তৃণমূলের রাজনীতি: ঠাকুরগাঁও-২
'বিএনপি আগের চেয়ে এখন অনেক শক্তিশালী'
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঠাকুরগাঁওয়ের রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের ঘর গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছে রাজনৈতিক দলগুলো। জেলা আওয়ামী লীগ ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা সম্মেলন প্রায় শেষের দিকে। জেলার তিনটি আসনই আগামীতে দখলে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ।
পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিও তাদের শক্তির মহড়া দিতে ইতোমধ্যে ওয়ার্ড, উপজেলা ও জেলা সম্মেলন করছে। হামলা-মামলা যতই হোক নেতা-কর্মীরা রাজপথে নতুন উদ্যমে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তৃতীয় শক্তি হিসেবে জাতীয় পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) ও ইসলামী আন্দোলন ও তাদের শক্তির জানান দিতে সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী করতে মাঠে নেমেছে।
দ্বিতীয় পর্ব
ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈমুর রহমান বলেছেন, ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশনায় নির্বাচনের মাধ্যমে জেলা কমিটি গঠিত হয়েছে। নেতা-কর্মীরা একযোগে সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কাউন্সিল করে প্রতিটা সংগঠন এখন সুসংগঠিত। ঢাকাপ্রকাশ এর সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন।
তৈমুর রহমান বলেন, সরকার বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে ও মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের অরাজনৈতিক আচরণে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এখন আর পেছানোর জায়গা নেই। দুর্বার আন্দোলন করে এ সরকারকে হটানোই মূল লক্ষ্য। মামলা-হামলা মাথায় নিয়েই নেতা-কর্মীরা মাঠে কাজ করছেন। প্রত্যেক নেতার বিরুদ্ধে ডজনখানেক করে মামলা রয়েছে। এর পরও তারা জীবন বাজি রেখে রাজপথে লড়াই করে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: তৃণমূলের রাজনীতি: ঠাকুরগাঁও - ১
নির্বাচন সামনে রেখে সাজানো হয়েছে নতুন কমিটি
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে জেলার তৃণমূল নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে জনগণও স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে এসেছে। এর প্রমাণ বিভাগীয় সম্মেলনগুলো। সরকার পরিকল্পিতভাবে জনসমাবেশ ঠেকাতে যানবাহন বন্ধ এবং যেতে বাধা দেওয়ার পরও সমাবেশগুলো মহাসমাবেশে পরিণত হচ্ছে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, আগামীতে শেখ হাসিনার সরকারকে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হটিয়েই বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনব। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপি প্রতিটি জেলা উপজেলা এবং ওয়ার্ডে কমিটি করেছে। প্রায় ৯০ ভাগ কমিটির কাজ শেষ হয়েছে। সামনের নির্বাচনের আগে সব কাজ শেষ করব।
অন্যদিকে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মো: ইউনুস আলী বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। বিএনপির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সীমাহীন দুর্নীতি, মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা লুটসহ নানা অপকর্মের কারণে সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। ঠাকুরগাঁও বিএনপি আগের থেকে অনেক শক্তিশালী, উজ্জীবিত ও সাহসী।
তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ যৌথভাবে বাধা দিচ্ছে, হামলা চালিয়ে নেতা-কর্মীদের আহত করছে। আগের চাইতে বিএনপি এখন অনেক শক্তিশালী। দলে কোনো গ্রুপিং নেই। জেলার পাঁচ উপজেলা ও ইউনিয়ন সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে দুটি কারণে- একটি ভাতের অধিকার, আরেকটি কথা বলার অধিকার। বর্তমানে দুটিই অনুপস্থিত। এটি সাধারণ মানুষ মেনে নিতে পারছে না। দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির কারণে মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত হয়ে যাচ্ছে। গরিব আরও গরিব হচ্ছে। আমরা মিছিল মিটিং করলে পুলিশই না সরকারি দলের নেতা-কর্মীরাও বাধা দিচ্ছে। আমাদের নেতা-কর্মীরা আহত হচ্ছেন।
অপদিকে, ঠাকুরগাঁও যুবদলের সভাপতি চৌধুরী মো: মহেব্বুল্লাহ আবু নুর বলেছেন, আগে এই সরকারের পতন ঘটিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করতে হবে তার পর আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিয়ে ভাববো। বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই অবৈধ সরকারের পতন ঘটানো ও নিরপেক্ষ সরকার গঠনের গণআন্দোলন গড়ে তোলার কাজ করছে।
তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে মামলা-হামলায় বিএনপি আরও বেশি শক্তিশালী হয়েছে। হাজার হাজার নেতা-কর্মী রাজনৈতিক মামলায় কারা বরণ করে এবং নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে দলকে সংগঠিত রাখছে। মামলা-হামলায় হয়রানিতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে নেতা-কর্মীরা এখন ঘুরে দাঁড়াতে শিখেছে।
তিনি বলেন, সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা, উপজেলা- ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি গঠন করায় ঠাকুরগাঁও বিএনপি এখন অনেক বেশি সুসংহত ও শক্তিশালী। কেন্দ্র ঘোষিত সব কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।
জেলা বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, বর্তমান স্বৈরাচার সরকারের পতন ঘটাতে হলে আইন মেনে তা করা যাবে না। আমরা এখন কেন্দ্রের নির্দেশের অপেক্ষায় আছি, সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির চিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরার কারণেই দলে জনসম্পৃক্ততা অনেক বেড়েছে এবং তা আগামীতে আরও বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম, অর্থাৎ ২০১৩ সাল থেকে যারা ভোটার হয়েছে, তারা এই ভোটচোর সরকারকে ভোট দেবে না।
এএজেড