পঞ্চগড়ে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ: ৫ মামলায় আসামি ১২০০
পঞ্চগড়ে পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু, সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেনসহ ৮১ নেতা-কর্মীরা নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১১০০-১২০০ জনকে আসামি করে পঞ্চগড় সদর থানায় ৫টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রবিবার (২৫ ডিসেম্বর) পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপি-জামায়াত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, পুলিশের উপর বল প্রয়োগ, সড়ক অবরোধ, জানমালের ক্ষয়ক্ষতি, হামলা, ভাঙচুর এবং ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে এ মামলাগুলো করা হয়েছে।
এদিকে শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ৮ নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের ওই ৫ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সদর উপজেলার জেলা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা কানন (২৮), আটোয়ারী উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আকতারুজ্জামান আতা (৪৫), বিএনপির সমর্থক সিদ্দিকুল ইসলাম (৩৫), দেবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মেহেদি হাসান তুহিন (৩৫), বিএনপি সমর্থক রেজাউল ইসলাম (৪৫), বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রাজু আহমেদ (২৮), তেঁতুলিয়া উপজেলার জামায়াতের কর্মী জয়নাল আবেদিন (৪০) ও সাইফুল ইসলাম (৬৫)।
মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ মিঞা।
এসব মামলায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। পুরো জেলায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের টহল জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষে নিহত বিএনপি নেতা আব্দুর রশিদ আরেফিনের মরদেহ ময়নাতদন্তের পর রবিবার দুপুরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের হরিপুর জোতদেবীকান্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাধিত করা হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন নেতাসহ জেলা বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা জানাজায় অংশ নেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ নির্বিচারে হামলা করেছে। লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে। পঞ্চগড়ের মতো জেলায় আগে কখনো এমনটি হয়নি। আমাদের শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশের মারধর ও টিয়ার শেলের কারণে আব্দুর রশিদ আরেফিন নামে আমাদের এক নেতার মৃত্যু হয়েছে। যখনি আমাদের কোনো নেতা পুলিশের নির্যাতনে মারা যায় তখনি পুলিশ সেটিকে হার্ট অ্যাটাক বলে প্রচার করে। পুলিশ এখন একটি দলের হয়ে কাজ করছে। পুলিশের এমন আচরণের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করছি। একই সঙ্গে এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ২৬ ডিসেম্বর সারা দেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হবে। এরপর ২৭ ডিসেম্বর নিহতের স্বজনদের খোঁজ নিতে কেন্দ্রীয় নেতারা আসবেন।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, গতকাল বিএনপি নেতারা পুলিশের নির্দেশনা অমান্য করে পুলিশের উপর হামলা করে এবং ভাঙচুর চালায়। জানমালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করতে বাধ্য হয়। এ ঘটনায় ৫টি মামলা হয়েছে। মামলায় ৮১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১১০০-১২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষকে কোনো হয়রানি করা হবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। আমাদের কাছে ছবি রয়েছে। সেগুলো যাচাই করে ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে। আর যে ব্যক্তি মারা গেছেন তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে মেডিকেল বোর্ড আমাকে নিশ্চিত করেছে। সংঘর্ষের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এসজি