বুধবার, ২ এপ্রিল ২০২৫ | ১৯ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

‘খলিফাদের দখলে নৌকা, ত্যাগীরা ঝুঁকছেন স্বতন্ত্রের দিকে’

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁর অবহেলিত বরেন্দ্র জনপথ হিসেবে পরিচিত নওগাঁ-২ (ধামইরহাট ও পত্নীতলা) আসনে আসন্ন ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন কে কেন্দ্র করে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী ৪৭ নওগাঁ-২ আসনের সাবেক এমপি শহীদুজ্জামান সরকার বাবলুর সঙ্গে ভোটের মাঠে ও ময়দানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আখতারুল আলমের।

আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বতন্ত্র এই প্রার্থী (ট্রাক প্রতীক) নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় পাল্টে যাচ্ছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কে জয়ী হবেন তা নিয়ে সকাল-সন্ধ্যা পাড়ায় মহল্লায় এবং চায়ের টেবিলে প্রার্থীদের পক্ষে ও বিপক্ষে চলছে নানান আলোচনা ও সমালোচনা।

অপর দিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাহমুদ রেজা গত মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে উচ্চ আদালতের রায়ের মাধ্যমে প্রার্থীতা ফিরে পেয়েছেন। ৩১ জানুয়ারি দুপুরে ঈগল প্রতীক নিয়ে এ আসন থেকে চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

তবে সুষ্ঠু ভোট হলে নৌকাকে ডুবিয়ে শেষ হাসিটা হাসবেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আখতারুল আলম এমনটাই মনে করছেন দুই উপজেলার ভোটাররা। তারা বলছেন, ১৫ বছর ধরে ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে শহীদুজ্জামান সরকারের পছন্দের খলিফাদের ক্ষমতার অপব্যবহার, টেন্ডারবাজি ও দলবাজি থেকে পরিত্রান পেতে নতুন ও যোগ্য নেতৃত্বকেই এমপি হিসেবে নির্বাচিত করবেন তারা। অন্যদিকে ভোটের মাঠে খুব একটা সুবিধা করতে না পারলেও জাতীয় পার্টি মনোনীত (লাঙ্গল প্রতীক) প্রার্থী অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

স্থানীয় ও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, শহীদুজ্জামান সরকার ১৯৯১ সালে বিএনপির প্রার্থী আব্দুল মান্নান কে হারিয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নিদর্বাচিত হন। এরপর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপির) ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে শামসুজ্জোহা খান জোহা ১৯৯৬-২০০১ সালে নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮-২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছর ধরে শহীদুজ্জামান সরকার বাবলু দলের দুর্দিনের কান্ডারী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের দলের বিভিন্ন জায়গা থেকে বাদ দিয়ে জামায়াত ও বিএনপি থেকে আসা সুবিধাবাদীদের চাকরি দেওয়া থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ পদে পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে ত্যাগী নেতাদের কৌশলে কোণঠাসা করে রাখার মতো একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই উপজেলায় চায়ের দোকান থেকে শুরু করে গ্রামের হাট বাজার ও বিভিন্ন মোড়ে পাড়ায় মহল্লায় প্রার্থীদের ব্যানার আর পোস্টারে ছেয়ে গেছে। সড়কে ব্যাটারি চালিত ভ্যান দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রচার প্রচারণায়। শীতকে উপেক্ষা করে কর্মী সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনা করছেন প্রার্থীরা। প্রার্থী আর কর্মীদের কুশল বিনিময়ে যেনো উৎসব মুখর হয়ে উঠেছে নির্বাচনের আমেজ।

বুধবার (৩১ জানুয়ারি) ভোটের মাঠে তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে জানা গেছে, আসন্ন ১২ ফেব্রুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে (ধামইরহাট ও পত্নীতলা) এ আসনের উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সাবেক ও বর্তমান পদ বঞ্চিত নেতা-কর্মী এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা স্থানীয় সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হয়ে ইঞ্জিনিয়ার আখতারুলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আইয়ুব হোসেন নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার ঘোষণা করে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুলের পক্ষ নিয়েছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন ও ভোটের মাঠে সাধারণ ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে, এ আসনে নতুন মুখ আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না এমনটাই দাবি করেন আওয়ামী লীগের একাধিক বঞ্চিত সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মী, ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানগণ ও সাধারণ ভোটাররা।

