বিচারহীনতার ৯ বছর পেরিয়েও বিচার পায়নি গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালরা
ছবি: সংগৃহীত
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল সম্প্রদায় ৯ বছর পেরিয়েও নিজেদের ভূমিতে অধিকার প্রতিষ্ঠায় সফল হয়নি। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর সাঁওতাল পল্লীতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং তিনজন সাঁওতালের হত্যার ঘটনার স্মরণে প্রতি বছর এই দিনটি ‘সাঁওতাল হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে তারা। বিচারহীনতার দীর্ঘ পথে আজও সাঁওতাল পরিবারগুলো অপেক্ষায় আছে ন্যায়বিচারের।
বিচারের দাবি নিয়ে বুধবার সকালে গোবিন্দগঞ্জের জয়পুর গ্রামে অস্থায়ী বেদিতে সাঁওতালরা ফুল দিয়ে, মোমবাতি প্রজ্বলন করে। মাদারপুর ও জয়পুর গ্রাম থেকে জাতীয় ও কালো পতাকা, তীর-ধনুক, বাদ্যযন্ত্রসহ একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে গাইবান্ধা শহরে নিয়ে আসে। গাইবান্ধার নাট্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থার সামনে সমবেত হয়ে, সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি ও বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ আয়োজনে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৬ সালের হামলার ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হলেও ৯ বছরেও মামলার বিচার কাজ শুরু হয়নি। মামলাটি প্রথমে পিবিআই এবং পরে সিআইডি তদন্ত করলেও, মূল আসামিদের বাদ দিয়ে চার্জশিট দেয়ার অভিযোগে বাদী থমাস হেমব্রম নারাজি দেন। পরবর্তীতে চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর আদালত গাইবান্ধার পুলিশ সুপারকে নতুন করে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়।
১৯৫৪ সালে আখ চাষের জন্য গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্মের প্রায় ১৮৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়, যার ২৭ শতাংশ ছিল সাঁওতালদের। এই জমি ফিরে পেতে ২০০২ সালে সাঁওতালরা আন্দোলন শুরু করে। ২০১৬ সালের ১ জুলাই সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের জমিতে বসতি স্থাপন শুরু করলে, সংঘর্ষ বাধে চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী এবং পুলিশের সঙ্গে।
পুলিশ ও চিনিকল কর্তৃপক্ষ কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে; তবে সাঁওতালরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই বেড়া ভেঙে কৃষিকাজ ও মাছ চাষ শুরু করেছে।
এই বিরোধপূর্ণ জমিতে সরকার একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করছে। সাঁওতালরা ইপিজেডের বিরোধিতা করলেও প্রশাসন এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। সরকার বলছে, ইপিজেড হলে স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থানসহ বৃহত্তর রংপুর ও রাজশাহী অঞ্চলের উন্নয়ন ঘটবে। তবে, সাঁওতালরা জমি ফেরতের দাবি জানিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।
সাঁওতাল হত্যা মামলার বাদী থমাস হেমব্রম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "সারা পৃথিবীতে আমাদের ওপর আগুন লাগানোর ভিডিও, ছবি প্রকাশ পেলেও এখনও পর্যন্ত দোষীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।" সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাসকে বলেন, "যে দেশ আমরা স্বাধীন করেছি, সেই দেশে আজ নিজ ভূমিতে বেঁচে থাকা নিয়েও যুদ্ধ করতে হচ্ছে।"
গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর নতুন তদন্ত শুরু হবে, এবং স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।