রংপুরে চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা
শস্য ভান্ডার বলে পরিচিত রংপুরে খাদ্য বিভাগ কর্তৃক মিলারদের কাছ থেকে চাল কেনার কার্যক্রম শুরু করলেও চালের মূল্য সরকারি ক্রয় মূল্যের চেয়ে বাজারে বেশি হওয়ায় খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চাল সরবরাহ করার চুক্তি সম্পাদনে অনীহা প্রকাশ করছে চালকল মালিকরা। জেলার ৭২২ জন মিলারের মাধ্যমে বুধবার পর্যন্ত রংপুর খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তি করেছে শতকরা ৮২ ভাগ মিলার। এ পর্যন্ত মাত্র ১ হাজার মেট্রিক টন চাল আপদকালীন সংকট মোকাবেলায় সংগ্রহ করা হয়েছে। খাদ্য দপ্তরের চাল সংগ্রহের চাহিদা ১৫ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন বলে জানান রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। এদিকে চলতি আমন মৌসুমে আমন ধানের বাজার দর অনেক বেশি হবার কারণে রংপুর জেলায় চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কা করছে খোদ খাদ্য বিভাগ।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে রংপুর জেলায় আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমি। সেখানে চাষ করা হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বৃষ্টিপাত কম হলেও স্যালো মেশিনের মাধ্যমে উচু-নীচু জমিতে আমন ধান চাষ করায় রোগ বালাই না থাকায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। চাল উৎপাদন সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি হয়েছে। ফলে জেলার চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত দুই থেকে আড়াই লাখ মেট্রিক টন চাল দেশের অন্যান্য জেলার চাহিদা মেটাতে সক্ষম বলে আশা প্রকাশ করেছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা ।
খাদ্য মন্ত্রণালয় চলতি আমন মৌসুমে সারাদেশের মতো রংপুর জেলার ৮ উপজেলায় সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে ৯ হাজার ৪৩ মেট্রিক টন ধান এবং খাদ্য বিভাগের তালিকাভুক্ত ৭২২ জন চালকল মালিকদের কাছ থেকে ১৫ হাজার ৮৩০ মেট্রিক টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। গত ৮ ডিসেম্বর হচ্ছে চালকল মালিকদের খাদ্য বিভাগের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পে-অর্ডার জমা দিয়ে চুক্তি সম্পাদন করার শেষ দিন। এ জন্য অনেক আগেই ৭২২ জন চালকল মালিকদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের নামে চাল কেনার বরাদ্দ পত্র প্রদান করে রংপুর খাদ্য অধিদপ্তর। বার বার তাগাদা দেবার পরেও চালকল মালিকরা খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনে অনীহা প্রকাশ করে আসছে। বুধবার পর্যন্ত ৮২ ভাগ চালকল মালিক খাদ্য বিভাগের সাথে চুক্তি সম্পাদন করেছে।
এ ব্যাপারে রংপুর জেলা খাদ্য কর্মকর্তা রিয়াজুর রহমান রাজু বলেন, রংপুরের ৮ উপজেলায় ৭২২ জন চালকল মালিক, যারা সকলেই খাদ্য বিভাগের তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে রংপুর মেট্রোপলিটন ১১৬ জন চালকল মালিকদের কাছ থেকে ২ হাজার ৬৩ মেট্রিক টন চাল, রংপুর সদর উপজেলায় ২ হাজার ৬৩ মেট্রিক টন, বদরগজ্ঞ উপজেলায় ৯৮১ মেট্রিক টন, মিঠাপুকুর উপজেলায় ২ হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন, পীরগজ্ঞ উপজেলায় ৪ হাজার ২৮৩ মেট্রিক টন, তারাগজ্ঞ উপজেলায় ২ হাজার ৯০১ মেট্রিক টন, গঙ্গাচড়া উপজেলায় ৮৯৪ মেট্রিক টন, কাউনিয়া উপজেলায় ৮৫৮ মেট্রিক টন এবং পীরগাছা উপজেলায় ১ হাজার ১১০ মেট্রিক টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু চালের প্রতি কেজি বাজার মূল্য খাদ্য বিভাগের চাইতে কেজি প্রতি ৩/৪ টাকা বেশি হওয়ায় চালকল মালিকরা খাদ্য বিভাগের সাথে চাল সরবরাহের চুক্তি করে চাল সরবরাহ করছে না।
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম চালের বৃহৎ মোকাম রংপুর নগরীর মাহিগজ্ঞ এলাকা। সেই এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে চালকল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রিপন চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, খাদ্য বিভাগ ৪২ টাকা কেজি দরে চাল কিনবে কিন্তু বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি চাল ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ চাল সরবরাহ করলে প্রতি কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা লোকসান হবে। এমন অবস্থায় লোকসান দিয়ে চাল সরবরাহ করা সম্ভব নয়। সেই কারণে খাদ্য বিভাগের কাছে আমাদের আবেদন সরকার যদি চালের ক্রয় মূল্য কেজি প্রতি দুই টাকা বৃদ্ধি করে তাহলে তারা চাল সরবরাহ করতে পারবে।
একই কথা জানালেন চালকল মালিক সুলতান মিয়া, আলমগীর চৌধুরীসহ অনেকেই।
সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রিয়াজুর রহমান রাজুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৮২ ভাগ চালকল মালিক চুক্তি করেছে। ইতিমধ্যে ১ হাজার মেট্রিক টন চাল ক্রয় করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে খাদ্য বিভাগের নির্ধারিত সময় ২৮ ফ্রেরুয়ারীর মধ্যে চাল কেনা সম্ভব হবে।
ধান কেনার ব্যাপারে তিনি বলেন, আপসের মাধ্যমে জেলার ৮ উপজেলা থেকে ৯ হাজার ৪৩ মেট্রিক টন ধান সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করা হবে। এখনও কোন ধান কেনা সম্ভব হয়নি।
এসআইএইচ