সিরাজগঞ্জে তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত

মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসে সিরাজগঞ্জে জেঁকে বসেছে কনকনে শীতের তীব্রতা। তীব্র শীতে সিরাজগঞ্জ জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে খেটে খাওয়া দিনমজুরসহ নিম্ন আয়ের মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে চরাঞ্চলের বাসিন্দারা শীতে বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়ক ও নৌ চলাচলে বিঘ্নিত হচ্ছে। সড়ক-মহাসড়কে বাস, ট্রাক, পিকআপ ভ্যানগুলোকে হেডলাইন জ্বালিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলতে দেখা গেছে। সেই সঙ্গে আগুন জালিয়ে শীত নিবারণ করছে গ্রামগঞ্জের অসহায় মানুষেরা।
এ বিষয়ে তাড়াশ আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, নদী অববাহিকা অঞ্চলগুলোতে ঘন কুয়াশা পড়েছে। গত বৃহস্পতিবার সারাদিন জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তিনি আরও বলেন, উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাসে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকবে ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার। আগামী তিন দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা পার্থক্য হ্রাসের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীত অব্যাহত থাকতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ গ্রামের কৃষক মান্নান শেখ (৫০) বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে খুব শীত পড়েছে। বিলাঞ্চলে আমার বাড়ি, রাত হলেই নদীর ঠাণ্ডা বাতাস শিনশিন করে গায়ে লাগে। গরীব মানুষ, টাকা-পয়সা তেমন নেই। এ কারনে ছেলে-মেয়েদের শীতের কাপড় কিনে দিতে পারি নাই।‘
সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের কাটাঙ্গা ঘাট এলাকার নৌকার মাঝি আলী আশরাফ ও জহুরুল ইসলাম বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে নদীর দিক ঠিক রাখা যায় না। অনেক সময় দিক ভুল হয়ে নৌকা চরে গিয়ে আটকে যায়। এই ঘাট থেকে শহরের মতি সাহেবের ঘাটে যেতে আগে সময় লাগতো ৪০ মিনিট। এখন সময় লাগে ২ ঘন্টা।
এদিকে উত্তরের হিমেল হাওয়া ও শীতের তীব্রতা বাড়ায় পুরাতন কাপড়ের বাজারে ভিড় করছেন জেলার নিম্ন আয়ের মানুষেরা। শহরের নিউ মার্কেট এলাকার পুরাতন কাপড়ের দোকানগুলোতে স্বল্প আয়ের মানুষের ভিড় দেখা যায়। এতে করে বিক্রি বেড়েছে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
পুরান কাপড় কিনতে আসা রিকশাচালক তছের আলী (৫৫) বলেন, ‘কঠিন ঠাণ্ডা পড়েছে। এত ঠাণ্ডায় কাজ করতে পারি না। কনকনে শীতের কারণে সুয়েটার কেনার জন্য এসেছি। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় কিনতে পারছি না।’
শহরের নিউ মার্কেট এলাকার পুরাতন কাপড়ের ব্যবসায়ী বাবু শেখ (২৫) বলেন, গত ১ সপ্তাহ ধরে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেনা-বেচা বেড়েছে। দাম আগের মতোই আছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবুল কুমার সূত্রধর জানান, গত কয়েক দিনের তীব্র ঠাণ্ডার কারণে কৃষক ও শ্রমিকরা খেতে কাজ করতে না পারলে ফসলের ক্ষতি হবে। তবে অনেকে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করেই কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত ফসলের কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ৪৪ হাজার ১০০ ও বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে আরও ১০ হাজার কম্বল জেলার ৭টি পৌরসভা ও ৮৩টি ইউনিয়নে ৪৯০টি করে কম্বল শীত নিবারণের জন্য বিতরণ করা হয়েছে। আরও ২০ হাজার কম্বল বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। কম্বলগুলো হাতে পেলে পর্যায়ক্রমে শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
এসআইএইচ
