, ৫৮১০, ৫৮১১ ও ৬৪০১ দাগের আংশিক ভূমি হাল দাগ ১৫৭৮ ও ১৪৯৯ খতিয়ান হতে নিজ নামেই রেকর্ড করে নেন। তন্মধ্যে ৬৪০১ দাগের শ্রেণী টিলা বাড়ির স্থলে অবৈধ পন্থায় বাড়ি শ্রেনীতে রূপান্তর করে নেন। প্রতিবাদপত্রে এ বিষয়টি তিনি কৌশলে এড়িয়ে গেছেন।
একই দাগ একাধিক শ্রেণী হবার আইন ও বিধি মোতাবেক বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। শ্রেণী পরিবর্তন করতে হলে এক্ষেত্রে আইন ও বিধি মোতাবেক ভিন্ন দাগ/পৃথক দাগ সৃষ্টি করতেই হবে। কিন্তু একই দাগে (এসএ ৩০৫০) ও শ্রেণী এসএ মোতাবেক টিলা সুস্পষ্ট। এক্ষেত্রে এই দাগের আংশিক বা ১.৮৬ একর ভূমি পৃথক শ্রেণী হিসেবে ৭০৯ নং নামজারি খতিয়ান সম্পূর্ণ অবৈধ। কাজেই আইন ও বিধি বহির্ভূত কার্যক্রম ভিত্তিহীন বা ভুয়া।
এনএইচবি/এএজেড