নওগাঁয় দলিল লেখকদের ধর্মঘটে বন্ধ জমির দলিল নিবন্ধন, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ
নওগাঁয় দলিল লেখকদের ধর্মঘটে বন্ধ জমির দলিল নিবন্ধন। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
দলিল লেখকদের টানা ধর্মঘটের কারণে নওগাঁ সদর উপজেলা সাব-রেজিস্টারের কার্যালয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বন্ধ হয়ে আছে জমির দলিল নিবন্ধন ও সম্পাদনের কাজ। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
জেলা রেজিস্টার ও সদর উপজেলা সাব-রেজিস্টার কার্যালয় ও সদর উপজেলা দলিল লেখক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, জেলা রেজিস্টার ও সদর উপজেরা সাব-রেজিস্টার কার্যালয়ের নব-নির্মিত ভবন ও চত্বরে দলিল লেখকদের বসার স্থান (দলিল লেখক সেরেস্তা) না দেওয়ার প্রতিবাদে সদর উপজেলা সাব-রেজিস্টার কার্যালয়ে নিবন্ধিত দলিল লেখকেরা গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ধর্মঘট পালন করছেন। তারা দলিল লেখার কাজ বন্ধ রাখায় জমি বেচাকেনা হচ্ছে না।
রেজিস্টার ভবন ও চত্বরে সেরেস্তা চেয়ে সদর উপজেলা দলিল লেখকদের সমিতির পক্ষ থেকে জেলা রেজিস্টার ও সাব-রেজিস্টারের কাছে আবেদন জানানো হয়। কিন্তু জেলা রেজিস্টার ও সদর উপজেলা সাব-রেজিস্টার দলিল লেখকদের রেজিস্টার ভবন ও চত্বরে তাঁদেরকে বসার স্থান দিতে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি ওই সমিতির পক্ষ থেকে বিষয়টি মহাপরিদর্শক নিবন্ধনকেও (আইজিআর) জানানো হয়।
টানা ধর্মঘটের কারণে দলিল নিবন্ধন ও সম্পাদন বন্ধ থাকায় মাসের প্রথম ১৮ কার্য দিবসে সরকার প্রায় ২ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব হারিয়েছে বলে নওগাঁ সদর উপজেলা সাব-রেজিস্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া দলিল লেখকদের ধর্মঘটের কারণে বিপাকে পড়েছে জমি ক্রয়-বিক্রয়ে ইচ্ছুক সাধারণ মানুষ।
সরজমিনে গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে জেলা রেজিস্টার ও সদর উপজেলা সাব-রেজিস্টার কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সাব-রেজিস্টার কার্যালয়ে দলিল লেখকদের কোনো উপস্থিতি নেই। চারতলা ভবনের নিচতলা, দ্বিতীয় তলা ও তৃতীয় তলায় গুটিকয়েক কর্মচারী বসে আছেন। কাজ না থাকায় তাঁরা অলস সময় পার করছেন।
কর্মচারীরা জানান, দলিল লেখকদের ধর্মঘটের কারণে দলিল জমা হচ্ছে না। দলিল নিবন্ধন ও সম্পাদক কাজ বন্ধ। দলিল লেখকেরা তাঁদের চাহিদা মতো জায়গায় সেরেস্তা করতে না পারায় তাঁরা দলিল না লেখার ঘোষণা দিয়েছেন। নতুন ভবন নির্মাণাধীন সময়ে শহরের টাইম স্কয়ার টাওয়ারের সংলগ্ন যে ভবনে অস্থায়ীভাবে সাব-রেজিস্টার কার্যালয় করা হয়েছিল, দলিল লেখকদের সেরেস্তা এখনও সেখানেই রয়েছে।
নওগাঁ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের উকিলপাড়া এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকার উত্তরায় কিছু জমি ক্রয়ের জন্য এক পার্টির সঙ্গে আমার চুক্তি হয়েছে। সেই জমি কেনার জন্য নওগাঁয় বসতবাড়ির কিছু জমি বিক্রি করতে হবে। জমি বিক্রির জন্য ক্রেতাও ঠিক হয়েছে। কিন্তু দলিল লেখককেরা কেউ দলিল লিখতে চাইছে না। গত ১৫ দিন ধরে দলিল লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেছি, কবে এই অচলাবস্তার শেষ হয়।’
সদর উপজেলার শৈলগাছী ইউনিয়নের দিঘিরহাট গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারা খাতুন নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমার বড় ছেলে সৌদি আরবে কাজ ঠিক হয়েছে। ভিসার কাজও সব শেষ হয়েছে। বিমান ভাড়ার টাকা জোগাড়ের জন্য কিছু জমি বিক্রি করা দরকার। কিন্তু আজ ১৮-২০ দিন ধরে সেই কাজটাই হচ্ছে না। দলিল লেখকদের কি হইছে? কেউই দলিল লিখতে চায় না। এখন আমরা কি করবো বুঝতে পারছি না।’
ধর্মঘটের বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁ সদর উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মো. ওয়াজারাত হোসেন (টিপু) ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘যখন পুরাতন সাব-রেজিস্টার ভবন ছিল, তখন আমরা সাব-রেজিস্টার চত্বরেই বসতাম। সাব-রেজিস্টার ভবনের চারপাশে বাউন্ডারি ছিল, আমরা সেই বান্ডারির সেই দেওয়াল ঘেঁষে বসতাম। নতুন যে ভবন করা হয়েছে, সেই ভবনে জেলা রেজিস্টার ও সদর উপজেলা সাব-রেজিস্টার কার্যালয়। নতুন ভবনের সামনে বেশ কিছু জায়গা ফাঁকা আছে। পূর্বের মতো সাব-রেজিস্টার কার্যালয়ের সামনের চত্বরে আমরা আমাদের সেরেস্তা করতে চাইলে সাব-রেজিস্টার ও জেলা রেজিস্টার আমরা বাধা দেন। এখন আমাদের নানা ধরণের আইনের যুক্তি দেখাচ্ছে। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, সারা দেশে সব সাব-রেজিস্টার কার্যালয় চত্বরেই দলিল লেখকদের সেরেস্তা রয়েছে। সাব-রেজিস্টার কার্যালয় এক জায়গায় আর দলিলক লেখকদের সেরেস্তা আরেক জায়গায় বিভিন্ন ধরণের সমস্যা হবে। বিষয়টি আমরা আইজিআর, জেলা প্রশাসককে জানিয়েছি। স্থানীয় সংসদ সদস্যদের অবহিত করা হয়েছে। এই সমস্যার সমাধান না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নওগাঁ জেলা রেজিস্টার শরিফ তরফ হোসেন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘জেলা রেজিস্টার ও সাব-রেজিস্টার কার্যালয় একটি সরকারি অফিস। দলিল লেখকেরা সরকারি কোনো কর্মচারী কিংবা কর্মকর্তা নয়। তাঁদের দাবি, তাঁরা আমাদের মূল ভবনের নিচতলার অংশে এবং ভবনের বাইরের চত্বরে সেরেস্তা করতে দিতে হবে। কিন্তু আইন অনুযায়ী, একটা সরকারি কার্যালয়ে দলিল লেখকদের সেরেস্তা করতে দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই। তাঁরা যদি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে আসতে পারেন সেক্ষেত্রে আমি তাঁদের দাবি অনুযায়ী সেরেস্তা করতে দেওয়া যাবে। দলিল লেখকেরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও জেলা প্রশাসকের কাছে একই দাবি নিয়ে গেছেন, কিন্তু তাঁরাও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি।’