বৈশাখের বিদায় লগ্নেও নেই বৃষ্টি, গরমে পুড়ছে ঠাকুরগাঁওবাসী
বৈশাখের বিদায় ঘণ্টার সুর উঠেছে। তবুও বৃষ্টির দেখা নেই। ভয়ানক গরমে পুড়ছে ঠাকুরগাঁওয়ের প্রতিটি মানুষ। অতিমাত্রার দাবদাহে গ্রাম থেকে শহর সবখানেই নাভিশ্বাস অবস্থা। বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। অনাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আবাদি জমি। হাসপাতালেও বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। শুধু ঠাকুরগাঁও নন, অন্যান্য জেলাগুলোতেও একই চিত্র। দিনে-রাতে সমান গরম। এ পরিস্থিতিতে ঘরের ভেতরেও টিকে থাকা বড়ই দায়। ফ্যানের বাতাসেও যেন প্রাণ জুড়ায় না। সব মিলে বলা যায় অতিষ্ঠ প্রাণ।
বৃহস্পতিবার (১১ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ক্ষেতে ও মাঠে কাজ করা মানুষগুলো প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে ও একটু পর পর ছায়ায় পানি পান করছে। গরমের কারণে একটু স্বস্তির জন্য শিশু-কিশোররা পুকুরে গোসল করছে এবং বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ছাতা নিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়। এই রোদে ঘর থেকে তেমন মানুষ বের না হওয়ায় জেলার ব্যস্ততম সড়কগুলোতে কম যান চলাচল লক্ষ্য করা গেছে।
ঠাকুরগাঁও পরিত্যক্ত বিমানবন্দরের রানওয়েতে ভুট্টা শুকানোর কাজ করছিলেন রফিকুল ইসলাম। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, খালি পায়ে হাঁটা যাচ্ছে না। জুতা পরে হাঁটলেও জুতাসহ পা গরম হয়ে যাচ্ছে। এই রোদে কাজ করতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু উপায় নাই। আমরা গরিব মানুষ একদিন কাজ না করলে সংসার চলবে কীভাবে। তাই কষ্ট হলেও এভাবেই কাজ করতে হচ্ছে।
মরিয়ম নামে এক বৃদ্ধা বলেন, ঠিকভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। রোদে খালি পায়ে হাঁটাও যায় না। তাই গাছের ছায়ায় বসে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি।
ঠাকুরগাঁও থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে তেঁতুলিয়ার দিকে রওনা দিয়েছিলেন হাবিব নামে এক এনজিও এরিয়া ম্যানেজার। পথিমধ্যে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমি অফিসের কাজে তেঁতুলিয়া যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা দিয়েছি। আজকের প্রচণ্ড গরমে গাড়ি চালাতে গিয়ে হাত-পা জ্বলছে। তাই গাছের নিচে একটু থেমেছি। এই রোদে যাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে চিন্তায় আছি। আসলে এমন তাপদাহ চলতে থাকলে জনজীবন থেমে যেতে পারে। এই গরমে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।
লাবু নামে শহরের এক অটোচালক বলেন, তাপের কারণে অটোর কন্ট্রোলার তাড়াতাড়ি কেটে যাচ্ছে ও চাকা ঘন ঘন পাংচার হচ্ছে। রোদের জন্য প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বেড় হচ্ছে না তাই যাত্রীও কম। এতে আমাদের খুব কষ্ট হয়ে গেছে চলাচল করতে।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা কৃষকদের সব সময় পরামর্শ দিতে থাকি যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে নিয়মিত সেচ প্রদান করার। যদি সেচ ব্যবস্থা কৃষকরা ঠিক রাখে তাহলে বেশি তাপমাত্রাতেও গাছ ঝিমে বা মরে যাওয়া রোধ করা সম্ভব।
এদিকে গরমের কারণে ২৫০ শয্যা ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে দেখা যায় তাপমাত্রাজনিত কারণে ছোট-বড় সব বয়সের রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রকিবুল আলম চয়ন বলেন, তাপমাত্রাও বৃদ্ধির ফলে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অতিরিক্ত গরমের ফলে ডিহাইড্রেশন রোগ, যেটা পানি শূন্যতা বলে জানান তিনি।
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহের তথ্যমতে, বৃহস্প্রতিবার (১১ মে) ঠাকুরগাঁওয়ের তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ ঘনভূত হওয়ায় আবহাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের দিকে এগোচ্ছে। এটি এখনো সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে এটি ঘূর্ণিঝড়ের আকার ধারণ করতে পারে। লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত হতে আরও দুই একদিন সময় লাগবে। নিম্নচাপে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলে যে তাপমাত্রা বিরাজ করছে এই তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে।
এসজি