ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগে অবরুদ্ধ ভূমি কর্মকর্তা

নীলফামারীর ডিমলায় পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের এক ভূমি সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি ও অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এসব অভিযোগের প্রতিবাদ করায় ওই কর্মকর্তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের শিকার হয়েছেন অনেক এলাকাবাসী। এ ঘটনায় সোমবার (২১ নভেম্বর) ভুক্তভোগী সাধারণ জনগণ ওই ইউনিয়ন ভূমি অফিস ঘেরাও করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডিমলা থানা পুলিশ।
এ সময় ওই কর্মকর্তার শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে উত্তেজিত জনতা। পরে ইউএনও ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা নূর আলমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয়রা জানায়, পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নুর আলম টাকা ছাড়া কোনো কাজ করেন না। নামজারি (নাম খারিজ), ডিসিআর ও দাখিলার জন্য তাকে আলাদা আলাদা টাকা দিতে হয়। কখনো টাকা দিলেও মেলে না নামজারি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রাখঢাক না করেই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নুর আলম থেকে শুরু করে অফিসের পিয়ন, ঘুষ-দুর্নীতিসহ সকল অনিয়মকে রূপ দিয়েছেন নিয়মে। আর এতে করে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী লোকজন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলেও কোন ফল হয় না।
খাজনার দাখিলার জন্য (ভূমি উন্নয়ন করের রসিদ) সরকার নির্ধারিত ফি এর চেয়েও অতিরিক্ত টাকা আদায় করলেও রশিদ দেয়া হয় সরকারি হিসাবেই। এভাবে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এই ইউনিয়ন ভূমি সহকারী এ কর্মকর্তা। দৌরাত্ম বেড়েছে দালাল সিন্ডিকেটেরও।
কালিগঞ্জ মৌজার বাসিন্দা আমিনুর ইসলাম বলেন, আমার ৭৫ শতাংশ জমির খাজনা রশিদ কেটে নিতে ছয় মাস ঘুরেছি। ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নুর আলম ২ লাখ টাকা চেয়েছেন। পরে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় রাজি করিয়েছি। পুরো টাকা দিলেও রশিদে লিখেছে মাত্র ১ হাজার ৬০০ টাকা।
একই গ্রামের মনিরুজ্জামান বিটুল বলেন,আমার ১ একর জমির খাজনা বাবদ ৭৩২ টাকার রশিদ দিয়ে ৫৫ হাজার টাকা নিয়েছে নুর আলম। পিয়াজী পাড়ার বাসিন্দা প্রবাসী সিদ্দিকুর রহমান ঠাকুরগন্জ মৌজায় তার ৩৫ বিঘি জমি নাম খারিজ করতে ১ মাস আগে এ ভূমি অফিসে যান।
সিদ্দিক বলেন, নামজারির জন্য ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নুর আলম খরচ বাবদ বিঘা প্রতি ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা চেয়েছেন। আমি তার কাছে অনেকবার গিয়েছি। আমি এই টাকাও দিতে পারতাছি না। আমার নামজারিও হইতাছে না।
স্থানীয় দলিল লেখক সুমন ইসলাম বলেন, তহসিলদার প্রকাশ্যেই বলেন টাকা খরচ করে এখানে এসেছি। টাকা না নিলে তো চলতে পারবো না। উপরেও তো কমিশন দিতে হয়। তিনি বলেন, আমি আজকে (সোমবার) খাজনা বাবদ ১০ হাজার টাকা দিয়েছি ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নুরকে। তিনি খাজনা রশিদ দিয়েছেন ৩ হাজার ৯০০ টাকা।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসী আরো অভিযোগ করেন, নুর আলমের ঘুষ বাণিজ্য অনিয়ম, দুর্নীতি ও তার নিয়োজিত দালাল-কর্মচারী সিন্ডিকেটের উৎপাতে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। গোটা ভূমি অফিস হয়ে উঠেছে অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া। এছাড়া এ ভূমি কর্মকর্তা কাগজ দেখে খাজনা আদায় করেন না। যাচ্ছেতাই আচরণ করে।
অভিযোগ অস্বীকার করে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নুর আলম বলেন, কারও কাছে বাড়তি কোনো অর্থ নেওয়া হয়নি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, একদম মিথ্যা অভিযোগ এটা। কেউ টাকা দেওয়ার কোনো প্রমাণ না দিতে পারবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা নুর আলমকে উদ্ধার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এএজেড
