পায়ে হেঁটে বাবা-ছেলের তেঁতুলিয়া-টেকনাফ যাত্রা
'আলোকিত বাংলার স্বপ্নযাত্রা, আমরা করব জয়' এই শ্লোগানে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেছে বাবা ও ছেলে। এই পদযাত্রার পঞ্চম দিনে প্রায় ২২০ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করে পোঁছাছেন গাইবান্ধার সমীমানায়। বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের ধাপেরহাট নামকস্থানে মহাসড়ক দেখা মিলে এই ভ্রমণকারীদের। সাদা জার্সি-ক্যাপ পরিহিত ও পিঠে ব্যাগ নিয়ে দুর্বার গতিতে হেঁটে চলেছেন গন্তব্যের দিকে। পা-গুলো যেন বাহন হয়েছে তাদের।
এই পদযাত্রাকারী ব্যক্তিরা হচ্ছেন- গাইবান্ধা পৌর শহরের ৫নং ওয়ার্ডের মধ্য গোবিন্দপুর (সাদেক চত্বর) এলাকার সাদেক আলী সরদার (৬৭) ও তার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (৩৭)। ইতোপুর্বেও ৪৯ তম মিশন পর্যন্ত ১৬২৪ কিলোমিটার পথ হেঁটে দেশ ভ্রমণে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন তারা। যা দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রচার অব্যাহত রয়েছে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার (২০ নভেম্বর) সকালে ৫০তম মিশন হিসেবে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ-ছেঁড়াদ্বীপ পর্যন্ত হেঁটে যাত্রা চলমান রয়েছে এই বাবা ও ছেলের। এ পথের দূরত্ব হবে প্রায় ১০১৫ কিলোমিটার। দীর্ঘ পথের এই ভ্রমণটি সফল হলে তাদের দাঁড়াবে ২৬৩৯ কিলোমিটার।
শুধু হেঁটে চলায় তাদের মূল উদ্দেশ্য নয়, দেশ ও জনস্বার্থে পথপ্রান্তে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাট-বাজারে গিয়ে সামাজের মূল্যবোধ বৃদ্ধিমূলক অবহিতকরণ আলোচনা করেছেন। বাল্যবিয়ে, মাদক, ধুমপান ও কিশোরগ্যাং প্রতিরোধ করাসহ সামাজিক মূল্যবোধ যেন অবক্ষয় না হয়, এসব বিষয়ে মানুষদের সঙ্গে জোড়ালোভাবে কথা বলছেন তারা। একই সঙ্গে বাবা-ছেলের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়ার বিষয়ে স্থানীয় লোকজনকে সচেতন করেছেন।
অতীতের মিশনের ন্যায় এ মিশনেও তারা সাধারণ মানুষ ও তরুণ প্রজন্মকে পায়ে হাঁটার উপকারিতা, বৃক্ষরোপণসহ বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছেন। তারা মনে করেন, বাবা-ছেলের সম্পর্ক মধুর ও বন্ধুত্বপূর্ণ থাকলে শুধু দেশ নয়, বিশ্বজয় করাও সম্ভব। এতে বিশেষ করে ছেলেরা সামাজিক অপরাধ এবং মা-বাবার সেবা করা থেকে বঞ্চিত হবেন না।
জানা যায়, গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর গাইবান্ধা সাদেক চত্বর থেকে স্থানীয় ফুলছড়ি থানা চত্বর পর্যন্ত প্রথম পথ হাঁটাচলা শুরু করেন। এখানে প্রাথমিকভাবে ২৮ কিলোমিটার হাঁটছেন তারা। এরপর পর্যায়ক্রমে গাইবান্ধা থেকে বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর-ঘোড়াঘাট-হিলি ও পঞ্চগড়- বাংলান্ধাসহ আরও বেশ কিছু স্থানে পদার্পণ করে। ওইসব স্থানগুলোতে তারা দেখছেন দেশের নানা ইতিহাস-ঐতিহ্য ও দর্শনীয় স্থানসমূহ।
সম্প্রতি গাইবান্ধা থেকে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত টানা ২২৬ কিলোমিটার হেঁটে যাওয়াসহ সিলেট থেকে জাফলং পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করেছেন। এভাবে ৪৯তম মিশন পর্যন্ত পদযাত্রা করেছেন ১৬২৪ কিলোমিটার। বর্তমানে ৫০ তম মিশনে হাঁটার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১০১৫ কিলোমিটার। আজ বৃহস্পতিবার গাইবান্ধার ধাপেরহাট পর্যন্ত অর্জন হয়েছে ২২০ কিলোমিটার। আগামী ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিনে টেকনাফে পৌঁছিতে চেষ্টা করছেন ভ্রমণকারী বাবা ও ছেলে।
আরও জানা যায়, সাদেক আলী সরদার কর্মময় জীবনে চাকরি করছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে। ইতিমধ্যে ২০০৬ সালে অবসর গ্রহণ করেছেন। এখানে চাকরি করার সুবাদে হেঁটে শরীর চর্চার অভ্যাসটুকু রয়েছে তার। এ থেকে স্বপ্ন দেখেন বিশাল লম্বা পথ হেঁটে পাড়ি দিবেন দেশান্তরে। সেই জায়গায় যাওয়ার আগেই শুরু করছেন হেঁটে চলার অনুশীলন। সফর সঙ্গী হিসেবে যোগ দিয়েছেন তার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান। পথ হাঁটার পাশাপশি সামাজিক কর্মকাণ্ডমূল আলোচনাও করছেন বা করবেন তারা।
ভ্রমণসঙ্গী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের চলমান দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে যাওয়ার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে সকল পেশা-শ্রেণির মানুষদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ করে নানা ধরণের অভিজ্ঞতা অর্জনও হচ্ছে। সেটি দেশ ও দশের কল্যাণে কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।
সাদেক আলী সরদার জানান, এক সময় চাকুরি থেকে অবসর নিয়ে শরীরে নানা রোগে বাঁসা বেঁধেছিল। এরই মধ্যে কয়েক দফায় দীর্ঘপথ হাঁটাচলা করে অনেকটাই সুস্থ আছি। যেন শরীরের শক্তি বেড়েছে কয়েকগুণ। এমন চর্চা সবার দরকার বলে মনে করি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট থেকে পদযাত্রাকালে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সাংবাদিক ও বেশ কিছু যুবক আমাদের সহযোগিতা করছেন। সেই সঙ্গে পথে পথে বিভিন্ন মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি। যা আমাদের স্বপ্নযাত্রার সহায়ক হিসেবে কাজে লাগছে। এজন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমাদের বাপ-ছেলের স্বপ্নভ্রমণ সফলতায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই।
এএজেড