রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার বেহাল দশা
রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার অধিকাংশ প্রাণী বয়সের ভারে বুড়ো হয়ে গেছে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। অনেক প্রানীর গড় আয়ু কাল অতিক্রম হয়েছে কয়েক বছর আগে। বয়সের ভারে এসব পশু-প্রানী খাঁচায় পড়ে আছে অনেকটা নির্জীব অবস্থায়। দীর্ঘদিন ধরে বাঘ ও হায়েনার খাঁচা শূন্য। উর্বর প্রজনন খ্যাত এই চিড়িয়াখানায় জন্ম নেয়া একাধিক বাঘ ও সিংহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্যত্র। পশু সংকট, নতুন ও বিরল প্রজাতির পশু-পাখি না থাকায় চিড়িয়াখানায় আসা দর্শনার্থী হতাশ হচ্ছেন এখানে এসে। একঘেয়েমি যেমন কাটছে না দর্শনার্থীর তেমনি তারা নিত্য নতুন ও দুর্লভ প্রাণী দর্শন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে আকর্ষণীয় প্রাণীর মধ্যে অন্যতম দুটি সিংহের একটির বয়স সাড়ে ১৭ বছর এবং অন্যটির বয়স সাড়ে ১৯ বছর। গড় আয়ু ১৫ বছর। সিংহ দুটির আড়াই বছর ও সাড়ে চার বছর আগে গড় বয়স পার হয়েছে। একটি মাত্র ভালুকের বয়স ৩৫ বছর অতিক্রম করেছে। গড় আয়ু ৪০ বছর।
এছাড়া ২২-২৫ বছরের দুটি কুমির, ১৮-২০ বছরের তিনটি ঘড়িয়াল এবং ১৮ বছরের একটি সজারু রয়েছে।বাঘ শূন্য হয়ে গেছে এক বছর আগে। চিড়িয়াখানায় বাঘ মারা গেছে ২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারী। হায়েনা মারা গেছে প্রায় ১২ বছর আগে। এছাড়া বয়সের ভারে রোগাক্রান্ত রয়েছে আরো কয়েকটি প্রাণী। কয়েক বছর আগে চিড়িয়াখানায় জন্ম নেয়া বেশ কিছু বাঘ ও সিংহ শাবক নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্যত্র।
রংপুর নগরী জেলা পুলিশ লাইনসের ১৯৮৯ সালে বিপরীতে ২২ দশমিক ২৮ একর জমিতে সাবেক হর্টিকালচারের জায়াগায় স্থাপিত হয় দ্বিতীয় সরকারি চিড়িয়াখানা।চিড়িয়াখানায় ৩২ প্রজাতির ২৫৩টি পশুপাখি আছে। প্রায় চার বছর আগে নতুন প্রাণী জিরাফের জন্য বিশাল আকৃতির কংক্রিটের ঘর বানানো হয়েছে। জিরাফ আনতে না পারায় খালি পড়ে আছে ঘরটি। পাশাপাশি বাঘের নির্দিষ্ট খাঁচাসহ আরও কয়েকটি খাঁচা প্রানীর মৃত্যুর কারণে খালি পড়ে আছে।
নীলফামারী জেলা থেকে দুই শিশু সন্তান ও স্ত্রী সহ ঘুরতে আসা দর্শনার্থী জাহিদ ফারুক বলেন, ছেলেদের প্রানী দেখাতে চিড়িয়াখানায় এসেছি। সন্তানদের অনেক দিনের ইচ্ছা বাঘ, জিরাফ, সিংহ এবং ভালুক দেখবে। এখানে এসে তাদের কোনো আশাই পূরণ হলোনা। বিশাল আকৃতির ঘর দেখে কাছে গিয়ে দেখি ফাঁকা পড়ে আছে। জানতে পারেননি কেন জিরাফ আনতে পারেনি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। বাঘের খাঁচায় গিয়েও হতাশ হন। বাঘও মারা গেছে। সিংহ ও ভালুকও আমার সন্তানদের হতাশ করেছে। পশু দুটি খাঁচার এমন কোনায় শুয়ে ছল যে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও ওদের দর্শন পাওয়া যায়নি।
চিড়িয়াখানায় পশু-পাখি দেখাশোনা কেয়ার টেকার নাম প্রকাশ নাকরার শর্তে বলেন, রংপুর চিড়িয়াখানার প্রতি কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি নেই। এখানে জন্ম নেয়া একাধিক বাঘ ও সিংহের বাচ্চা নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্য চিড়িয়াখানায়। এ চিড়িয়াখানায় এখনো হরিণের প্রজনন অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি জলহস্থী বাচ্চা দিয়েছে। বর্তমানে বাঘশূন্য চিড়িয়াখানা। সিংহ ও ভাল্লুক সহ একাধিক বয়স্ক পশু-পাখির স্থানে নতুন প্রাণী আনার কোন লক্ষণ নেই।
রংপুর চিড়িয়াখানার ইজারাদার ও ঠিকাদার মোঃ হযরত আলী বলেন, নতুন আকর্ষণীয় এবং বিরল প্রজাতির পশুপাখি না থাকায় দর্শনার্থীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। নতুন প্রাণী এলে দর্শনার্থী বৃদ্ধি পায়। জলহস্তীর বাচ্চা হওয়ার খবরে অনেকদিন চিড়িয়াখানা সরগরম ছিল। কয়েক বছর আগে জিরাফ আসবে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে দর্শনার্থীর মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়ে। স্বভাবত দর্শনার্থীর মধ্যে একটা বিরাট অংশ শিশু। বাঘ, সিংহ, ভালুক, জিরাফ, জেব্রা দেখতে পছন্দ করে তারা। বর্তমানে বেসরকারি পর্যায়ে অনেক আধুনিক পর্যটন স্পট গড়ে উঠেছে। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকতে চিড়িয়াখানায় নতুন পশু-পাখি আনার কোনো বিকল্প নেই।
রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার জু-অফিসার ডাঃ এইচ এম শাহাদৎ (শাহিন) বলেন, রংপুর চিড়িয়াখানার সার্বিক বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে নিয়মতি অবহিত করা হয়েছে। এক ব্যক্তি চিড়িয়াখানার নতুন প্রাণী আনাসহ সার্বিক উন্নয়নে খোলা চিঠি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানোর পর নতুন করে তথ্য চাওয়া হয়েছে।
চিড়িয়াখানার পশুপাখির অধিকাংশই বয়স্ক স্বীকার করে তিনি বলেন, দর্শনার্থী ধরে রাখার জন্য গন্ডার, ক্যাঙ্গারু, হায়েনা, জেব্রা, উল্লুকসহ একাধিক আকর্ষণীয় প্রাণী চাওয়া হয়েছে। প্রজননের জন্য যে প্রাণীর জোড়া নেই সেগুলোর বিপরীত লিঙ্গের প্রাণী চেয়ে পত্র মারফৎ জানানো হয়েছে।
এএজেড