মাঠজুড়ে সরিষা ফুল, বাম্পার ফলনের আশা কৃষকদের
পৌষের সকালে শিশির ভেজা ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়ানো কৃষকের ফসলের মাঠ। আর এই বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে যেন চোখ জুড়ানো হলুদ ফুলের সমারোহ। মাঠের চারিদিকে তাকালেই দেখা যায় সরিষা ফুলের হলুদ রঙের দৃশ্য। যেন মাঠ জুড়ে হলুদ রঙে সাজিয়ে তুলেছে প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য্য। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সরিষা ফুলের এই নয়নাভিরাম দৃশ্য পাল্টে দিয়েছে দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামকে। এই জেলায় ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরীসহ বিভিন্ন উপজেলার ধরলা, বহ্ম্রপুত্র ও বারোমাসিয়াসহ ১৬টি নদ-নদীর চরাঞ্চলগুলোসহ কৃষকের বিস্তীর্ণ দৃশ্যপট। সরিষার মাঠজুড়ে একদিকে মৌমাছি গুনগুন শব্দে মধু সংগ্রহ করছে। অন্যদিকে প্রজাপতির দল এক ফুল থেকে আরেক ফুলে যাচ্ছে। এই অপরুপ প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই যেন এক মনোমুগ্ধকর মুহূর্ত। হলুদ রঙের ফসলের মাঠ দেখলেই প্রকৃতি প্রেমিদের মন ভরে যায়। বিশেষ করে বিকালে প্রকৃতি প্রেমিরা হলুদ ক্ষেতের মনোমুগ্ধকর মুহূর্তগুলো উপভোগ করতে দেখা যায়।
ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা, শিমুলবাড়ী ও নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত বছরের চেয়ে এই বছর আবহাওয়া অনুকুল থাকায় সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দেওয়ায় প্রান্তিক চাষিদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা কৃষকের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করায় কৃষকরা আমন ধান ঘরে তোলার সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চলের প্রান্তিক চাষিরা একই জমিতে সরিষা চাষাবাদ করেছে। কৃষি বিভাগ প্রতিনিয়ত কৃষকের সরিষা ক্ষেত দেখে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
আরও জানা গেছে, সরিষা একটি লাভজনক ফসল। সরিষার ফলন ঘরে তোলার পর একই জমিতে বোরো চাষ করবেন কৃষকরা। স্বল্প খরচে ও কম পরিশ্রমে সরিষার জমিতে ইরি-বোরো আবাদ হওয়ায় এবং কৃষকরা লাভবান হওয়ায় দিন দিন এ অঞ্চলে সরিষার চাষবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দেওয়াসহ সরিষার ভালো দামের আশাও করছেন ওই সব প্রান্তিক চাষিরা।
ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কুরুষাফেরুষা গ্রামের কৃষক আলম মিয়া জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনি এ বছর ৪ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষার চাষাবাদ করেছেন। গাছে গাছে প্রচুর পরিমাণে ফুল ধরায় আশানুরুপ ফলন হবে বলে মনে করছেন তিনি।
ফলন ভালো দেখা দেওয়ায় বিঘা প্রতি ৫ থেকে ৬ মন করে সরিষা ঘরে তুলবেন বলে আশা করছেন এই কৃষক।
একই উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়ভিটা চরাঞ্চল এলাকার কৃষক এছাহক আলী ও বকুল মিয়া বলেন, তারা প্রত্যেকেই ধরলার চরে চার বিঘা জমিতে সরিষার চাষাবাদ করেছেন। প্রতি বছরই চরাঞ্চলের জমিগুলোতে সরিষার চাষাবাদে লাভবান হন তারা। আমন ধান ঘরে তোলার সঙ্গে সঙ্গে আমন ক্ষেতের জমিতেই কম খরচে সরিষার আবাদ করে থাকেন। সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে তারা ইরি-বোরোর চাষাবাদ খরচ মেটানো সম্ভব হয় বলে জানান চাষিরা। তবে এ বছর সরিষার ফলন ভালো হওয়ায় ওই চরাঞ্চলের শত শত চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ৯ উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চল ও দাসিয়ারছড়াসহ মোট ১৬ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষবাদ করেছে চাষিরা। সরিষা চাষাবাদের জন্য ২২ হাজার ৯০০ জন কৃষকদের মাঝে বিনা মূল্যে সরিষার বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়াও কৃষি বিভাগ সব সময় কৃষকের মাঠে মাঠে গিয়ে সর্বাত্বক সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আশা করছি চাষিরা সরিষা চাষে লাভবান হবেন।
এসআইএইচ