একারণে ১২ ফেব্রুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে ও ময়দানে হিসাব নিকাশ পাল্টে গেছে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত (নৌকার প্রতিক নিয়ে) শহীদুজ্জামান সরকার, আওয়ামী লীগ সমর্থিত (ট্রাক প্রতীক) স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আখতারুল আলমের মধ্যে ভোটের মাঠে ও ময়দানে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ দৌড়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই জাতীয় পার্টির মনোনীত (লাঙ্গল প্রতীক) প্রার্থী এডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন।

উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল হাই দুলাল বলেন, 'এর আগে উপজেলায় চার খলিফা ছিল। এখন তা বেরে হয়েছে অর্ধশতাধিক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বালু মহল থেকে শুরু করে সব জায়গায় টেন্ডারবাজিসহ নিজেদের ইচ্ছেমতো অপকর্ম করে যাচ্ছেন। এদের পরিবর্তন না হলে আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গ সংগঠনের অস্তিত্ব সংকট দেখা দেবে।'

পত্নীতলা উপজেলার পাটিচোড়া ইউনিয়ন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের জেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার ছাদেক উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, 'বর্তমান সংসদ সদস্য দুই উপজেলায় তাঁর পছন্দের খলিফারদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। তাছাড়া যে নেতার কাছে সাধারণ মানুষ ও ত্যাগী নেতাকর্মীরা যেতে পারেন না তাদের পরিবর্তন দরকার। এ কারণেই একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারুলের পক্ষ নিয়েছেন।'

খেলনা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড চকমগলিশ এলাকার গ্রামপ্রধান শৈলেন হাঁসদা বলেন, 'বরাবরই জোটবদ্ধ হয়ে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করেছেন। অথচ ভোট শেষে এলাকায় আসাতো দুরের কথা বিপদ আপদে দাবিদাওয়া নিয়ে গেলে ওই নেতা আমাদের আশার বানী শোনাতেই ব্যাস্ত থাকেন। একারণে ট্রাক মার্কায় ভোট দেবেন বলে জানান।'

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলদার হোসেন বলেন, '১৫ বছর দল ক্ষমতায়। এমপিও ক্ষমতা রয়েছেন। 'খলিফা' শব্দটি আসলে ঠিক নয় কারণ গণতান্ত্রিক পন্থায় দলের বিভিন্ন সেক্টরে কমিটি হয়েছে। কমিটিতে অনেক নতুন মুখ এসেছে আবার পুরাতন নেতাকর্মীরা ঝরে পড়েছেন। এতে করে অনেকের মনে কষ্ট থাকতে পারে কিন্তু ত্যাগী নেতাকর্মীরা দলছুট হয়েছে বা অন্য পক্ষ নিয়েছে এ বিষয়ে তাঁর জানা নেই।'

তিনি আরও বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নৌকার বিকল্প নেই। আর এ কারণেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটারদের মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ এলাকার সাধারণ মানুষ শেখ হাসিনার পছন্দের প্রার্থী শহীদুজ্জামান সরকারকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন।'

লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন বলেন, 'নওগাঁর অবহেলিত জনপদের (ধামইরহাট ও পত্নীতলা) সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন ও উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যেতে তিনি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যোগ্য প্রার্থী হিসেবে এ এলাকার সাধারণ ভোটাররা তাকেই ভোট দিবেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আখতারুল আলম বলেন, 'অবহেলিত এ জনপদের মানুষ টেন্ডারবাজি ও সিন্ডিকেট থেকে মুক্তি চায়। কর্মীবান্ধব নেতৃত্ব তৈরির পাশাপাশি দুই উপজেলার শিক্ষিত ও বেকার তরুণদে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের সঙ্গে নিয়ে কৃষি বন্ধব শিল্প ও সমৃদ্ধ উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলতে চান।'

Header Ad
Header Ad

মিয়ানমারের ভূমিকম্পে এক ইমামের ১৭০ স্বজনের মৃত্যু

সাবেক ইমাম সোয়ে নেই ওও। ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র ঈদুল ফিতর আসন্ন। বিদায় নিচ্ছে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস রমজান। শেষ জুমার নামাজ আদায় করতে মুসলমানদের মধ্যে আগ্রহ ছিল চরমে। কিন্তু কে জানত, এই জুমাই শত শত মুসল্লির জীবনের শেষ জুমা হয়ে উঠবে!

