কাঁটাতার মাঝে রেখে দুই বাংলার মিলনমেলা

ভারত ও বাংলাদেশের দুই বাংলার মানুষদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দিনটিকে ঘিরে প্রতি বছর দুই বাংলার মানুষের থাকে বাহারি আয়োজন। কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষে দেখা হয় প্রিয়জনের সঙ্গে। আর কাঁটাতারের উপর দিয়ে ছুঁড়ে পাঠান নানা উপহার সামগ্রী।
শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার পর থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার জগদল সীমান্তের ৩৭৩ ও ধর্মগড় ইউনিয়নের ৩৭৪ এবং হরিপুর উপজেলার ৩৬৮ থেকে ৩৭১ পিলারের কাছে নাগরভিটা নদীর তীরে বসে দুই বাংলার হাজারো মানুষের মিলনমেলা।
মেলা ঘিরে বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, রংপুর ও বগুড়া এবং ভারতের কোচবিহার, আসাম, দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কলকাতাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বাইসাইকেল, অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, মিনিবাসযোগে হাজারো মানুষ সীমান্তে হাজির হয়।
স্থানীয়রা জানান, ভোর থেকে দুই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এসে জড়ো হয় সীমান্তে। দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন থাকা মানুষ একে অপরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি। সারা বছর দুই বাংলার মানুষ অপেক্ষা করে এই দিনের জন্য। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আগে থেকেই জানিয়ে দেন স্বজনরা। কে কোথায় দেখা করবেন। এ
দিনাজপুর থেকে আসা আরিফ বলেন, আমার বোন ও তার জামাইয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য এসেছি। গতবার এসেছিলাম দেখা করতে পারিনি। এবারে দেখা হয়েছে। শীতের কম্বল পাঠালাম কাঁটাতারের উপর দিয়ে। বোনের পরিবারের সবাইকে দেখে বেশ ভালো লাগল।
মেয়ের জন্য পিঠা নিয়ে আসা বৃদ্ধা সাহেলা বেগম বলেন, আমার মেয়ের বিয়ে দিছি ওই দেশের ছেলের সঙ্গে দিয়ে। মেয়ে ও জামাই পিঠা চাইছে ফোন দিয়ে। তাই আজকে পিঠা বানাই নিয়ে আসছি। নাতির দ্বারা কাঁটাতারের উপর দিয়ে পিঠা দিলাম। খুব শান্তি পাইলাম।
রাণীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম বলেন, ১৯৭৪ সালের পর উপজেলার সীমান্ত এলাকা পাক-ভারত বিভক্তির আগে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অধীনে ছিল। এ কারণে দেশ ভাগের পর আত্মীয়-স্বজনরা দুই দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তাই সারা বছর কেউ কারো সঙ্গে দেখা করতে না পারায় এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে। আজ সেই দিন, এই দিনে ভারত এবং বাংলাদেশের দুই বাংলার মানুষের মিলন মেলা ঘটে।
হরিপুর উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম শরিফুল হক বলেন, এ দিনকে ঘিরে দুই দেশের মানুষের আলাদা উৎসাহ ও উদ্দীপনা কাজ করে। আজকেও দুই দেশের মানুষের মিলনমেলা ঘটেছে। তারা উভয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের খুব কাছ থেকে দেখেছেন। যদিও কাঁটাতারের বেড়া ছিল। তবু ভালোবাসা ছিল বেশ প্রখর। সীমান্ত ঘেঁষা এলাকাগুলোতে অনেক দিন ধরে এই মিলনমেলা চলে আসছে।
এসএন
