পা দিয়ে লিখে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন কলি রানী
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার হরিশ্বর গ্রামের মৃত মনোরঞ্জন বর্মণ ও রুপালি রানির মেয়ে কলি রানী। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে কলি রানি সবার ছোট। জন্ম থেকে নেই ডান হাতের আঙুল। বাম হাত বাঁকা হওয়ায় ধরতে পারেন না কলম। তার দুই হাতই অচল। এর পরও থেমে থাকেননি। ডান পা দিয়ে শুরু হয় তার লেখালেখি। কিন্তু হাতের পরিবর্তে পা দিয়ে লেখায় শুরুতে তেমন গতি ছিল না। এক সময় পা দিয়েই দ্রুত গতিতে লেখার কৌশল আয়ত্ত্ব করেন। যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু তখন সহপাঠীরা তাকে নিয়ে উপহাস করত। তবে প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার দৌঁড়ে নিরাশ হননি কলি রানি।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করা কলি রানি এবার মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা দিচ্ছেন। হাতের বদলে পা দিয়ে লিখে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এই শিক্ষার্থী। কাউনিয়া উপজেলার হরিশ্বর গ্রামের মৃত মনোরঞ্জন বর্মণ ও রুপালি রানির মেয়ে। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে কলি রানি সবার ছোট সন্তান। কলি রানি কাউনিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা মেনে কাউনিয়া মোফাজ্জল হোসেন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি।
কলি রানির মা রুপালি রানি জানান, জন্ম থেকেই তার মেয়ের হাতের আঙুল নেই। হাত বাঁকা হওয়ায় কলম ধরতে পারে না। মেয়ের অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে ডান পা দিয়ে লেখা শুরু করে। প্রাথমিকে ভর্তির পর তার মেয়েকে নিয়ে অনেকে উপহাস করত। এতে কলি মন খারাপ করলেও কখনও পড়াশোনায় নিরাশ হয়নি। সব সময় শিক্ষকরা কলিকে সাহস জুগিয়েছেন। তাদের সার্বিক সহযোগিতায় কলি সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছে। ধীরে ধীরে সহপাঠীরাও তাকে মেনে নিয়ে বন্ধুসুলভ আচরণ শুরু করে। পঞ্চম শ্রেণিতে কলি ‘এ’ গ্রেড পেয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।
কলি রানি বলেন, আমি কখনও নিজেকে পঙ্গু মনে করিনি। আমার হাতের আঙুলের সমস্যা, পায়ের তো সমস্যা নেই। অনেক মানুষ আছে যাদের হাত-পা দুটোই নেই। সৃষ্টিকর্তা আমাকে তাদের চেয়ে ভালো রেখেছেন। আমাকে সবাই সাহস জোগাচ্ছেন। আমি বিশ্বাস করি, ভালো কিছু করতে পারব। আমি ভালো মানুষ হওয়ার সঙ্গে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হতে চাই। সাধারণ মানুষের সেবা করতে চাই।
কাউনিয়া মোফাজ্জল হোসেন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব মো. আইয়ুব আলী বলেন, কলি রানি শারীরিক প্রতিবন্ধী। এক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্বটাও বেশি। শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী একজন কক্ষ পরিদর্শক পরীক্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কলির পরীক্ষা কক্ষে অবস্থান করেন। অন্য পরীক্ষার্থীদের চেয়ে তাকে ৩০ মিনিট সময় বেশি দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে কাউনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মনোনীতা দাস বলেন, শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা মেনে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী হিসেবে কলি রানির পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে।
এসআইএইচ