গত ২৮ মার্চ, শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। সাগাইং অঞ্চলের পাঁচটি মসজিদে তখন নামাজ আদায় করছিলেন অসংখ্য মুসল্লি। শক্তিশালী ভূমিকম্পে তিনটি মসজিদ ধসে পড়ে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল মায়োমা মসজিদ। এই মসজিদে নামাজরত প্রায় সবাই প্রাণ হারান।

মায়োমা মসজিদের সাবেক ইমাম সোয়ে নাই ওও তখন মিয়ানমার-থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী শহর মায়ে সোতে অবস্থান করছিলেন। সেখানেও তিনি ভূমিকম্প অনুভব করেন, তবে বুঝতে পারেননি কী পরিমাণ বিপর্যয় তার অপেক্ষায় রয়েছে।

সোয়ে নাই ওও একসময় মিয়ানমারের ইমাম ছিলেন, তবে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ডে পালিয়ে যান এবং বর্তমানে একটি মানবাধিকার সংস্থায় কাজ করছেন। ভূমিকম্পের পরের দিনগুলোতে একের পর এক শোকসংবাদ পেতে থাকেন তিনি। এখন পর্যন্ত তিনি জানতে পেরেছেন, তার প্রায় ১৭০ জন আত্মীয়, বন্ধু ও প্রাক্তন মুসল্লি মারা গেছেন। তাদের বেশিরভাগই মসজিদে অবস্থান করছিলেন, অনেকেই মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোয়ে নাই ওও বিবিসিকে বলেন, ‘আমি প্রাণ হারানো সব মানুষের কথা ভাবছি। তাদের শিশুদের কথা ভাবছি... এই শোক সহ্য করা অসম্ভব।’

সাগাইং অঞ্চল মূলত বৌদ্ধ মন্দিরের জন্য পরিচিত হলেও এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমান দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। নানা নিপীড়ন ও নির্যাতন সত্ত্বেও তারা এ অঞ্চলে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন।

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভূমিকম্পের সময় মসজিদে নামাজরত অবস্থায় প্রায় ৫০০ মুসলমান মারা গেছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মসজিদ সংলগ্ন মায়োমা স্ট্রিট ও শহরতলি। ভূমিকম্পে বহু ভবন ধসে পড়েছে, রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়েছে।

এই ভূমিকম্পে মিয়ানমারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সাগাইং ও মান্দালয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উদ্ধারকর্মীরা এখনো ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করছেন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দেশটির জান্তা সরকার জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৭১৯ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন ৪৪১ জন এবং আহত হয়েছেন ৪ হাজার ৫২১ জন। জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং এক টেলিভিশন ভাষণে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, নিহতের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

মিয়ানমারের ভূমিকম্পটি ছিল ৭ দশমিক ৭ মাত্রার। এর কেন্দ্রস্থল ছিল মান্দালয় শহর থেকে ১৭.২ কিলোমিটার দূরে এবং ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার গভীরে। প্রথম কম্পনের ১২ মিনিট পর ৬ দশমিক ৪ মাত্রার আফটারশক হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

এই বিধ্বংসী ভূমিকম্পে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। উদ্ধারকর্মীরা নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেকের আটকে থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

Header Ad
Header Ad

ঈদের আনন্দে যমুনার দুর্গম চরে গ্রাম-বাংলার ঘুড়ি উৎসব, আনন্দে মেতে উঠে বিনোদনপ্রেমীরা!

টাঙ্গাইলের গোপালপুর নলিন এলাকায় যমুনার দুর্গম চরে ঈদ উপলক্ষে ঘুড়ি উৎসব। ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

আবহমান গ্রাম-বাংলা থেকে হারাতে বসেছে শৈশবের চিরচেনা ঘুড়ি উড়ানো উৎসব। আর সেই হারানো ঐতিহ্যকে ফেরাতে ও বর্তমান প্রজন্মের সামনে ঘুড়ি উড়ানোর উৎসবকে তুলে ধরতে ‘এসো উড়াই ঘুড়ি, বাংলার ঐতিহ্য লালন করি’- এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদ উদযাপন উপলক্ষে টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (০১ এপ্রিল) বিকালে উপজেলার নলিন বাজারের পাশে যমুনার ধূ-ধূ বালুচরে মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উদ্যোগে এবং স্থানীয় সেচ্ছাসেবী আমরা গোপালপুরবাসী ফেসবুক গ্রুপ ও শুভশক্তি বাংলাদেশের সহযোগিতায় ঘুড়ি উৎসব পালন করা হয়।

এই ঘুড়ি উৎসবে নানা শ্রেণি পেশার মানুষসহ স্কুল পড়ুয়া শিশু শিক্ষার্থী নানা রঙয়ের, নানা বর্ণের রঙিন ঘুড়ি নিয়ে বালুময় চরে বিকাল বেলা সমবেত হয়। পরে একে একে ঘুড়ি উড়ানো ও ঘুড়ির সুতা কাটাকাটি খেলা শুরু হয়। তারপর সন্ধ্যায় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বাউল গানের আড্ডায় মেতে ওঠে বিনোদনপ্রেমিরা।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

