ব্রিটিশ রাণীর শত বছরের সেলুন কোচ

রেলের শহর নীলফামারীর সৈয়দপুর। শহরজুড়ে রেলের লাল স্থাপনাগুলোর জন্য অনেকে সৈয়দপুরকে বলে থাকেন দ্য রেড সিটি অব বাংলাদেশ। এখানে রয়েছে ১৮৭০ সালে স্থাপনকৃত দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। এখানেই রাখা হয়েছে ব্রিটেনের রানীর ব্যবহৃত শত বছরের প্রাচীন একটি স্টেট ক্যারেজ বা প্রেসিডেন্ট সেলুন। বিল্ডার্স প্লেটে লেখা আছে ১৯২৭ সালে ব্রিটেনের একটি কারখানায় তৈরি হয়েছে এই সেলুন। মূলত ব্রিটেনের রানীর ভারতের বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণের জন্য সেলুনটি ভারতে আনা হয়।
দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রেলওয়েকে এই সেলুনটি উপহার হিসেবে দিয়ে যায় ব্রিটিশ সরকার। এর নম্বর-১২৬৫। স্বাধীনতার পর দেশের অনেক রাষ্ট্র প্রধান এই প্রেসিডেন্ট সেলুনে ভ্রমণ করেছেন। ১৯৮১ সালে সেলুনটি অকেজো হয়ে পড়লে সৈয়দপুর কারখানায় নিয়ে আসা হয়।
সেলুনটির উল্লেখযোগ্য দিক হলো- এটি সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি। সেলুনটির ভেতরে আছে প্রেসিডেন্টের শয়ন কক্ষ, তার স্টাফদের জন্য আলাদা দুটি রুম। সেই সময়ের বিলাসবহুল বাথরুম, বেসিন, শাওয়ার, লাইট, ফ্যান, সুইচ বোর্ড। একটি কনফারেন্স রুম। সাধারণ কোচে আটটি চাকা থাকলেও, সেলুনটিতে রয়েছে ১২টি চাকা। ব্রিটিশ রাণীর সেলুন কোচটি দেখার জন্য প্রতিদিনেই দুর-দুরান্ত থেকে মানুষজন কোচটি এক নজর দেখার জন্য এখানে ভিড় করেন।
কারখানার ক্যারেজ ইনচার্জ মোমিনুল ইসলাম বলেন, এটি ১৯২৭ সালে ব্রিটিশ নির্মিত বিশেষায়িত একটি কোচ। এই কোচটার যে বৈশিষ্ট্য হলো, এর ইন্টেরিয়র পুরোটা কাঠের। এখানে ব্রিটিশ রানীর সভাকক্ষ আছে, বেডরুম আছে। বলা যায়, আধুনিক সব সুযোগ সুবিধাই আছে। এটি বর্তমানে ব্যবহার না হলেও, আমরা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে রেখে দিয়েছি। যাতে আগামী প্রজন্মের লোক এটিকে দেখতে পারে এবং আমাদের যে যাদুঘর আছে সেখানে স্থানান্তর করা হবে। বর্তমানে অনুমতিক্রমে এটি দেখার সুযোগ আছে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ডিভিশনাল সুপারিনটেন্ডেন্ট (ডিএস) সাদেকুর রহমান বলেন, সর্বপ্রথম রানী এলিজাবেথ এই সেলুন কোচে ভ্রমণ করেন। পরবর্তীকালে এটা পরিবর্তিত হয়ে প্রেসিডেন্ট সেলুন কোচ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯৮১ সালে এটি চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়ে। তৎকালীন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন যে, এটি যাদুঘর হিসেবে সকলের স্মৃতি হিসেবে থাকবে। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের এই সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় এটি আমরা মেইনটেইন করে আসছি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে যদি বড় কোনো যাদুঘর করি, সে যাদুঘরের সামনে রেললাইন স্থাপন করে এই কোচ ও স্টিম লোকোমোটিভসহ একটি বড় ধরনের স্থাপনা হবে।
এএজেড
