ভাষাসৈনিকদের নাম জানলেও শহীদ মিনার চেনে না শিশু শিক্ষার্থীরা!
রংপুর বিভাগে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য চলছে ঢাকঢোল পিটিয়ে নানা আয়োজন। কিন্তু এখানকার অনেক কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা জানে না শহীদ দিবস আর শহীদ মিনার কী। পাঠ্যবইয়ে তারা সালাম, বরকত, রফিক, শফিক ও জব্বারের নাম জানলেও জানে না এরা কারা। মহান ভাষা আন্দোলনের এ দিনটিকে তারা অন্য দিনের মতোই ছুটির দিন মনে করে। ঐতিহাসিক প্রতীক শহীদ মিনার বাংলা, বাঙালী এবং বাংলাদেশের ভাষা, সংস্কৃতি ও আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাসের স্বাক্ষী।বিভাগের ৫০ শতাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সেই শহীদ মিনার এখনো স্থাপন করা হয়নি।
মহান ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর আর স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার গড়ে না ওঠায় শিক্ষার্থীরা সালাম-রফিক-বরকত-জব্বারদের আত্মত্যাগের ইতিহাস জানতে পারছে না। শুধু তাই নয় বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানও করতে পারছে না তারা। এনিয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক সহ সচেতন মহলে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি দ্রুত সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে সকল বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করার দাবী জানিয়েছে।
জানা গেছে, রংপুর বিভাগের আট জেলায় ৯ হাজার ৫৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।যার মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে ৪ হাজার ৯২৫টিতে।৪ হাজার ৬১৯টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনারের অস্থিত্ব নেই।এ বিভাগের মধ্যে দিনাজপুর জেলায় শহীদ মিনার রয়েছে প্রায় শতভাগ বিদ্যালয়ে। সবচেয়ে কম শহীদ মিনার রয়েছে গাইবান্ধা জেলায়।
স্থানীয়রা জানায়, যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, তারা জাতীয় দিবসগুলোতে বাঁশে কাগজ মুড়িয়ে দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে শিক্ষার্থীরা। সেখানের ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ করা ভাষা শহীদ ও সংগ্রামীদের। কেউ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ কারণে দ্রুত সময়ে সবগুলো বিদ্যালয়েই শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি করছেন সর্বস্তরের মানুষ।
রংপুর প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলার ১ হাজার ৪৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার রয়েছে ৮৩৫টিতে, বাকি ৬২৩টিতে নেই। ঠাকুরগাঁওয়ে ৯৯২টির মধ্যে ৩৫৪টিতে রয়েছে, বাকি ৬৩০টিতে নেই। পঞ্চগড়ে ৬৬৩টির মধ্যে রয়েছে মাত্র ১২৩টিতে নেই ৫৫৪টি বিদ্যালয়ে।
দিনাজপুরে ১ হাজার ৮৭০টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১ হাজার ৮৬৪টিতে রয়েছে। এই জেলায় মাত্র ৬টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। নীলফামারীতে ১ হাজার ৮৫টির মধ্যে রয়েছে ৮৩২টিতে, নেই ২৫৩টিতে। লালমনিরহাটে ৬৬৮টির মধ্যে রয়েছে ৪৪৭টি নেই ২২১টিতে। কুড়িগ্রামে ১ হাজার ২৪০টির মধ্যে রয়েছে ২১৬টি রয়েছে, বাকি ১ হাজার ২৪টিতে নেই। গাইবান্ধায় ১ হাজার ৪৬৫টির মধ্যে রয়েছে ২৫৪টির নেই ১ হাজার ২১০টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার।
রংপুর জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই শিক্ষক-শিক্ষার্থী অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিবসটি পালন করে থাকেন। কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে।
ভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পরেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেন শহীদ মিনার নির্মাণ করা হলো না-এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা, বিদ্যালয় গুলোর প্রধান শিক্ষকরা তাদের বলেছেন, বিদ্যালয় গুলোতে সরকারিভাবে শহীদ মিনার নির্মাণে বরাদ্দের অভাব রয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণ বেসরকারিভাবে কেউ এগিয়ে আসে না। অনেক বিদ্যালয়ে জায়গা স্বল্পতার কারণে শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তারা বলছেন ভাষা শহীদদের স্মরণ করতে পর্যায়ক্রমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার তৈরি করতে হবে।
রংপুরের ভাষা সৈনিক আশরাফ হোসেন বড়দা বলেন, সরকারি-বেসরকারি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা উচিত। এই মিনার আমাদের ইতিহাস ও অর্জনের অন্যতম স্তম্ভ। বিভাগের বেশির ভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। জাতীয় দিবসগুলোতে শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারছে না ইতিহাস চর্চার সুযোগও পাচ্ছে না। যে বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই সেসব বিদ্যালয়ে জরুরি ভিত্তিতে শহীদ মিনার নির্মাণের সরকারের সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
রংপুর বিভাগীয় প্রাথমিকের উপ-পরিচালক মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই সেই বিদ্যালয়ের তালিকা করে শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। বেশকিছু বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হচ্ছে।
এএজেড