ঘুড়ি উড়াতে আসা স্কুল শিক্ষার্থী আসফিয়া জান্নাত আদরিতা বলেন- ছোট বেলা শহরে থাকি, এবার পরিবার সঙ্গে ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছি। এর আগে কখনো ঘুড়ি দেখেনি বা ঘুড়ি উড়ানো হয়নি। এবারই প্রথম ঘুড়ি উড়ানো উৎসবে এসেছি এবং উড়িয়েছি। এখানে এসে সত্যিই ভাল লাগছে।

মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীরা জানান, কয়েক বছর ধরে আমাদের স্কুল থেকে চরাঞ্চলে ঘুড়ি উৎসবের আয়োজন করছে আসছে। আমরা কয়েক দিন ধরে নানা রঙয়ের বিভিন্ন ঘুড়ি তৈরি করেছি। নদীর পাড়ে বিকাল বেলা এমন উৎসবে অনেক আমাদের অনেক সহপাঠিরা তাদের মা-বাবা নিয়ে আনন্দ উপভোগ করছেন।

ঘুড়ি উৎসবে অংশ নেওয়া স্কুল শিক্ষিকা শামীমা ইয়াসমিন বলেন, কর্ম ব্যবস্ততার কারণে যমুনা চরাঞ্চলে আসার সুযোগ হয় না। বসন্ত বরণ উপলক্ষে গতবারের ন্যায় এবারো ময়না আপার ডাকে ঘুড়ি উৎসব উদযাপনে পরিবার নিয়ে অংশ গ্রহণ করেছি। চরাঞ্চলের এমন উৎসবে আসতে পেরে খুব ভাল লাগছে।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ঘুড়ি উৎসব আয়োজক আঞ্জু আনোয়ারা ময়না বলেন, গ্রাম-বাংলা ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ২০১৯ সাল থেকে স্কুলের শিশু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের নিয়ে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে ঘুড়ি উৎসব পালন করে আসছি। এরই ন্যায় এবার ঈদের পর এই আয়োজন করা হয়েছে। বিগত বছরের তুলনায় এ বছর লোকজনের উপস্থিত বেড়েছে। প্রতিবছরই এমন ঘুড়ি উৎসব উদযাপন করা হবে।

গোপালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন বলেন, ছোট বেলা আমি নিজেও ঘুড়ি উড়িয়েছি, এটিতে আলাদা একটি আনন্দ আছে। আমি মনে করি বাঙালির এই ঘুড়ি উড়ানোর মধ্যে দিয়ে সংস্কৃতির যে একটা অতীত সম্বৃদ্ধির অতীতকে স্মরণ করে থাকে। এটি একটি বিশুদ্ধ প্রতিযোগিতা। এমন আয়োজনে অংশ নিতে পেরে ভালো লাগছে।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নাজমুল হাসান বলেন, ঘুড়ি উৎসব আমাদের প্রাণের একটি উৎসব। এমন পরিবেশে বর্ণিল এই রঙিন ঘুড়ি উৎসব কখনো দেখার সুযোগ হয়নি। দীর্ঘদিন পর এভ ঘুড়ি উৎসবে প্রাণ ফিরেছে সেই শৈশবে। ঈদ আনন্দের দ্বিতীয় দিনে বর্ণিল রঙিন রঙের ছটায় ঘুড়ি হাতে নিয়ে নীল আকাশে উড়িয়েছি। উৎসবে পরিবার নিয়ে অংশ নিতে পেরে আমি আনন্দিত।

Header Ad
Header Ad

ইমামকে ঘোড়ার গাড়িতে রাজকীয় বিদায়, দেওয়া হলো ৯ লাখ টাকার সংবর্ধনা

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

প্রায় তিন যুগ মসজিদে ইমামতি করার পর ঘোড়ার গাড়িতে করে অবসরকালীন রাজকীয় বিদায় দেওয়া হয়েছে মাওলানা মোহাম্মদ শাহজাহান খান নামে এক ইমামকে। এই ইমামের এমন বিদায়ী সফর সঙ্গী হয়ে ৩ শতাধিক মানুষ ৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে তার নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেন।

