চঞ্চলা সহৃদয়া খয়েরি রাঙা ফড়িং
ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
আবহমান বাংলার বসন্তমণ্ডিত বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির যে মায়াবী আবেশ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে নানাভাবে স্পর্শ করে যায় সেই প্রকৃতির হাত ধরেই প্রতিদিনকার কাজকর্ম, চলাফেরায় কত কিছুই না নজরে পড়ে যায়। রাস্তার পাশে ফড়িং প্রজাপতি ভ্রমরসহ অনেক প্রজাতির কীট পতঙ্গের ওড়া উড়ি মানুষের মনকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও আলোড়িত করে। এক ভালো লাগার অনুভূতিতে আচ্ছন্ন করে। বিশেষত হরেক রঙের ফড়িং দেখে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও থমকে দাঁড়ান অনেকে। ফড়িং এত হালকা সুন্দর মায়াময় একটি প্রাণী ভালো না বেসে কি পারা যায়?
ফড়িংকে নিয়ে কোন স্মৃতি নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল আছে। শৈশবে মাকররসার জাল দিয়ে বাড়ির পাশে জঙ্গলে গিয়ে ফড়িং ধরতে যেতাম। ফুলের উপরে ফরিং দেখে পা টিপে টিপে যেন কোন শব্দ না হয়, এমনকি নিঃশ্বাসও বন্ধ করে পাটকাঠির মাথায় মাকরাশার জাল বা গাছের আঠা জড়ানো ফড়িং এর লেজে বা পাখার কাছাকাছি নিয়ে গেলে আটকে যেতো ফড়িং। সে কি ফুর্তি তখন। এখন আর ফড়িং ধরিনা। ভালোবাসি ফড়িংকে। ফড়িংও ভালোবাসে আমাকে।
তাইতো বৃহস্পতিবার (২৯ ফ্রেব্রুয়ারি) দুপুরে নওগাঁ সদরের পার নওগাঁ এলাকার একটি কালাই ক্ষেতে ভালো বেসে দেখা দিলো প্রাণ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়া চঞ্চলা খয়েরি রাঙা ফড়িং।
খয়েরি পাখার ফড়িং
বৈজ্ঞানিক নাম নিউরোথেমিস ফ্লাকচুয়ান্স, লাল ঘাস, সাধারণ প্যারাসোল বা গ্রাসশক ড্রাগনফ্লাই হল লিবেলুলিডি পরিবারের ড্রাগনফ্লাইয়ের একটি প্রজাতি। এটি আগের মতো দেশে ব্যাপক হারে দেখা যায় না।
প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর 'শিকার' কবিতায় প্রকৃতি বন্দনায় এমনটাই বলেছিলেন।
ভোর;
আকাশের রং ঘাসফড়িঙের দেহের মতো কোমল নীল :
চারিদিকে পেয়ারা ও নোনার গাছ টিয়ার পালকের মতো সবুজ।
আর আমি বলি, মাঝে মাঝে এক চঞ্চলা সহৃদয়া খয়েরি রাঙা সুন্দর অতিথি এসে প্রকৃতিতে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়ে যায়। দারুণ রঙ আর ঢঙ্গে অনিন্দ্য মুগ্ধতা ছড়িয়ে যায় নিমিষে চারপাশে।
তবে ফড়িং নিম্ফ আক্রান্ত হলে ব্যাথা-উদ্রেককারী কামড় বসাতে পারে। সেক্ষেত্রে দংশিত স্থানটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত, না হলে তা ফোস্কার আকার ধারণ করে রোগসংক্রমণ করতে পারে।
গবেষকদের মতে, পৃথিবীতে প্রায় ৫ হাজার ৭শ’ প্রজাতির ফড়িং দেখা যায়। আমাদের দেশে এক সময় শতাধিক প্রজাতির ফড়িং থাকলেও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে ক্রমশই তা কমে আসছে। পরিবেশবান্ধব ছোট জীব ফড়িং ও এর বাচ্চা জলাশয়ের পোকা মাকড় ও মশার লার্ভা খেয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের পরিবেশকে ভালো রাখতে সহায়তা করে। পূর্ণ বয়ষ্ক ফড়িং উড়ন্ত অবস্থায় শিকার করে। ফড়িং একাধারে বিভিন্ন প্রজাতির ক্ষতিকর মশা দমন, ফসলের ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনেও ভূমিকা রাখে।
জনশ্রুতি রয়েছে, যে এলাকায় যত বেশি ফড়িং সে এলাকার পরিবেশ ও তত ভালো। উপকারের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন দেশে ফড়িং সংরক্ষণ করা হয়।