যুদ্ধের দিনগুলি ছিল জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার। গোটা নীলফামারী জেলায় এক নামেই পরিচিত। জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৪৪ ইং সালে চিকনমাটি ধনীপাড়ায়। ডোমারে শৈশব জীবন কাটালেও লেখা পড়া করেন নীলফামারীর স্কুল ও কলেজে। লেখা পড়ার পাশাপাশি খেলা ধুলায় ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল এবং সংস্কৃতিক অঙ্গনেও ছিলেন তার অলরাউন্ডার পদচারণা। তৎকালীন রাজশাহী বিভাগের মধ্যে ছিলেন সেরা দৌড়বীদ। ফুটবলে ছিলো অসাধারণ দক্ষতা। এক পর্যায়ে জড়িয়ে পড়েন সংসার জীবনে।
সংসার আর জীবন যুদ্ধে যখন তিনি ব্যতিব্যাস্ত হয়ে পড়লেন ঠিক তখনই সেই সময় শুরু হলো দেশে গন্ডগোল। সেটা ১৯৭১ সাল। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন বাঙ্গালীদের অস্তিত্ব রক্ষায় প্রত্যেক বাঙ্গালীকে মাঠে ঝাপিয়ে পরতে বলেন তখন আব্দুল জব্বারের বয়স ২৭ বছর। পরিবার পরিজন ত্যাগ করে তিনি দেশের জন্য যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হন। যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে তিনি ভারতের মিডলি ঝারকানে (চিন দেশের সিমান্ত সংলগ্ন) ১মাস সাধারণ ও ২য় মাস উন্নত ট্রেনিং গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি জন্ম ভূমিতে এসে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন।
পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, জগদল, ওমরখানা, হাড়িভাসা, পেয়াদা পাড়া,পানিমাছ পুকুরী, মামা ভাগিনা, টাকা হারা ব্রীজসহ অসংখ্য স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অপারেশন চালান। তার সঙ্গে অন্যতম ও সাহসী সহযোদ্ধা ছিলেন মোঃ মাহবুব আলম, সাবেক সচিব, আহিদার রহমান বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী ও পিন্টু রংপুর।
জীবনের বড় এক ভয়ংকর অধ্যায়ের মাধ্যমে স্বাধীন হলো বাংলাদেশ। আজ স্বাধীনতার অর্ধযুগ পেরিয়ে গেছে। যতদিন যাচ্ছে পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে তার মনে যেন কোন এক ধরনের ক্ষোভ, হতাশা আর ভয়ের সঞ্চালন হচ্ছে। তার শারীরিক অবস্থা জানতে চায়ের এক আড্ডায় তিনি প্রকাশ করলেন তার ক্ষোভ আর হতাশার কথা।
বিরবির করে বলতে লাগলেন, পাকিস্থানীদের শিকল থেকে বাঙ্গালী জাতীকে মুক্ত করতে, জাতীর জনক এবং হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমার তার মেধা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন। তিনি সকল বাঙ্গালীদের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে যার যা আছে তাই নিয়ে এদেশ কে স্বাধীন রাষ্ট্রের পরিচয় দিতে ঝাপিয়ে পড়ার নির্দেশনা দেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃজব্বার বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আমরা পিছনে না তাকিয়ে যুদ্ধের ময়দানে ঝাপিয়ে পরি। ৯ মাস যুদ্ধের পর এ দেশে বাংলাদেশের পতাকা উড়ার ইতিহাস সৃষ্টি হয়। অথচ চক্রান্তকারীরা বঙ্গ বন্ধুকে বাঁচতে দেয়নি। কিন্তু তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে তারই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আজ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন দক্ষতার সঙ্গে।
তিনি বলেন, যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ইতিহাস আর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্মানে নজির সৃষ্টি করেছেন। শুধু তাই নয় মুক্তিযোদ্ধা ,তাদের সন্তান. নাতী নাতনীদের জন্য যা করেছেন তা অতিতের রেকর্ড ভঙ্গ করে বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। অথচ যখন দেখি আমার সামনে দিয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আর ভুয়া শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা সরকারের সকল সুবিধা ভোগ করে মিটিমিটি হাসে। তখন হতাশা গ্রাস করে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি বলেন, আমি দির্ঘদিন যাবত ডোমার থানার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ছিলাম তখন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলো ১০০ জনের কিছু বেশি এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ছিলো মাত্র ৫ জন। তারা হলেন ১.শহীদ জহুরুল হক ২.শহীদ আহাদুল প্রধান ৩.শহীদ মোজাম্মেল হক ৪.শহীদ ধীরাজ ও ৫.শহীদ মিজান। অথচ এতো বছর পর শুনতেছি ডোমারে মুক্তিযোদ্ধা ২৫৬ জন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাও বৃদ্ধি পেয়েছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম সংযুক্তি বিযুক্তিও হয়েছে। এমন অনেক ঘটনা। এমনটা কি করে হয়? এটা কি করে সম্ভব?
তিনি বলেন, একটা বিষয় সকলেরই মনে রাখা উচিৎ যে এটা কোন রাজনৈতিক বিষয় নয়, যারা ভুয়া পরিচয় দিয়ে সরকারী সুবিধা ভোগ করছে তারা কোন দলের হতে পারে না, তারা মুক্তিযোদ্ধার স্বপক্ষের কিংবা কোন দলের নয়, এরা সুবিধাবাদী। যা প্রকৃত মক্তিযোদ্ধাদের জন্য কলঙ্ক।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্শন করে তিনি বলেন, সর্ব্বোত্তম তদন্ত ও যাচাই বাছাই করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ও ভুয়া শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বাতিল করে কলঙ্ক মুক্ত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা সকলের কাম্য।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর জব্বার বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ শুনে আমরা যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধের স্মৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, যুদ্ধের প্রত্যেকটি দিন ছিল আতঙ্কের। মৃত্যু ভয়কে তুচ্ছ বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। তাই বর্তমান সরকারের নিকট তিনি আবেদন করেছেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করার।
এএজেড