এর আগে ইমামকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান এবং এককালীন পেনশন হিসেবে দেওয়া হয় ৯ লাখ টাকা। গ্রামের মানুষ নানা ধরণের উপহারও প্রদান করে। ইমামকে সংবর্ধনার সম্মানিত এমন উদ্যোগের কারণে প্রশংসায় ভাসছেন ওই এলাকাবাসী।

গত মঙ্গলবার (০১ এপ্রিল) দুপুরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের নতুন কহেলা জামে মসজিদের ইমাম ও খতীবকে এই রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ইমামের এই রাজকীয় বিদায় অনুষ্ঠান দেখতে এক নজর ভিড় করেন এলাকাবাসী।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

নতুন কহেলা গ্রামের মুসুল্লি আবুল হাশেম খান বলেন, মাওলানা মোহাম্মদ শাজাহান খান তার চাকরি জীবনে গ্রামের মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এই ইমামের প্রতি গ্রামবাসীর ভালবাসা তা জনশ্রুতেই বুঝা যায়। আমরা তাকে ইমামকে বিদায় দিয়ে ব্যথিত।

বিদায়ী ঈমাম মাওলানা মোহাম্মদ শাজাহান খান বলেন, আমি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার মানুষের জানাজা পড়িয়েছি। ৬শ’ জনকে কোরআন শিক্ষা দিয়েছি। আল্লাহর রহমতে আমি কাজগুলো করতে পেরে শুকরিয়া আদায় করছি। আমার বিদায় বেলায় এলাকার মানুষ এত বড় আয়োজন করেছে তার জন্য এলাকার মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

এ ব্যাপারে নতুন কহেলা জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি সেলিম খান বলেন, এমন বিদায় সমাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি এলাকার মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। ইমামের পরবর্তী জীবন ভালো কাটতে সরকারি চাকরির মত পেনশন দেওয়া হয়েছে। তার সর্বদা মঙ্গল কামনা করছি।

১৯৯১ সালে ৬শ’ টাকা বেতনে নতুন কহেলা জামে মসজিদে ইমাম হিবেসে যোগদান করেন মাওলানা মোহাম্দ শাহজাহান খান। বিদায়ের প্রাক্কালো ইমামের বেতন হয় ১৭ হাজার ৫’শ টাকা। মাওলানা মোহাম্মদ শাহজাহান খান ঢাকার লালবাগের একটি মাদরাসা থেকে মাওলানা পাস করেন।

তার এই দীর্ঘ ইমামতি পেশায় থাকা কালীন এলাকায় ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি। দীর্ঘ চাকরি জীবনে তিনি অসংখ্য মানুষকে কুরআনের শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি জানাজা পড়িয়েছেন হাজারের অধিক মানুষের।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

মিয়ানমারের ভূমিকম্পে এক ইমামের ১৭০ স্বজনের মৃত্যু
ঈদের আনন্দে যমুনার দুর্গম চরে গ্রাম-বাংলার ঘুড়ি উৎসব, আনন্দে মেতে উঠে বিনোদনপ্রেমীরা!
ইমামকে ঘোড়ার গাড়িতে রাজকীয় বিদায়, দেওয়া হলো ৯ লাখ টাকার সংবর্ধনা
লন্ডনে একসঙ্গে দেখা গেলো সাবেক চার আওয়ামী মন্ত্রীকে
ঢাকায় ফিরছে ঈদযাত্রীরা, অনেকে ছুটছেন শহরের বাইরে
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় আবারও সড়ক দুর্ঘটনা, নিহত ৭
বিটিভিতে আজ প্রচারিত হবে ঈদের বিশেষ ‘ইত্যাদি’
ঈদের ছুটিতে ফাঁকা ঢাকা, নেই যানজটের চিরচেনা দৃশ্য
মাদারীপুরে তিন মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত ২
থানায় জিডি করলেন ভোক্তা অধিকারের জব্বার মন্ডল
রাশিয়া আমাদের চিরকালের বন্ধু, কখনো শত্রু নয়: চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান খালেদা জিয়ার
দ্বিতীয় দফায় মিয়ানমারে ত্রাণ সহায়তা পাঠালো বাংলাদেশ
ভারতে প্রশিক্ষণ প্লেন বিধ্বস্ত, পাইলট আহত
এপ্রিলে ঢাকায় আসছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল
জাপানে মেগা ভূমিকম্পের শঙ্কা, প্রাণহানি হতে পারে ৩ লাখ
জুলাই কন্যাদের সম্মানজনক পুরস্কার নিয়ে যা জানাল যুক্তরাষ্ট্র
দুপুরের মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের সম্ভাবনা
শান্তিপূর্ণ ঈদ উদযাপনে সেনাবাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়াল