কাদা-পানিতে একাকার মহাসড়ক, দুর্ভোগ চরমে
দীর্ঘ চার বছর ধরে কাজ চলছে মহাসড়কের। বৃষ্টি হলেই পানি আর কাদায় একাকার হয়ে যায় সড়ক। চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয় পথচারী ও পরিবহন যাত্রীদের। খানাখন্দে ভরা সড়কটিতে সন্তান প্রসবসহ প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। রৌমারীতে উপজেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র শাপলা চত্বর (ভোলামোড়) থেকে উপজেলা প্রশাসন গেইট পর্যন্ত ২০০ মিটার মহাসড়কটি খানাখন্দে ভরা।
শনিবার মধ্যরাতে হওয়া বৃষ্টি হওয়ায় প্রায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে ব্যস্তময় এ মহাসড়কটি। সোমবার দুপুরে জামালপুর-ধানুয়া কামালপুর-রৌমারী-দাঁতভাঙ্গা মহাসড়কের কুড়িগ্রাম অংশের রৌমারী উপজেলা শহর এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
জানা গেছে, জামালপুর-ধানুয়া কামালপুর-রৌমারী-দাঁতভাঙ্গা মহাসড়কের কুড়িগ্রাম অংশের সাড়ে ৩১কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ ও সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হয় ৩৩২ কোটি ১০লাখ টাকা। ২০১৯ সালে এ সড়কের কাজ শুরু হয়। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরও কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে নেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তাদের নজরদারীর অভাবে দীর্ঘ দিনেও শেষ হয়নি এ সড়কটির কাজ। এতে দুর্ভোগে রয়েছেন মানুষ। এদিকে সড়কের বেহাল অবস্থা ও দীর্ঘ দিনেও কাজ শেষ না হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বইছে সমালোচনার ঝড়।
দিপুল ইসলাম নামের ফেসবুক আইডিতে এ মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কয়েকটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, 'দেশ থেকে হানাদার মুক্ত করেছি, কিন্তু কাদা মুক্ত হতে পারিনি'। সেখানে মো. হাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি মন্তব্যে লিখেছেন, 'উন্নয়নের জোয়ারে কাদা মাটিতে হাবুডুবু খাচ্ছে রৌমারী'।
ওই পোস্টে মন্তব্য করেছেন রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মুরাদ লতিফ। তিনি লিখেছেন, 'আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড ও কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ছাড়া আমাদের কিছুই করার নেই'। এ সড়কে অটো-বোরাক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন লিটন মিয়া, রুহুল আমিন, ভুট্টু মিয়া, রাশেদুল ইসলাম ও আকবর আলী।
তাঁরা বলেন, উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গাচুড়া অবস্থায় থাকলেও তা মেরামতে কোনো উদ্যোগ নেই। গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রায় সময় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। বিকল হয় গাড়ির যন্ত্রাংশ। এতে যা আয় হয়, তা গাড়ির মেরামতের পিছনে তা খরচ হয়। দুর্ভোগ কমাতে সড়কটির নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করার দাবি জানান তাঁরা।
পথচারী রাসেল মিয়া বলছিলেন, এ সড়কে পায়ে হেটে চলা যায় না। কাদা আর পানিতে হাবু-ডুবু খাচ্ছে। কাপড়-চোপড় নষ্ট হয়ে যায়। সড়কের পাশে দোকানদার আব্দুল হাকিম বলেন, যানবাহন চলার সময় সড়কে জমে থাকা কাদা-পানি ছিটকে গিয়ে দোকানে পড়ে। এতে দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে যায়।
রৌমারী উপজেলা মটর মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম মিয়া জানান, সড়কের বেহালদশার কারণে বিকল হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। এতে পরিবহন মালিকদের লাভের বদলে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে জানালেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
জনদুর্ভোগের কথা স্বীকার করেন কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলামের ভাষ্য, জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সড়কের এই অংশটুকুতে কাজ করা যাচ্ছে না। জুনের মধ্যে জটিলতা নিরসনের সম্ভবনা রয়েছে বলে দাবি করেছেন।
এএজেড
