প্রধান শিক্ষক কর্তৃক সহকারী শিক্ষকদের হেনস্তা, থানায় অভিযোগ
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার পূর্ব রামরামসেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক কর্তৃক বহিরাগত লোকজন দিয়ে সহকারী শিক্ষকদের হেনস্তা, গালিগালাজ এবং বিদ্যালয়ে আসলে তাদের পা ভেঙ্গে দেওয়ার হুমকি প্রদানের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) বিকালে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছমির উদ্দিন শিক্ষকদের পক্ষে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগে জানা যায়, কিছু দিন আগে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাঃ খাদিজা বেগম স্বাক্ষর জালিয়াতির মামলায় হাজতবাস করেন। হাজতবাস করার কারণে কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে সহকারী শিক্ষক ছমির উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককের দায়িত্ব দেন। এমতাবস্থায় বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ শেষ হলে অফিসের নির্দেশনা ও ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে অনুমোদনের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসে জমা দেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছমির উদ্দিন। এর কিছুদিন পর সাময়িক বরখাস্ত তুলে নেওয়া হলে গত ৮ ডিসেম্বর প্রধান শিক্ষক মোছাঃ খাদিজা বেগম বিদ্যালয়ে যোগদান করে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছমির উদ্দিন কর্তৃক গঠন করা কমিটি পছন্দ না হওয়ায় প্রধান শিক্ষক যোগদান করার পর থেকেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছমির উদ্দিনসহ অপর দুই সহকারী শিক্ষক তুলশী রানী ও সুমনা সরকারের উপর দোষারোপ করে গালিগালাজ, হুমকি-ধামকি অব্যাহত রাখেন।
মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সকাল ১১টার দিকে সহকারী শিক্ষকরা বিদ্যালয়ে যথারীতি পাঠদান শুরু করলে প্রধান শিক্ষক মোছাঃ খাদিজা বেগম আবারও তাদের উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করতে থাকেন। শিক্ষকরা এর প্রতিবাদ করলে খাদিজা বেগম মোবাইল করে তার স্বামীকে লোকজন নিয়ে স্কুলে আসতে বলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রধান শিক্ষক খাদিজা বেগমের স্বামী আইয়ুব আলী ১০/১৫ জন লোক নিয়ে এসে সহকারী শিক্ষকদের উপর চড়াও হন। প্রাণভয়ে সহকারী শিক্ষকরা একটি কক্ষে আশ্রয় নিলে বহিরাগত লোকজন ওই কক্ষের
দরজা-জানালায় লাথি মেরে ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করে। এ সময় শিক্ষার্থীরা ভয়ে চিৎকার করতে থাকে। পরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে প্রধান শিক্ষককের স্বামীসহ বহিরাগতরা ‘আগামীকাল বিদ্যালয়ে আসলে মেরে পা ভেঙ্গে দেওয়া হবে’-এই হুমকি দিয়ে চলে যায়।
এ ব্যাপারে সহকারী শিক্ষক তুলশী রানী ও সুমনা সরকার বলেন, প্রধান শিক্ষক সন্ত্রাসী লোক দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে কিংবা বিদ্যালয় চলাকালীন আবারও আমাদের উপর হামলা করতে পারে। এ অবস্থায় আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
সহকারী শিক্ষক ছমির উদ্দিন বলেন, ঘটনার বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে মৌখিকভাবে জানালে তিনি থানায় ও শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়ায় মঙ্গলবার সন্ধায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পূর্ব রামরাম সেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাঃ খাদিজা বেগমের সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে তিনি জানান, সহকারি শিক্ষকদের অভিভাবকরা ভয়-ভীতি, গালিগালাজ ও মারতে উদ্যত হয়েছে। আমি বা আমার স্বামী কিছুই করিনি। স্কুলে আসেন বিস্তারিত কথা হবে বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আকবর কবীর বলেন, ঘটনা শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) ফজলুর রহমান জানান, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসআইএইচ