নওগাঁ-২ আসনের নির্বাচনে আগ্রহ নেই ভোটারদের, গতি নেই প্রচারণাতেও
ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্থগিত হয়ে যাওয়া নওগাঁ-২ (পত্নীতলা ও ধামইরহাট) আসনে নির্বাচনে প্রচারণা শুরু হলেও ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ নেই। আর প্রার্থীদের প্রচারণাও তেমন গতি নেই। নির্বাচনে এলাকায় সভা-সমাবেশে লোকসমাগমও কম। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা নেই।
গত শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকে নির্বাচনী এলাকায় শোভা পাচ্ছে প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টার। মাইকে চলছে প্রচারণা। গণসংযোগও করছেন প্রার্থীরা। তবে যাঁদের জন্য এসব আয়োজন, সেই ভোটারদের মধ্যে এসব তৎপরতা আশাব্যঞ্জক প্রভাব ফেলতে পারছে না।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ভোট স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর মাঠপর্যায়ের নির্বাচনের আমেজ আর নেই। সভা-সমাবেশে এখন আর মানুষ আগের মতো অংশ নিচ্ছে না।
এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শহীদুজ্জামান সরকার। তাঁকে চ্যালেঞ্জ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটর সাবেক সহ-সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এইচ এম আখতারুল আলম। এছাড়া জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলা জাপার সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী এইচ এম আখতারুল আলম ট্রাক প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে স্বতন্ত্রের লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সাধারণ ভোটার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
শুক্রবার আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর থেকেই নৌকার প্রার্থী শহীদুজ্জামান সরকার, স্বতন্ত্র প্রার্থী এইচ এম আখতারুল আলম ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গণসংযোগ করেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আট দিন আগে এ আসনের বৈধভাবে মনোনীত স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল হক ২৯ ডিসেম্বর মারা গেলে ইসি ভোট স্থগিত করেছিল। এতে ৭ জানুয়ারি ২৯৯ আসনে ভোট হয়। পরবর্তীতে গত ৮ জানুয়ারি নওগাঁ-২ আসনের নির্বাচনের জন্য নতুন করে তফসিল ঘোষণা করে ইসি। নিয়ম অনুযায়ী আগের তিন বৈধ প্রার্থীকে আর মনোনয়নপত্র জমা দিতে হয়নি। নতুন তফসিল ঘোষণার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেহেদী মাহমুদ রেজা ও মেজবাউল হোসেন কাজল নামের দুই আওয়ামী লীগ নেতা মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু যাচাই-বাছাই শেষে নির্বাচনী এলকার ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক তালিকায় গড়মিল পাওয়ায় তাঁদের দুজনেরই মনোনয়ন বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ইসিতে আপিলের পরেও তাঁদের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করা হয়। ফলে আগের তিন বৈধ প্রার্থীই এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
নওগাঁ-২ আসনে ভোটার ৩ লাখ ৫৬ হাজার ১৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৭২ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫৫৯ জন।
পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লোকজনের মধ্যে একটা উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল। কিন্তু সেটা আর দেখা যাচ্ছে না। ভোট নিয়ে মানুষের তেমন আগ্রহ নেই। মনে হচ্ছে এটা উপ-নির্বাচন। নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে। নওগাঁতে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি ছাড়া অন্য দলের তেমন ভোট নাই। মূল রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নির্বাচনে নাই। তাই ভোটারদের মধ্যেও এই নির্বাচন নিয়ে তেমন আগ্রহ নাই।’
গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে ধামইরহাট পৌরসভার আমাইতাড়া মোড়ের একটি চায়ের দোকানে বসে আলাপ করছিলেন ছয়-সাতজন ব্যক্তি। তাঁদের মধ্যে রিয়াজ উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘সরকারত আওয়ামী লীগই আবার গেছে। এটিও ভোট দিলেও আওয়ামী লীগ, না দিলেও আওয়ামী লীগ জিতবে। কারণ, নৌকা আর ট্রাক দুটাই আওয়ামী লীগ। আগের সেই ভোট আর নাই। আগে ভোটের আগে দেড়-দুই মাস আগে থেকেই খালি ভোট লিয়েই আলোচনা হতো। এখন ভোটত কে জিতবে আগেই কওয়া যায়। তাই মানুষের ভোট লিয়ে আগ্রহ নাই।’
নৌকার প্রার্থী শহীদুজ্জামান সরকারের সমর্থক হিসেবে পরিচিত ধামইরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শহীদুজ্জামান সরকার পত্নীতলা ও ধামইরহাটের মানুষের ভোটে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ট্রাক মার্কায় কিছু ভোট পড়তে পারে। তবে এখানে আবারও নৌকায় জিতবে। ভোট স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর ভোটারদের আগ্রহে কিছুটা হয়তো ভাটা পড়েছে। শীতের কারণে সভা-সমাবেশ মানুষের উপস্থিতি কম হলেও আমাদের বিশ্বাস, ভোটের দিন ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে ঠিকই উপস্থিত হবেন। ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে আমরা কাজ করছি।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী এইচ এম আখতারুল আলমের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আইয়ুব হোসেন। তিনি বলেন, ‘গত শুক্রবার থেকে প্রচার হয়েছে। তীব্র শীতের কারণে প্রচার-প্রচারণা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। এখানে ট্রাকের প্রার্থী জনপ্রিয়তায় অনেক এগিয়ে আছে। মানুষকে ভোটকেন্দ্রে নেওয়াই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। ভোটের হার যত বেশি হবে আমাদের প্রার্থীর জয়ের সম্ভাবনাও তত বেশি হবে।’