গণসমাবেশ থেকে মাঠ দখলের টার্গেট বিএনপির
আর মাত্র একদিন পরেই সিলেটে বিভাগীয় গণ সমাবেশ বিএনপির। গণ সমাবেশকে সামনে রেখে প্রচার-প্রচারণায় উজ্জীবিত দলটির নেতা-কর্মীরা। প্রতিদিনই সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে চলছে গণ-সংযোগ। বিএনপিসহ সহযোগী সংগঠনগুলোও সমাবেশ সফলে কাজ করে যাচ্ছে একযোগে। এই সমাবেশের পর থেকেই সিলেটের রাজপথ দখলের পরিকল্পনা দলটির। এই টার্গেটকে সামনে রেখেই স্মরণকালের সর্ববৃহৎ গণসমাবেশ করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
এদিকে গণসমাবশের একদিন আগে সিলেটে শেষ হচ্ছে দুই দিনব্যাপী ইজতেমা। 'আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ' নামের একটি ধর্মীয় সংগঠনের ৭৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে নগরের দক্ষিণ সুরমার পারাইরচকস্থ কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনালে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ইজতেমা চলবে শুক্রবার পর্যন্ত। তবে পুলিশ বলছে শুক্রবার সকাল ১০ টার মধ্যেই ইজতেমা শেষ করতে হবে। মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার মো. নিশারুল আরিফের সঙ্গে বৈঠকে শেষে আয়োজকদের উপর এমন শর্ত আরোপ করা হয়।
বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলছে- ইজতেমার আগে থেকেই জাতীয়তাবাদী নেতাকর্মীরা অবস্থান করছে সিলেট। তাদের দাবি-সারাদেশের মতো সিলেটের গণসমাবেশ ঠেকাতে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক আসতে পারে, এমনটি ভেবেই নেতাকর্মীরা গণসমাবেশের পাঁচ দিন আগ থেকেই অবস্থান করছেন সিলেটে। তবে ইজতেমার উপস্থিতিকে বাড়তি প্রাপ্তি বলে মনে করছেন তাঁরা। সে হিসেবে পরিবহন ধর্মঘটকে কোনো রকম বাঁধা হিসেবে দেখছে না বিএনপি।
তবে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, সিলেটে জামায়াতের সাথে দফায় দফায় বিএনপির বৈঠক হয়েছে। বৈঠক থেকে সিলেটের রাজপথ দখলের ছঁক তৈরি করা হয়েছে। গণ সমাবেশের পর থেকে সিলেটের রাজপথ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে উভয় পক্ষে মতৈক্য হয়েছে। ওই সূত্রের দাবি-সিলেটের ইজতেমার আয়োজক সংগঠন 'আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম' এর শীর্ষ নেতৃবৃন্দও গণ সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন-এমন নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। মোট কথা-গণসমাবেশকে প্রেস্টিজ ইস্যু হিসেবে ভাবছে বিএনপি।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) সাড়ে ১১ টায় নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন শেষে নগরজুড়ে ব্যানার,পেস্টুন, বিলবোর্ড আর প্লেকার্ড দেখা গেছে। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে নগরের সর্বত্র বিভিন্ন যানযোগে মাইকিং প্রচারণাও চলছে সমানতালে।
গণসমাবেশ সফলে ছয়টি কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। কমিটিগুলোর মধ্যে 'আবাসন ব্যবস্থাপনা' কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে।
'ব্যবস্থাপনা ও শৃঙ্খলা কমিটি'র আহ্বায়ক হিসেবে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। প্রচার ও মিডিয়া কমিটিতে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, অভ্যর্থনা কমিটিতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী, আপ্যায়ন কমিটিতে মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নাসিম হোসাইন এবং দপ্তর কমিটিতে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ূন কবির শাহীনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে।
সিলেট বিভাগীয় সমাবেশ সফলে সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল মঈন খান এবং যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন। বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভাগীয় সমাবেশে আলিয়া মাদরাসা মাঠ ছাড়াও আশপাশের রাস্তায় মানুষজনের ব্যাপক সমাগম ঘটাতে চায় বিএনপি। এ কারণেই বিভাগের জেলা ও উপজেলাগুলোতে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা নিয়মিত গণসংযোগ, পথসভা, প্রচারপত্র বিতরণ, প্রচারমিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, কিছু কিছু জায়গায় পুলিশ প্রচারমিছিল ও প্রচারপত্র বিতরণে বাধা দিচ্ছে। তবে কোনো বাধা-বিপত্তি গণসমাবেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি ঠেকাতে পারবে না। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে সমাবেশ সফলে কাজ করছেন। নগরজুড়ে ব্যানার, বিলবোর্ড, ফেস্টুন সাঁটানো এ প্রস্তুতিরই অংশ।
সমাবশে স্থল পরিদর্শন কালে বৃহস্পতিবার বিকালে ড. মঈন খান বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ৬ টি সমাবেশ করেছি। এতে দেশের মানুষ অংশ নিয়েছেন। কিন্তু শাহজালালের মাঠিতে আমরা আগে সমাবেশ না করে ৭ম সমাবেশ করেছি। কারণ এই মাঠি পবিত্র। ইনশাল্লাহ এই পবিত্র মাঠিতে সমাবেশ সফল হবে। জনগণ এ সরকারকে বার্তা দেবে গণতন্ত্র ব্যতিরেখে বাংলাদেশ চলতে পারে না।
এএজেড