দুই সন্তানের অমানুষিক নির্যাতনে বৃদ্ধ বাবা এখন হাসপাতালে
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদাহ ইউনিয়নের দুবাআছরি গ্রামের আব্দুল হক ওরফে হানিফ উদ্দিন (৭৭)। তিন ছেলের জনক এই কৃষকের জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার সম্পদ। ভরণপোষণ পাওয়া তো দূরের কথা, শেষ বয়সে ছেলেদের দ্বারা বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়েছেন আব্দুল হক। এমনকি নিজ আবাদি জমিতে নামতে গেলে দুই ছেলে মিলে তাকে পিটিয়ে আহত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ঘোগাদহের দুবাআছরি গ্রামে আব্দুল হকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। আহত আব্দুল হক কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন।
শুক্রবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুল হক জানান, ভিটাবাড়ি ও আবাদি জমি সহ তার প্রায় দুই একর সম্পত্তি রয়েছে। তার বড় ছেলে ওয়াহেদ আলী (৪৫) ও ছোট ছেলে রফিকুল ইসলাম (২৯) তার জমিজমা লিখে নিতে তাকে নানা ভাবে চাপ দিতে থাকেন। তিনি তা না করায় দুই ছেলে মিলে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। তার জমির সকল কাগজপত্র বড় ছেলে নিজের কাছে নিয়ে নেন। বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে তিনি এখন অন্যের বাড়িতে থাকেন। মেজো ছেলে আনিছুল হকের বাড়িতে খাওয়া দাওয়া করেন।
এবছর তার সকল জমি দখলে নিয়ে দুই ছেলে আবাদ করছে। শুক্রবার তিনি একটি জমিতে ধান লাগাতে গেলে বড়ছেলে ওয়াহেদ আলী ও ছোট ছেলে রফিকুল ইসলাম তার দিকে তেড়ে আসেন ও মারপিট করেন। একসময় তারা কোদাল নিয়ে তাকে কোপাতে এলে মেজো ছেলে আনিছুল এগিয়ে আসে। তখন কোদাল লেগে আনিছুলের পা কেটে যায়। স্থানীয়রা আব্দুল হক ও আনিছুলকে উদ্ধার করে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
আব্দুল হক বলেন, সম্পত্তি লিখে নিতে না পেরে আমার দুই ছেলে আমাকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিছে। আমার জমিতে তারা আমাকে নামতে দেয় না। শুক্রবার আমি জমিতে গেলে তারা দুই ভাই মিলে আমাকে পিটিয়েছে। আমি এর বিচার চাই। পুলিশে অভিযোগ করা বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুল হক বলেন, এর আগে থানায় অভিযোগ করছি। কিন্তু কোনও কাজ হয় নাই।
দুই ভাইয়ের নির্যাতনে ভিটেছাড়া হয়েছেন আনিছুল হক। বাবার সম্পদ থাকলেও তিনি প্রায় ৫ বছর ধরে সরকারি আশ্রয়ণের ঘরে বসবাস করছেন, এমন দাবি করে আনিছুল বলেন, আমার দুই ভাই আমাকে ও বাবাকে ভিটেছাড়া করেছেন। নিজের ঘরবাড়ি ও সম্পত্তি থাকলেও আমার বাবা প্রায় চার বছর ধরে বাড়িছাড়া। চেয়ারম্যান-মেম্বার, থানা পুলিশ করেও কোনও বিহিত পাইনা।
তবে বাবা এবং ভাইয়ের এমন অভিযোগকে সম্পূর্ণ অসত্য এবং বানোয়াট বলছেন অভিযুক্ত ছোট ছেলে রফিকুল। রফিকুল বলেন, বাবা তার নিজ বাড়িতেই আমাদের সাথে থাকেন। দুই দিন থেকে তিনি নিজে থেকে অন্যের বাড়িতে থাকেন। তার বন্ধক রাখা একটি জমি আমার বোন জামাই খুলে নিয়েছেন। আমরা সেই জমিটা বর্গা নিয়ে আবাদ করছি। বাকি জমি আমার বাবা ও মেজো ভাই (আনিছুল) আবাদ করেন।
বাবার ওপর হামলার প্রশ্নে রফিকুল বলেন, বিচনের জমিতে (বীজতলা) আমরা হাল দিয়ে সার দিয়েছিলাম। ওই জমিতে মেজো ভাই ধান লাগাতে এলে মা সহ আমরা বাধা দেই। এসময় আমার বাবা কোদাল দিয়ে মাকে কোপাতে আসেন। আমরা বাধা না দিলে বরং বাবা কুপিয়ে মাকে মেরে ফেলতো। আপনারা এলাকায় এসে খোঁজ দিয়ে সব যাচাই করেন।
তবে আব্দুল হকের ভাতিজা আনিছুর রহমান বলেন, ওয়াহেদ ও রফিকুল মিলে আব্দুল হককে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। তারা সম্পত্তির জন্য তাদের বাবার ওপর বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করেন।
ঘোগাদহ ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড সদস্য আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই পরিবারের এক ছেলে ও আব্দুল হক মিলে এক গ্রুপ আর দুই ছেলে ও মা মিলে আরেক গ্রুপ তৈরি হয়েছে। আব্দুল হক তার মেজো ছেলেকে ভিটের অংশ দিতে চাইলে বড় ছেলে ওয়াহেদ তাতে বাধা দেন। এ নিয়ে তাদের দ্বন্দ্ব চলছে। আমরা কয়েকবার জায়গা ভাগের জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু ওয়াহেদ সেসময় বাড়িতে থাকেন না। পরে হাল ছেড়ে দিয়েছি।
শনিবার দুপুরে আব্দুল হকের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শঙ্কা কাটিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে তিনি গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন। তবে সম্পত্তির ভোগদখল নিয়ে এখনো আশঙ্কা কাটেনি তার।
এএজেড