মহিমাগঞ্জে চাঁদা না পেয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি দুই ভুয়া সমন্বয়কের!
অভিযুক্ত শুভ ইসলাম ও আলামিন ইবনে রায়হান। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
চাঁদার টাকা না দেওয়ায় মহিমাগঞ্জ আলিয়া কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন সমন্বয়ক ও সহ সমন্বয়ক পরিচয়দানকারী দুই যুবক। তবে তাদের কেউ মহিমাগঞ্জের সমন্বয়ক ছিলেন না বলে জানিয়েছেন মহিমাগঞ্জের স্থানীয় শিক্ষার্থীরা। অভিযুক্ত দুই যুবক হলেন- শালমারা ইউনিয়নের আলামিন ইবনে রায়হান এবং নাকাইহাট ইউনিয়নের শুভ ইসলাম। শুভ অত্র মাদ্রাসার ছাত্র হলেও আলামিন অত্র মাদ্রাসার নিয়মিত ছাত্র নন।
ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে, আল-আমিন মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র হওয়ায় তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তদবির নিয়ে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে আসতেন। অধ্যক্ষ তার অবস্থান থেকে সাহায্য করার চেষ্টাও করেছেন। একসময় তার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অধ্যক্ষ আলামিনের থেকে দূরত্ব তৈরি করেন। তারপর থেকেই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় উসকানিমূলক কথা বলতে শুরু করেন আল আমিন।
আরেক অভিযুক্ত শুভ ইসলাম আলিয়া কামিল মাদ্রাসার ছাত্র। তার বাড়ি নাকাইহাট ইউনিয়নের হওয়ায় নিয়মিত ক্লাস করতেন না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি মাদ্রাসায় যাতায়াত শুরু করেন। ওই সময় শুভসহ কয়েকজন ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে এসে চাঁদা দাবি করেন এবং জুলাই মাসের মাদ্রাসার মেসের টাকা না নেওয়ার জন্য বলেন ও মেস খোলা রাখার জন্য অধ্যক্ষকে চাপ দেন। পরবর্তীতে তৎকালীন সরকারের হল/মেস বন্ধের নির্দেশনা মোতাবেক হল/মেস বন্ধ করে দেয়া হয়।
পরবর্তীতে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর শুভ আবারও চাঁদার দাবি করতে শুরু করেন, এবার দাবি করেন আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করা অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য। চাঁদার টাকা না দেওয়ায় শুভগং মহিমাগঞ্জ আলিয়া কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করেন।
এরপর শুরু করেন ফেসবুকে পোস্ট ও বিভিন্ন হুমকি ধামকি। বর্তমানে এই পরিস্থিতির সুযোগটা নিয়ে ফেলেন এই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক, যার ভিতর অন্যতম মোঃ মাহামুদ হাসান- সহকারী অধ্যাপক এবং মোঃ তাওহীদ ইসলাম- মুহাদ্দিস অত্র মাদ্রাসা। এই ২ জন শিক্ষকের উসকানিতে সমন্বয়ক পরিচয়দানকারীরসহ গুটি কয়েকজন মাদ্রাসার শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
যার প্রমাণস্বরূপ, মাহামুদ হাসানের একটি অডিও প্রতিবেদকের কাছে আছে, যেখানে তিনি বলেছেন তোমরা অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবি করো, স্থানীয় বিএনপি নেতারা কোন কথা বলার সাহস পাবে না, অপর পাশ থেকে অন্যজন বলেন স্যার, আপনাকে কিন্তু থাকতে হবে। মাহামুদ বলেন ১১ টার পরে আমরা থাকবো।
স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় যে, এদের কখনোই এই এলাকায় দেখি নাই। নিজেদের পরিচিতি করতেই এসব করছে এই ছেলেগুলো। মাদ্রাসার একজন অভিভাবক বলেন, গত কয়েক বছর থেকে অধ্যক্ষের পদটি স্থায়ী নেই। ৫ বছরের অধিক সময় বর্তমান অধ্যক্ষ ভারপ্রাপ্ত হিসাবে পরিচালনা করে আসছেন। যতদূর শুনেছি মাদ্রাসার সাবেক এক শিক্ষক অধ্যক্ষ হিসাবে আসতে চায়। তিনি তার পরিচিত শিক্ষক ও কয়েকজন ছেলেদের দারা এই কাজ করাতে পারেন বলে আমার মনে হয়। কারণ, বর্তমান অধ্যক্ষ থাকলে তিনি এই পদে আসতে পারবেন না।
এছাড়াও ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে মহিমাগঞ্জ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, আন্দোলন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এদের কোথাও দেখলাম না, তারা কীভাবে সমন্বয়ক হয়। এরা অনৈতিক বা নিজেদের স্বার্থে কিছু করলে ছাত্ররাই এদের প্রতিহত করবে। বহিরাগত কেউ এলাকার শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করবে এটা আমরা মেনে নেব না।
এছাড়াও মহিমাগঞ্জ জাতীয়তাবাদী সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহবায়ক ও সাবেক ছাত্রনেতা মোঃ সাদ্দাম হোসেন বলেন, এরা আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য এসব করছে। তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের পরে এই দুইজন সহ কয়েকজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজনের দোকান থেকে চাঁদা তুলেছেন এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলার চেষ্টা করেন। তিনি আরও বলেন, আলামিনের শ্বশুর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক এক সভাপতির বন্ধুর আত্মীয়। আমাদের স্থানীয়দের এদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এরা বিএনপি জামাতের লেবাসে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে।
এদিকে মহিমাগঞ্জ আলিয়া কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, এই ছেলেগুলোর সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন শত্রুতা নাই। তারা ফেসবুক থেকে পুরাতন কিছু ছবি নিয়ে আমাকে ব্লাকমেইল শুরু করেন। ভয়ভীতি দেখান। আমি চাকরি করি। আল্লাহর অশেষ রহমতে এতো বড় একটা প্রতিষ্ঠান গত ৫ বছর পরিচালনা করে আসতেছি। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার সুবাদে আমার সাথে এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সহ এলাকার সকল মানুষের সাথে আমার সুসম্পর্ক ছিল, এখনো আছেন।
তিনি আরও বলেন, এই ছেলেগুলো শুধু আওয়ামী লীগের লোকজনের ছবি সামনে আনছে কিন্তু আমার সাথে বিএনপি জামাত ঘরনার অনেকের সাথে সুসম্পর্ক আছে সেটা তারা বলতেছেনা। তিনি আরও বলেন, আমাকে এই হয়রানির বিষয়ে আমি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বিষয়টি অবগত করেছি।