জয় বাংলা শ্লোগানে মুক্ত হয় জয়পুরহাট

জয়পুরহাটে ১৪ ডিসেম্বর পাক হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পাক বাহিনীকে পরাজিত করে 'জয় বাংলা' শ্লোগান দিয়ে শত শত মুক্তিযোদ্ধা শীতের সকালে পূর্ব দিগন্তে লাল বৃত্তের সূর্য উদয়ের পূর্বেই ঝাঁক ঝাঁক ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে উল্লাস করে পাঁচবিবি হয়ে জেলার ডাক বাংলোতে প্রবেশ করেছিল।
এ জেলার দামাল ছেলেরা অর্থাৎ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাপটে হানাদার পাকিস্তানি সৈন্য বাহিনী ও তাদের এদেশিয় দোসর রাজাকার আলবদররা জীবন বাঁচাতে বগুড়া ও দিনাজপুর ঘোড়াঘাটের দিকে পালিয়ে গিয়েছিল।
জয়পুরহাটের ডাক বাংলো প্রাঙ্গন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের 'জয়বাংলা' শ্লোগানে মাটি কেঁপে ওঠে। সমবেত কণ্ঠে 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি' গানের মধ্য দিয়ে প্রথম স্বাধীনতার বিজয় কেতন সোনালী বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খন্দকার আসাদুজ্জামান বাবলু।
তাকে জয়পুরহাটের মানুষ 'বাঘা বাবলু' নামে চিনতেন। দেশের বুকে স্বাধীনতার বীজ বপণের একজন কর্মী হিসেবে তাঁর নামের সাথে যেন কাজের মূল্য রেখেছেন। কারণ তিনি বাঘের মত ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশকে পাক হানাদার মুক্ত করতে। আর এই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মূল্য দিতে হয়েছে অনেক মা-বাবা, ভাই-বোনকে। স্বজনদের হারিয়ে এখনও শোকে পাথর হয়ে আছেন অনেকেই।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিক থেকে দেশের অনেক জেলা যখন পাক-হানাদার মুক্ত হতে থাকে তখনও যুদ্ধ চলে জয়পুরহাটে। দীর্ঘ ৯ মাস ধরে হানাদার বাহিনীর সদস্যরা নির্মম নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালায় এ জেলায়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ধরে নিয়ে এসে ১০ হাজারের বেশী মানুষকে ব্যানট দিয়ে খুঁচিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় জয়পুরহাটের পাগলা দেওয়ানে।
এখানে শুয়ে আছেন মায়ের কোল হারানো কত মায়ের অজানা সন্তান। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি এই পাগলা দেওয়ান। এখানে পাক হানাদার বাহিনীর একটি পরিত্যাক্ত বাংকার এখনও হত্যা যজ্ঞের ভয়াল স্মৃতি বহন করছে। এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ থেকে প্রাণে বেঁচে আসা অনেকেই এখনও সেই করুণ স্মৃতি বহন করছেন।
এছাড়াও এ জেলার কড়ই কাদিরপুর নামে একটি গ্রামে ৩৭১ জন মৃৎশিল্পী কে গুলি করে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী এবং এ দেশীয় দোশর রাজাকার আল বদর বাহিনীর সদস্যরা। এখানে একটি বধ্যভূমি রয়েছে। বিজয়ের এই দিনকে স্মরণ রাখার জন্য জয়পুরহাটে শহীদ ডাঃ আবুল কাসেম ময়দানে ৭১ ফুট উচ্চ শহীদ স্মৃতি বিজয় স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।
১৪ ডিসেম্বর পাক হানাদারদের নিকট থেকে মুক্তির এই দিনটি জয়পুরহাটবাসী স্মরণ করে নানা কর্মসূচীর আয়োজন করেন। স্থানীয় জেলা প্রশাসন জয়পুরহাট হানাদার মুক্ত দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষ্যে পাগলা দেওয়ান ও কড়ই কাদিরপুর বধ্যভূমিতে পুষ্প্যস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভার আয়োজন হয়।
এএজেড
