মেয়রের বিরুদ্ধে অর্থ লোপাটের অভিযোগ ১১ কাউন্সিলরের
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দাখিল করেছে ১১ জন কাউন্সিলর। মেয়র আবু সালেহ মো. তাজিমুল ইসলাম শামীমের বিরুদ্ধে ভুয়া টেন্ডার দেখিয়ে কাজ করানো , টেন্ডার আহ্বান না করা, সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দের অর্থ লোপাট করা, ক্ষমতার অপব্যবহার করে একক কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করাসহ প্রায় ১০ কোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগ করেছে পীরগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলররা। এ ব্যাপারে মেয়রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগ রংপুরের উপ-পরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন তারা।
সোমবার (৩ এপ্রিল) রংপুর নগরীতে সংবাদ সম্মেলন করে পৌর মেয়র শামীমের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এনে দ্রুত তদন্ত করার সাপেক্ষে তাকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন কাউন্সিলররা। এ সময় অনাস্থা প্রস্তাব জানানো ১১ কাউন্সিলরের মধ্যে ৮ জন উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগ পাঠ করেন পীরগঞ্জ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলমগীর। লিখিত অভিযোগে জানানো হয়, পীরগঞ্জ পৌরসভার গত ২৮ নভেম্বর ২০২১ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে মেয়র শামীমসহ ১২ জন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় প্রায় দেড় বছর অতিবাহিত হতে চলেছে পৌর মেয়র শামীম পৌর পরিষদের মাসিক সভা করেন তার ইচ্ছে মতো। সভার আগে তিনি কাউন্সিলরদের কোনো নোটিশ দেন না। সভার ২/৩ ঘণ্টা আগে তার পিএর মাধ্যমে সভায় উপস্থিত হবার কথা জানানো হয়। সভার ৪/৫ ঘণ্টা পর মেয়র উপস্থিত হয়ে কোনো আলোচনা না করে সভার রেজুলেশন না লিখে তাদের স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পরবর্তীতে সভার সিদ্ধান্তের কপি তাদের দেওয়াও হয় না। এ ব্যাপারে অনেকবার মেয়রকে বলার পরও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় চলতি বছরের গত ১ জানুয়ারি সকল কাউন্সিলর মেয়রের কাছে লিখিতভাবে বিগত সভার সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে জানানোর জন্য আবেদন করেন। তবে সাড়া মেলেনি।
সভায় মেয়রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করে বলা হয়, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে টেন্ডার আইডি ২৭৮৪৪৭ মুলে পীরগঞ্জ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পচাকান্ত মৌজার রাস্তা সংস্কার ও নির্মাণ কাজ করা হয়। যা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মন্ডল ট্রেডার্সের মাধ্যমে ৪৫ লাখ ৬৫ হাজার ৮৩৮ টাকার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ওই কাজের ওই পরিমাণ বিল উক্ত ঠিকাদারকে দেওয়া হয়। একই কাজ টেন্ডার আইডি ৩০১৯৬১ মুলে পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করানো দেখিয়ে কোনো কাজ না করেই ৪২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ ছাড়াও ২০২১-২০২২ অর্থবছরে আর্থিক সহায়তা খাতে ২১ লাখ টাকা উত্তোলন করে চিকিৎসা খাতে ও বিবিধ খাতে অর্থ সহায়তা দেখিয়ে অর্থ লুট, বিভিন্ন দিবস উদযাপন সংক্রান্ত বিল উপজেলা পরিশোধ কর্তৃক ব্যয় করা হলেও পৌর তহবিল থেকে ভুয়া বিল দেখিয়ে অর্থ লুটপাটের অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিলররা অভিযোগ করেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত পৌর পরিষদের কোনো সভা আহ্বান না করে একক ক্ষমতা বলে বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করে লিখিত অভিযোগ দেন এবং তার বিচার দাবি করেছেন বলে জানান তারা।
সার্বিক বিষয়ে জানতে পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীমের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে ১১ জন কাউন্সিলরের স্বাক্ষরযুক্ত বিভিন্ন অভিযোগ সম্বলিত মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন রংপুরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক জিলুফা ইয়ামিন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।