নীলফামারী জেলার জলঢাকায় বড় ভাই সাইদুল বসুনীয়ার (৬৫) শটগানের গুলিতে সিরাজুল বসুনীয়া (৬০) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা আহত হয়েছেন। শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সকালে উপজেলার কৈমারী বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে ওই আওয়ামী লীগ নেতা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
সিরাজুল বসুনীয়া জলঢাকার কৈমারী বাজার এলাকার মৃত আফছার বসুনীয়ার ছেলে ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সিরাজুল বসুনীয়ার বড় ভাই সাইদুল বসুনীয়ার (৬৫) সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। শুক্রবার সকালে আবারও সেই জমি নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এর একপর্যায়ে বড় ভাই সাইদুল ঘর থেকে নিজের লাইসেন্সকৃত শটগান দিয়ে গুলি করেন। এতে ছোট ভাই সিরাজুল বুকের ডান দিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে যান। এ সময় পরিবার ও স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বর্তমানে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জলঢাকা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুক্তারুল আলম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে আমরা শটগান উদ্ধার করেছি। এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশের ‘দারিদ্র্য’ নিয়ে প্রতিবেদনে নিজ দেশেরই ছবি প্রকাশ করল ভারতীয় গণমাধ্যম। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, দেশের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। তাদের মধ্যে শহরে দারিদ্র্যের হার সাড়ে ১৬ শতাংশ এবং গ্রামে সেই হার ২০ শতাংশের বেশি। এই তথ্য দিয়ে বাংলাদেশসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
‘জি ২৪ ঘণ্টা’ (Zee 24 Ghanta) প্রতিবেদনটি শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রকাশ করার পর গণমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়। পাশাপাশি দেশের সংবাদমাধ্যম ‘আজকের দৈনিক’ও ছবিটি যুক্ত করে গত শুক্রবার সংবাদ প্রকাশ করেছে। ছবিতে একদল শিশুকে থালা-বাটি হাতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির একটি প্রতিবেদনে ছবিটি পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি ২০২১ সালের ১৯ মার্চ প্রকাশিত হয়।
ভিডিও থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে কোভিড-১৯ চলাকালীন লকডাউন শিথিল হওয়ার পর ভারতের নয়াদিল্লিতে একটি বস্তির শিশুরা বিনা মূল্যে খাবার নিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিল। ছবিটি একই তথ্যে ছবির স্টোরেজবিষয়ক ওয়েবসাইট গেটি ইমেজের ওয়েবসাইটেও পাওয়া যায়। এটি ২০২০ সালের ১৫ জুন প্রকাশিত হয়।
সুতরাং একদল শিশুর থালা-বাটি হাতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকার ছবিটি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। প্রকৃতপক্ষে, ২০২০ সালে কোভিড-১৯ চলাকালীন ভারতের নয়াদিল্লিতে একটি বস্তির শিশুরা বিনা মূল্যে খাবার নিতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকার ছবি বাংলাদেশের মানুষের দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসের বিষয়ে সংবাদ প্রতিবেদনে যুক্ত করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো ‘হিজাব র্যালি’। ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক হিজাব দিবস উপলক্ষে প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘হিজাব র্যালি’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার দুপুরে র্যালির আয়োজন করে ‘প্রোটেস্ট এগেইনস্ট হিজাবোফোবিয়া ইন ডিইউ’ নামের একটি সংগঠন।
র্যালিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে টিএসসি হয়ে রাসেল টাওয়ার ঘুরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়। এরপর একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা অন্যান্য ক্ষেত্রে পোশাকের স্বাধীনতার কথা বলে থাকি, কিন্তু যখন হিজাবের কথা আসে, তখন স্বাধীনতার সম্মানটা কেউ করে না। তাঁরা বলেন, হিজাব আমাদের অধিকার। আমাদেরকে আমাদের কাজ দিয়ে বিবেচনা করুন, পোশাক দিয়ে নয়।’
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিশকাতুল জান্নাত বলেন, ‘যেকোনো বিষয়ে জানার জন্য আমাদের তার পেছনের ইতিহাস জানা সব থেকে জরুরি। আমরা যেমন দেখেছি, জুলাই অভ্যুত্থানের মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার প্রোপাগান্ডার শিকার হয়েছি, ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে। তাই আমরা যদি আমাদের ইতিহাস না জানি তাহলে এই হিজাব ডে এটি আস্তে আস্তে হারিয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, বিগত চার বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ বিশ্ব হিজাব দিবস ঘিরে কিছু কিছু ইভেন্ট করেছে। তবে সার্বিকভাবে এটা এখনো বাংলাদেশে পপুলার (জনপ্রিয়) না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী উম্মে ছালমাও এই হিজাব র্যালিতে অংশ নেন। তিনি বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে অনেক নিকাব–হিজাব পরিহিত আপু থাকলেও পরবর্তীতে আমরা কোনো নিকাব করা নারী নেতৃত্ব দেখতে পাইনি।’
তিনি বলেন, ‘নিকাব করে নামাজ পড়বে, রোজা রাখবে, সংসার করবে, রান্না করবে এমন ধারণায় বিশ্বাসী আমাদের সমাজ। আমি মনে করি, আমরা হিজাব–নিকাব করেও দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজ যোগ্যতায় দেশের উন্নয়নে কাজ করতে পারি। এজন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত। আপনার অধিকার আপনাকেই আদায় করে নিতে হবে।’
র্যালিটির অন্যতম আয়োজক স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদ নামে একটি সংগঠনের আহবায়ক জামালুদ্দিন খালেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘যাঁরা ফ্যাসিবাদের আমলে হিজাব–নিকাব পরিধান করেছেন, তাঁরা বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। শুধু হিজাব–নিকাবই নয়, যাঁরা দাড়ি–টুপি পরতেন, তাঁরাও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। পশ্চিমারা এগুলোকে একধরনের জঙ্গিবাদের চিহ্ন হিসেবে উপস্থাপন করেন। এই সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্যই মূলত আমাদের এই প্রচেষ্টা।’
হিজাব র্যালি শেষ হলে রাজু ভাস্কর্যে এক সমাবেশে পাঁচজন শিক্ষার্থীকে পুরস্কৃত করা হয়। অনলাইন প্রচারণার মাধ্যমে যাঁরা র্যালির উপস্থিতি বাড়িয়েছেন, তাদের মধ্য থেকে পাঁচজনকে দেওয়া হয় এই পুরস্কার। তাছাড়া রোববার সকাল ৯টায় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১০০তম ব্যাচের উদ্যোগে হিজাব বিষয়ে সচেতনতার জন্য একটি সেমিনারও আয়োজন করা হবে। সেমিনারটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বিএনপি’র দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হাজী সেলিম উদ্দিন ভূঁইয়া (৫০) নামে এক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা নিহত হয়েছেন। শনিবার বিকালে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সেলিম উপজেলার হেসাখাল ইউনিয়ন দায়েমছাতী গ্রামের আব্দুল খালেকের পুত্র। তিনি হেসাখাল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক।
জানা যায়, উপজেলার বাঙ্গড্ডা ইউনিয়ন যুবদলের কর্মী সম্মেলন শনিবার বিকাল ৩টায় বাঙ্গড্ডা বাদশা মিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া। অপরদিকে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়া নেতাকর্মীদের নিয়ে উপজেলার রায়কোট দক্ষিণ ইউনিয়নের বাসন্ডা গ্রামে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে পূর্বনির্ধারিত একটি প্রোগ্রামে পেরিয়া ইউনিয়নের কাকৈরতলার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। আব্দুল গফুর ভূঁইয়ার গাড়ি বহর বাঙ্গড্ডা পশ্চিম বাজার পার হওয়ার সময় মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া সমর্থিত নেতাকর্মীরা পেছন থেকে হামলা চালায় বলে দাবি করেন আব্দুল গফুর ভূঁইয়ার নেতাকর্মীরা। হামলায় ৫ জন আহত হয়। তাদের পরিচয় জানা যায়নি। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত সেলিম উদ্দিন ভূঁইয়াকে নাঙ্গলকোট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল গফুর ভূঁইয়া বলেন, আমি আমার নেতাকর্মীদের নিয়ে উপজেলার রায়কোট দক্ষিণ ইউনিয়নের বাসন্ডা গ্রামে সামাজিক একটি অনুষ্ঠানে যোগদান করি। দাওয়াত শেষে পেরিয়া ইউনিয়নের কাকৈরতলায় পূর্বনির্ধারিত মতবিনিময় সভায় আসার পথে বাঙ্গড্ডা পশ্চিম বাজারে মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়ার নেতাকর্মীরা আমার গাড়ি বহরের পিছনে হামলা চালায়। হামলায় ৫ জন আহত হয় এবং হামলায় হেসাখাল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দল আহ্বায়ক সেলিম উদ্দিন ভূঁইয়া নিহত হয়েছেন। আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে সেলিম উদ্দিন ভূঁইয়ার হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাই।
কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা সর্ম্পকে আমি জানি না। আমার একটি প্রোগ্রাম ছিল, শান্তিপূর্ণভাবে আমি সে প্রোগ্রাম শেষ করে এসেছি। আমার প্রোগ্রামে কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটেনি।
নাঙ্গলকোট থানা অফিসার ইনচার্জ একে ফজলুল হক বলেন, সেলিম উদ্দিন ভূঁইয়া নামে একজন মৃত্যুবরণ করেছেন শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।