বিষ খেয়ে আত্মহত্যার ভয় দেখিয়ে পাওনাদারদের ভাগিয়ে দেন রেজাউল
ছবি: সংগৃহীত
নাটোরের সদর উপজেলার বারঘরিয়া গ্রামের কাসেম উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম । লন্ডনে যাওয়ার জন্য প্রতিবন্ধী নারী জুলেখা আক্তার জুলির কাছে ৫ লাখ টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন । যে টাকা গুলো ঋণ করে সংগ্রহ করেছিলেন তিনি । বিদেশ না যেতে পেরে উল্টো ঋণের চাপে দিশেহারা রেজাউল । পাওনাদাররা ঋণের টাকা চাইতে এলে বিষের সিসা হাতে নিয়ে আত্মহত্যার ভয় দেখিয়ে তাদের ভাগিয়ে দেন তিনি ।
রেজাউল বলেন ‘মানুষ আমার থেকে অনেক টাকা পাবি। সুদে টাকা ধার নিয়েছি। সেগুলো ফিরত দিতে পারতেছি না। একা মানুষ ইনকাম করে খাই। একটা ভ্যান ছিল সেটাও বেইচে দিছি। এখন পাওনাদারেরা টাকা চাইতে আইলে বিষের সিসা দেখিয়ে ভাগায়ে দেই। কিন্তু এভাবে কয়দিন? হঠাৎ একদিন খেয়ে মরে যেতে হবে। তাছাড়া উপায় কি।’
কথিত ‘মেডিকেল কেয়ার ওয়ার্কার’ ভিসায় লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সারাদেশের ৯৭ জন থেকে ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন নাটোরের প্রতিবন্ধী জুলেখা আক্তার জুলি। প্রতারিত ৯৭ জনের ভেতর রেজাউল করিম একজন।
রেজাউল করিম সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তিনি জুলেখার প্ররোচনায় লন্ডনে যাওয়ার জন্য ধারদেনা করে, কিস্তির ওপর টাকা তুলে, গরু বিক্রি করে এক বছর আগে ৫ লাখ টাকা ৪ ধাপে জুলেখাকে দেন। কিন্তু গত ৪ মাস আগে বিদেশ নিয়ে যাবে বলে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে আবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় তারা। পরে প্রদানকৃত সেই টাকা ফেরত চাইলে জুলেখা নানা তালবাহানা শুরু করে।
রেজাউল বলেন, ঢাকা যাওয়ার সময় শেষ সম্বল ভ্যানটাও বিক্রি করে এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছি। ঋণ করে আনা টাকা আর ফেরত দিতে পারছি না। যার কারণে, যখনই পাওনাদাররা টাকার জন্য আসে তখন কাছে থাকা এক বোতল বিষ হাতে নিয়ে তাদের আত্মহত্যার ভয় দেখাই আর তারা তাড়াতাড়ি সটকে পড়ে।
এদিকে ভুক্তভোগীদের করা মামলায় গত রাতে অভিযুক্ত জুলেখা আক্তার জুলিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছিম আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নাটোরের সিংড়া থেকে জুলেখাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর আগে একই মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছিলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, নাটোর সদর উপজেলার বারঘরিয়া গ্রামের প্রতিবন্ধী জুলেখা আক্তার জুলি নাটোরসহ সারাদেশের ৯৭ জনকে লন্ডনে নিয়ে ভালো বেতনে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রতিজনের থেকে ২ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা নেন। জুলেখা ও তার চক্র প্রচার করে যে, লন্ডনে সেই কাজের জন্য স্বাক্ষর জানারও প্রয়োজন নেই। সেই চক্রের এমন প্রচারণার ফাঁদে পা দিয়ে অটোরিকশাচালক থেকে শুরু করে শিক্ষিত তরুণরাও সর্বস্বান্ত হয়েছেন।
লন্ডনে যাওয়ার জন্য ব্যাংক লোন, সুদের টাকা, ধারদেনা ও শেষ সম্বল অটোরিকশা বেঁচে টাকা দেওয়া ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ঋণের বোঝা বাড়ছে চক্রবৃদ্ধি হারে। অনেকে ঋণের ফাঁদে আটকে স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।