রোজাদারদের প্রশান্তির তৃপ্তি এনে দেয় নওগাঁর পাতলা দই
নওগাঁর পাতলা দই। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
ইফতারের বাহারি পদের মধ্যে নওগাঁর মানুষের কাছে পাতলা দই অন্যতম। স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে এ পানীয় পাতলা দই নামে বেশি পরিচিত। খেজুর, শরবত, ছোলা-পেঁয়াজুসহ নানা পদ থাকলেও পাতলা দই না হলে ইফতারি যেন অপূর্ণ থেকে যায়। ইফতারের সময় পাতলা দই খাওয়ার এ প্রচলন চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। পাতলা দইটিকে স্থানীয় ঐতিহ্য বলে ধরে নেওয়া হয়।
সারাদিন রোজা রেখে দিন শেষে এক গ্লাস পাতলা দই বা ঘোল তৃষ্ণার্ত রোজাদারদের প্রশান্তির তৃপ্তি এনে দেয়। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসচেতন রোজাদারদের পছন্দের শীর্ষে থাকে পাতলা দই নামে এ পানীয়। এবার ফাল্গুন মাসের শেষের দিকে রোজা হওয়ায় মঙ্গলবার (১২ মার্চ) রমজান মাসের প্রথম দিনেই নওগাঁ শহরের ফুটপাত থেকে শুরু করে শহরের অভিজাত রেস্টুরেন্ট ও প্রসিদ্ধ দইয়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। দুপুরের পর থেকেই মাটির হাঁড়ির পসরা সাজিয়ে ফুটপাত ও দোকানে পাতলা দই বিক্রি করতে দেখা যায় বিক্রেতাদের।
ক্রেতারা বলছেন, গতবারের চেয়ে হাঁড়িপ্রতি এবার ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা। অন্যদিকে বিক্রেতাদের দাবি, দুধ ও চিনির দাম বেশি হওয়ায় পাতলা দই তৈরি করতে খরচ বেশি পড়ায় দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। শহরের ব্রিজের মোড়, তাজের মোড়, সরিষাহাটির মাড়ে, গোস্তহাটির মোড়, দয়ালের মোড়ের ফুটপাত ও প্রসিদ্ধ দই-মিষ্টির দোকান ছাড়াও শহরের অলিগলিতে ফেরি করে পাতলা দই বিক্রি করতে দেখা যায়।
শহরের ব্রিজের মোড়ে অবস্থিত নওগাঁর প্রসিদ্ধ দই-মিষ্টির দোকান হিসেবে পরিচিত নওগাঁ মিষ্টান্ন ভান্ডারে দুপুরের পর পাতলা দই কিনতে ক্রেতাদের প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ করা যায়। দোকানটিতে প্রতি হাঁড়ি (আনুমানিক ৭০০ গ্রাম) পাতলা দই ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। আর ফুটপাতে দইওয়ালারা প্রতি হাঁড়ি দই ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি করছেন।
নওগাঁ মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী নূরুল হক ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘দইয়ের প্রধান উপকরণ হচ্ছে দুধ ও চিনি। এই দুই উপকরণের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় পরেও আমরা গতকালকের চাইতে আজ থেকে ১০ টাকা হাড়ি প্রতি কম দামে দই বিক্রি করছি।’
মঙ্গলবার বিকেলে নওগাঁ শহরের তাজের মোড় যমুনা মার্কেটের সামনের ফুটপাতে জোহরের নামাজ শেষে দই কিনে বাড়ি ফিরছিলেন শহরের স্টেডিয়াম পাড়া এলাকার বাসিন্দা কলেজশিক্ষক ইমদাদুল হক মুকুল।
তিনি বলেন, ‘ফুটপাত থেকে পাতলা দইয়ের একটা বড় হাঁড়ি কিনলাম ১৫০ টাকায়। গত বছরের তুলনায় এবার ৫০ টাকা দাম বেড়েছে। ইফতারিতে একটু প্রশান্তি পাওয়ার জন্য পাতলা দইয়ের বিকল্প আর কিছু হয় না। পুরো রমজান মাসজুড়েই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পাতলা দই খেয়ে থাকি। তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি এই দই শরীরের জন্যও ভালো।’
এ বিষয়ে নওগাঁ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার আশীষ কুমার সরকার ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘পাতলা দই বলি আর ঘোল কিংবা মাঠা—যুগ যুগ ধরে মানুষ এ পানীয় পান করে আসছে। দুধের ননি থেকে মাখন আলাদা করে ফেলার পর যে চর্বি ছাড়া জলীয় অংশ রয়ে যায়, তা-ই আসলে ঘোল বা মাঠা। এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণসম্পন্ন একটি পানীয়। এই দইয়ে দুগ্ধজাত প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা শরীরের বিভিন্ন উপকারে আসে। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। হজমে সহায়তা করে। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বক ভালো রাখে। পাকস্থলীর সমস্যা কমায়। ক্লান্তি অবসন্নতা কমিয়ে মনে প্রশান্তি আনে, মেজাজ ফুরফুরে রাখে।’